সুপ্রিম কোর্টে তথ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার নির্দেশ
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: জয়দীপ্তা দেব চৌধুরী

অর্থপাচার: সুইস ব্যাংকে কার কত টাকা, জানতে চান হাইকোর্ট

সুইস ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচারকারীদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সাথে সেসব ব্যাংকে তাদের কত টাকা জমা আছে সে তথ্য দিতে বলেছনে আদালত। আগামী ৬ মার্চের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত এক রিটের শুনানিকালে আজ রোববার (৩০ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

একই সঙ্গে বিদেশে অর্থপাচারে জড়িতদের মধ্যে পানামা পেপারস ও প্যারাডাইস পেপারসে যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ৬ মার্চের মধ্যে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এছাড়া এ বিষয়ে জারি করা রুলের ওপর শুনানির জন্য ৭ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করেছেন আদালত।

আদালতে এদিন রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিনউদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আন্না খানম কলি। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশিদ আলম খান। রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুল কাইয়ুম খান ও অ্যাডভোকেট সুবীর নন্দী দাস।

গত ২৬ জানুয়ারি প্যারাডাইস ও পানামা পেপার্সে নাম আসা ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের তথ্য হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় প্রতিবেদন আকারে জমা দেওয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এ বিষয়ে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে শুনানি হয় আজ।

এর আগে ১২ ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৩১০ কোটি ৮০ লাখ ১৪ হাজার ৭৪৮ টাকা বিদেশে পাচারের তথ্য দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

বাংলাদেশ থেকে বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংক বিশেষ করে সুইস ব্যাংকসহ সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, দুবাই ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে যেসব অর্থ পাচার হয়েছে তার তথ্য নিয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল। গত ১৭ অক্টোবর হাইকোর্টকে এ তথ্য জানানো হয়।

তবে এসব বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে পরে আরও সময় নেয় বিএফআইইউ এবং দুদক। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) হাইকোর্টে প্রতিবেদন জমা দেয়।

পানামা পেপার্সের ৪৩ জন এবং প্যারাডাইস পেপার্সের ২৬ জনের নামের তালিকা নিয়ে কাজ করছে বিএফআইইউ। নাম আসা ব্যক্তি–প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন দেশে চিঠিও পাঠিয়েছিল বিএফআইইউ। এর মধ্যে ১০ ব্যক্তি–পরিবারের বিষয়ে আর্থিক লেনদেন, বিদেশে অবস্থান ও ব্যাংক পরিচালনার বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে।

এর আগে গত (২০২১ সালের) বছরের ৬ ডিসেম্বর পানামা ও প্যারাডাইস পেপার্সে নাম আসা অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও সিআইডিকে তা জানাতে বলা হয়। এরপর গত ৫ ডিসেম্বর পানামা ও প্যারাডাইস পেপার্সে নাম আসা অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকা পৃথক দুটি প্রতিবেদনে হাইকোর্টে দাখিল করে দুদক।

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য বিশ্লেষণ করে ও আইসিআইজের ওয়েবসাইটে বর্ণিত দেশভিত্তিক তালিকা পর্যালোচনা করে বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে প্রথম পর্বে ৪৩ ব্যক্তি ও দুটি প্রতিষ্ঠানের নাম আসে। এর পরে ২৬ জনের নাম পাওয়া যায়।

দেশের ভিন্ন ভিন্ন নাগরিক ও কোম্পানি অর্থপাচার করে সুইস ব্যাংকসহ বিদেশি ব্যাংকগুলোতে গোপনে জমা রাখা বিপুল অর্থ উদ্ধারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুল কাইয়ুম খান ও সুবীর নন্দী দাস ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় একটি রিট করেন। এর শুনানি নিয়ে ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালত রুলজারিসহ আদেশ দেন।