দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২২-২০২৩ বর্ষের কার্যনির্বাহী পরিষদের দুইদিন ব্যাপী নির্বাচন আগামী ১৫ ও ১৬ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন পরিচালনায় সমিতির সাবেক সম্পাদক ও সিনিয়র অ্যাডভোকেট এ.ওয়াই. মসিউজ্জামানকে প্রধান করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।
বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা প্যানেল) এবং বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত আইনজীবী ঐক্য পরিষদের (নীল প্যানেল) ব্যানারে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যদিও গেল বারের নির্বাচনে রঙ দিয়ে প্যানেল পরিচিতি তুলে ধরা হয়নি।
আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে আইনজীবী সমিতিজুড়ে চলছে আলোচনা। ইতোমধ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেশের বৃহত্তম দু’টি রাজনৈতিক দল সমর্থিত প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ চলছে।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ থেকে সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির নেতৃস্থানীয় দু’টি পদ সভাপতি ও সম্পাদক পদে আটজন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে সভাপতি পদে ৫ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ৩ জন রয়েছেন।
সমন্বয় পরিষদ থেকে সভাপতি পদে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন মমতাজ উদ্দিন ফকির, মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী, আবু সাইদ সাগর, আজহার উল্লাহ্ ভূঁইয়া ও এ কে এম ফয়েজ। অন্যদিকে সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন শাহ্ মঞ্জুরুল হক, আব্দুন নূর দুলাল, নাহিদ সুলতানা যূথী।
সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির সমিতির সাবেক সহ-সম্পাদক, সাবেক সম্পাদক, সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আইনের শাসন ও ন্যায় বিচারের প্রতিষ্ঠায় সৃষ্ট বিভিন্ন আন্দোলনে তিনি কারানির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন।
অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী সমিতির সাবেক সম্পাদক ছিলেন। তিনি ঢাকার সন্তান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে একাধিকবার কারানির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে দুই বার সদস্য ছিলেন।
অ্যাডভোকেট একেএম ফয়েজ সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের আইনজীবী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল’ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ছিলেন। তিনি কুমিল্লার সন্তান এবং বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের একজন সদস্য।
অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হকের বাড়ি ময়মনসিংহে। তিনিও সমিতির নির্বাচনে সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি বেক্সিমকোর আইন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
অ্যাডভোকেট আব্দুন নুর দুলাল বাংলাদেশ আইন সমিতির সাবেক সভাপতি, আলোর মঞ্চের সভাপতি ও পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের আইন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি সমিতির সম্পাদকীয় পদে প্রার্থী হয়েছিলেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন এলামনাই এসোসিয়েশন (রুলা) এর সভাপতি অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যূথী। তিনি এর আগে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির জ্যেষ্ঠ পুত্র যুবলীগের বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক শেখ ফজলে শামস পরশের সহধর্মিনী। মনোনয়ন পেলে তিনিই সম্ভবত প্রথম নারী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
এদিকে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের কয়েকজন শীর্ষ নেতা ও আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাদা প্যানেলের প্রার্থী হতে এখন আওয়ামী লীগের কার্যালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ চলছে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের। তবে বরাবরের মতোই স্বচ্ছ ভাবমূর্তির যোগ্যদেরই শেষ পর্যন্ত প্রার্থিতা দেওয়া হবে বলে জানাচ্ছে নেতৃত্ব পর্যায়।
দলীয় একটি সূত্র জানায়, এই নির্বাচনকে ঘিরে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শকে। প্রধানমন্ত্রী যাদের সমর্থন দেবেন তারাই হবেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের চূড়ান্ত প্রার্থী।