আদালত (প্রতীকী ছবি)
আদালত (প্রতীকী ছবি)

বৈদ্যুতিক শক দিয়ে নদীতে মাছ শিকার, জড়িতদের চিহ্নিতকরণে বিচারকের স্বপ্রণোদিত আদেশ

হবিগঞ্জে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ও আইন লঙ্ঘন করে খোয়াই নদীর পানিতে বিদ্যুতায়ন করে মাছ শিকারের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আগামী ১২ মে’র মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

হবিগঞ্জের স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সংবাদ আমলে নিয়ে আজ মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) স্বপ্রণোদিত হয়ে ২নং আমলি আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইন এ নির্দেশ দেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চুনারুঘাট উপজেলার দক্ষিণ ছনখলা গ্রামে বিদ্যুতের মেইন তার থেকে সংযোগ দিয়ে মারা হচ্ছে খোয়াই নদীর মাছ। এতে যেমন পোনা মাছ, ব্যাঙ, সাপ সব মারা পড়ছে তেমনি রয়েছে মানুষের জীবনের ঝুঁকিও। নদীর পানিতে যখন বিদ্যুতায়ন করা হয় তখন কয়েকশ গজের মধ্যে যেকোনো প্রাণী ওই পানি স্পর্শ করা মাত্রই মৃত্যু অনেকটা নিশ্চিত।

এসব চিন্তা চেতনা মাথায় না নিয়েই মৎস লোভীরা এ কাজটি করছেন শুষ্ক মৌসুম (যখন নদীতে পানি কম থাকে) জুড়েই। তারা প্রথমে নদীর একটি নির্দিষ্ট স্থান জিআই তার দ্বারা আবৃত করেন। তারপর ওই তারে বিদ্যুতের মেইন লাইন থেকে সংযোগ দেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আশপাশের মাছ এবং জলজ প্রাণীগুলো মারা যায়।

এরপর বিদ্যুৎ সংযোগ খুলে তারা বেশ ভাটিতে গিয়ে ভেসে যাওয়া মরা মাছগুলো সংগ্রহ করেন। সপ্তাহে দু-তিন দিন তারা এ কাজটি করে থাকেন। সিন্ডিকেট করে কাজটি করায় সচেতন মহল ভয়ে মুখ খুলছেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই গ্রামের এক যুবক জানান, ছনখলা গ্রামেরই হাশিম মহালদারের ছেলে আওয়াল দুপরাজের নেতৃত্বে এ ঝুঁকিপূর্ণ শিকারের কাজটি হচ্ছে দীর্ঘ দিন ধরে। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাদের বাঁধা দিচ্ছে না।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চুনারুঘাট জোনাল অফিসের ডিজিএম এর সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এর আগে তিনি এমন অভিযোগ পাননি। অচিরেই এর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রকাশিত সংবাদটি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইনের দৃষ্টিগোচর হয়। সংবাদ বিশ্লেষণ করে বিচারক দেখতে পান, হবিগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ নদী তথা খোয়াই নদী এলাকায় নিয়ম বহির্ভূতভাবে ও আইন লঙ্ঘন করে স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তিবর্গ নদীর পানিতে বিদ্যুতায়ন করে মাছসহ নদীতে থাকা সকল জীবিত প্রাণীকে বিদ্যুতের শকের মাধ্যমে মৃত্যু নিশ্চিত করে মাছ সংগ্রহ করছে।

নির্দিষ্ট এলাকায় জিআই (GI) তার দ্বারা নদীর একটি এলাকা চিহ্নিত করে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে এরূপ ভয়ংকর কাজ করা হয়। ফলে মাছসহ সকল জীব বৈচিত্রের জীবন হুমকির মুখে।

প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখিত অভিযোগ মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইনের ধারা ৩, ৪এ ধারার লঙ্ঘন ও ধারা ৫(১) ও (২) অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য ও বিচার্য। এছাড়া অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ও বৈদ্যুতিক ব্যবহার বিদ্যুৎ আইনের ৩২ ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে আদালতের কাছে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়।

এই অবস্থায় জনস্বার্থে ও ন্যায়বিচারের উদ্দেশ্যে অপরাধ উদ্ঘাটন, আসামীদের চিহ্নিতকরণ ও সংবাদে প্রকাশিত ব্যক্তিদের বিষয়ে বিস্তারিত তদন্তের আদেশ দেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯০(১) ধারা অনুযায়ী সংবাদটি আমলে নিয়ে চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) প্রতি এ আদেশ দেওয়া হয়।

আদেশে একজন দক্ষ তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করে সরেজমিনে ঘটনাটি তদন্ত করে বিস্তারিত প্রতিবেদন আগামী ১২ মে’র মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। একইসঙ্গে তদন্তের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পত্রিকার সম্পাদক ও প্রতিবেদককে তদন্তের কাজে তথ্য দিয়ে সহযোগিতার নির্দেশ দেন আদালত।