ভুক্তভোগীকে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বললেন সুপ্রিম কোর্ট
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: জয়দীপ্তা দেব চৌধুরী

ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগীকে ‘দুশ্চরিত্রা’ বলার বিধান বাতিলে শুনানি নারী দিবসে

আন্তর্জাতিক নারী দিবস (পূর্বনাম আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস) প্রতি বছর মার্চ মাসের ৮ তারিখে পালিত হয়। সারা বিশ্বব্যাপী নারীরা একটি প্রধান উপলক্ষ হিসেবে এই দিবস উদ্‌যাপন করে থাকেন। কাকতালীয়ভাবে ধর্ষণ অপরাধে ভুক্তভোগী নারীর প্রতি অবমাননাকর অসম্মানজনক অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করার বিধান সম্পূর্ণরূপে বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী মঙ্গলবার (৮ মার্চ) দিন ধার্য করেছে হাইকোর্ট।

রিটকারী পক্ষের আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদেশে প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইন সংশোধনসহ ভুক্তভোগী নারীকে ‘দুশ্চরিত্রা’ বলার বা চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ সংক্রান্ত আইনের ১৫৫ (৪) ধারা বিলুপ্ত করার নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের বিষয়ে শুনানি পিছিয়ে আগামী মঙ্গলবার (৮ মার্চ) দিন ঠিক করা হয়েছে।

আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. শাহিনুজ্জামান শাহীন ও ব্যারিস্টার শারমিন আক্তার শিউলী। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।

পরে আদেশের বিষয়টি অ্যাডভোকেট মো. শাহিনুজ্জামান শাহীন গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

আইনজীবী শাহিনুজ্জামান জানান, মঙ্গলবার (১ মার্চ) বিষয়টি শুনানির জন্য আদালতে দিন ধার্য ছিল। কিন্তু আমাদের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন উপস্থিত না থাকায় আমরা সময় চেয়েছিলাম। তখন আদালত বিষয়টি শুনানির জন্য পিছিয়ে আগামী মঙ্গলবার (৮ মার্চ) দিন ঠিক করেন।

এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের একই বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস জানান, সাক্ষ্য আইনের দুটি ধারা সংস্কারের প্রস্তাব নিয়ে খসড়া তৈরি করা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় এই খসড়া প্রস্তুত করেছে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৪ নভেম্বর সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ (৪) ও ১৪৬ (৩) ধারা বাতিল চেয়ে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ও নারীপক্ষ রিট করে। এ তিন সংগঠনের পক্ষে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন। রিটে আইন মন্ত্রণালয়কে বিবাদী করা হয়।

সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ (৪) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে যখন বলাৎকার বা শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়, তখন সাধারণভাবে অভিযোগ দায়ের করা নারীকে দুশ্চরিত্রা দেখানোর সুযোগ থাকে। আর আইনের ১৪৬ (৩) ধারা অনুযায়ী, চরিত্র নিয়ে কটাক্ষ এবং সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা যায়। এজন্য এই দুটি ধারা অসাংবিধানিক ও বাতিল ঘোষণা চেয়ে রিটটি করা হয়।