প্রয়াত বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তির (স্থাবর-অস্থাবর) উত্তরাধিকার থেকে হিন্দুধর্মাবলম্বী নারী বা কন্যাকে বঞ্চিত করাসংক্রান্ত প্রথাগত বিধানের বৈধতা নিয়ে করা রিট শুনতে বৃহত্তর বেঞ্চ গঠনের জন্য নথিপত্র প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এ আদেশ দেন।
একই সঙ্গে এ বিষয়ে মতামত দিতে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) হিসেবে কয়েকজন আইনজীবীর নাম মনোনীত করা হয়েছে। নিয়োগ পাওয়া অ্যামিকাস কিউরিরা হলেন- অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সিনিয়র আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট মো. কমারুল হক সিদ্দিকী।
এছাড়া সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সম্পত্তির বিষয়ে দুজন আইনজীবী ও একজন সাংবাদিকের মতামত শুনবেন আদালত। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সম্পদ বণ্টন নিয়ে সাংবাদিক পুলক ঘটকের কাছে আদালত তার মতামত শুনবেন। এখন এ বিষয়ে অ্যামিকাস কিউরিদের (আদালতের বন্ধু) নিয়ে পরবর্তীতে বিস্তারিত শুনানি হবে।
প্রয়াত বাবার সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়াসংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট প্রথাগত বিধান চ্যালেঞ্জ করে অনন্যা দাশগুপ্ত ১৩ ফেব্রুয়ারি ওই রিট করেন। বনানীর বাসিন্দা অশোক দাশগুপ্তের মেয়ে অনন্যা।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের একই বেঞ্চ রুল দেন। রুলে প্রয়াত বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে হিন্দুধর্মাবলম্বী নারী বা কন্যাকে বঞ্চিত করাসংক্রান্ত প্রথাগত বিধান কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় রোববার বিষয়টি ওঠে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী খায়রুল আলম চৌধুরী এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
পরে আইনজীবী খায়রুল আলম চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টির সঙ্গে সাংবিধানিক ও আইনি ব্যাখ্যা জড়িত। বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করে বিষয়টি শুনানি করতে হাইকোর্ট রিটের নথিপত্র প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে মতামত দিতে কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এখন প্রধান বিচারপতি বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করে দিলে শুনানি হবে।
রিট আবেদনকারীপক্ষ জানায়, অশোক দাশগুপ্ত ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর মারা যান। তিনি মারা যাওয়ার পর তাঁর ছেলে অধস্তন আদালতে উত্তরাধিকার–সম্পর্কিত মামলা করেন। এই মামলায় দাবি করা হয়, দায়ভাগা মতবাদের প্রথাগত আইন অনুযায়ী মেয়েরা মৃত বাবার সম্পত্তিতে কোনো অধিকার রাখেন না। এই বিধান সংবিধানের ২৭ ও ২৮ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে ওই রিট করেন অনন্যা দাশগুপ্ত।