মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন বিধানে নিকাহ রেজিস্ট্রারের (কাজী) উত্তরাধিকারী হিসেবে কন্যা সন্তানকে অন্তর্ভুক্ত না করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি রিটে কাজী নিয়োগের ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের সমান সুযোগ দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
আগামী সপ্তাহে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চে রিট আবেদনটির ওপর শুনানি হতে পারে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শারমিন আক্তার শিউলী গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) পক্ষে গত সোমবার (৩১ জানুয়ারি) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ব্যারিস্টার শারমিন আক্তার শিউলী এ রিট দায়ের করেন।
আইন সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়েছে।
রিট আবেদনে বলা হয়, ২০০৯ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন বিধানের ২০১৩ সালের সংশোধনীতে বলা আছে, যদি কোনো নিকাহ রেজিস্ট্রার মারা যান সেই পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে তার পুত্র সন্তান অগ্রাধিকার পাবেন। ওই বিধানে তার কন্যার যদি কাজী হওয়ার সব যোগ্যতা থাকে তবুও তার নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়নি। ফলে এ বিধানে লিঙ্গ বৈষম্য করা হয়েছে।
একইসঙ্গে রিটে কাজী নিয়োগের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ সবার সমান সুযোগ রাখার নির্দেশনা চেয়ে এ বিষয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে।
নারীরা নিকাহ রেজিস্ট্রার হতে পারবে না
বাংলাদেশের সামাজিক ও বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নারীদের নিকাহ রেজিস্ট্রারের (কাজী) দায়িত্ব পালন সম্ভব নয়– মর্মে অভিমত দিয়েছেন আদালত। দিনাজপুরের এক নারী রেজিস্ট্রার প্রার্থীর রিট খারিজ করে ২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এরপর গত বছর জানুয়ারিতে এ সংক্রান্ত হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়। যদিও রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
সে সময় হাইকোর্টের এই নির্দেশনার নিন্দা ও ক্ষোভ জানায় নারী সংহতি। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, বাংলাদেশের সামাজিক ও বাস্তব অবস্থার অজুহাত দেখিয়ে নারীরা নিকাহ রেজিস্ট্রার বা বিয়ের কাজী হতে পারবেন না মর্মে হাইকোর্টের যে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পেয়েছে, তা নারীর প্রতি অবমাননাকর এবং সংবিধান পরিপন্থী বলে মনে করে নারী সংহতি। মধ্যযুগের অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজের মতো পশ্চাদপদ এই নির্দেশনার নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছে সংগঠনটি।