অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ (রাজা)
অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ (রাজা)

আইন শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে স্বতন্ত্র আইন বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্যই প্রয়োজন

মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ (রাজা) সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। আইনজীবী পরিবারের সন্তান সাঈদ আহমেদ রাজা ১৯৭৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান, গরীবের আইনজীবী খ্যাত প্রয়াত সিনিয়র অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার।

১৯৯৪ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশের পর বাবা আবদুল বাসেত মজুমদারের ঘনিষ্ঠজন তৎকালীন বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট আমিনুল হক, বার কাউন্সিলের সে সময়কার লিগ্যাল এডুকেশন কমিটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলামসহ বার কাউন্সিলের তৎকালীন নির্বাচিত অন্যান্য সদস্যদের পরামর্শে ভারতের বেঙ্গালুরুতে অবস্থিত ন্যাশনাল ল’ স্কুল অব ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটিতে আইন পড়তে যান। সেখান থেকে বিএ এলএলবি শেষ করে তিনি দেশে ফিরে আসেন। পরবর্তীতে আইন পেশায় নিয়োজিত হন।

আসন্ন বার কাউন্সিল নির্বাচনে তিনি সাধারণ আসনে সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বয়সে তরুণ এই প্রার্থীর প্রতি আইনজীবীদের আকর্ষণও রয়েছে। বাবার সাথে দীর্ঘসময় আইনপেশায় সময় দিয়ে ও বার কাউন্সিল নিয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে কাজ করে নিজের অভিজ্ঞতাকে করেছেন সমৃদ্ধ। তাঁর এই অভিজ্ঞতা আর ভাবনার সাথে পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দিতে ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম সম্পাদক অ্যাডভোকেট বদরুল হাসান কচি মুখোমুখি হয়েছেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ রাজার সাথে।

ল’ইয়ার্স ক্লাব: আপনি যেখানে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন, সেখানকার সাথে আমাদের দেশের আইন শিক্ষা ব্যবস্থার তফাৎ কি?

সাঈদ আহমেদ রাজা: সত্যিকার অর্থে বিশেষ কোন তফাৎ নাই। তারা কেবল গবেষণা করে বের করেছে আইন কীভাবে পড়লে একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ উপকৃত হবেন। আমার কোর্সটির নাম হচ্ছে বিএ এলএলবি, এটি পাঁচ বছরের কোর্স। এই কোর্সে প্রথম দিকে যে বিষয়গুলো পড়ানো হয়েছে তা হচ্ছে ইকোনমিকস অ্যান্ড ল’, সোশিয়লজি অ্যান্ড ল’ এবং পলিটিক্যাল সাইন্স অ্যান্ড ল’।

মূলত সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে আইনের পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়গুলো গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কেননা একজন শিক্ষার্থী যদি সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান ভালভাবে বুঝতে পারেন তবে তিনি খুব ভালো সংবিধান বুঝবেন। অর্থশাস্ত্রে সম্যক জ্ঞান থাকলে বিজনেস ল’ বুঝতে বেশ সুবিধা হয়। আর এটা খুব বাস্তবসম্মত শিক্ষা পদ্ধতি বলেই মনে হয়েছে। কারণ কোন ল’ এর অরিজিন কোথা হতে সেটা চিহ্নিত করতে পারলে বিষয়গুলো অনেক সহজ হয়ে যায়।

যেমন: কারো যদি সোশিয়লজি, অ্যানথ্রপলজির ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকে তবে তিনি কিন্তু সুপার ফাইন ফ্যামিলি ল’ প্র্যাকটিশনার হতে পারবেন না। একইভাবে যে আইনজীবীর সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে দখল নাই, নিশ্চিতভাবেই তিনি সংবিধানের ওপর ভালো ল’ইয়ার হতে পারবেন না। এই আইডিয়াকে ইন্ট্রুডিউস করেই কারিকুলাম সেট করা হয়েছে।

ভারতের সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি এবং মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত চ্যাপ্টার বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে শাব্দিকভাবে অভিন্ন। আবার বাংলাদেশের ট্যাক্সেশন সংক্রান্ত সাবজেক্ট ভারতের সাথে ভার্বাটিমলি সেইম। ভারতের পার্লামেন্ট দুই কক্ষ বিশিষ্ট, বাংলাদেশের এক। গত ৫০ বছরে সংবিধানের ওপর দেশের আদালত যতগুলো কেস ডিসাইড করেছেন প্রায় সবগুলোই ইন্ডিয়ান সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন জাজমেন্টের ওপর ভিত্তি করে।

ভারতের দণ্ডবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি, স্পেশাল ল’ এমনকি হালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনও বাংলাদেশের সাথে শাব্দিকভাবে অভিন্ন। তফাৎ শুধু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ধারাগুলো রিঅরগানাইজ করা।

ল’ইয়ার্স ক্লাব: আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়েছেন, বলা হয়ে থাকে তাদের কারিকুলাম এতোটাই সমৃদ্ধ যে সেখান থেকে উত্তীর্ণ হলে এলএলএম বা ব্যারিস্টারি পড়ার প্রয়োজন পড়েনা! কেন এমনটা বলা হয়?

সাঈদ আহমেদ রাজা: দেখুন, বার করাটা একটা অনারের ব্যাপার। অন্যদিকে এলএলএম একচ্যুয়ালি একটা একাডেমিক ডিগ্রি। এই দুটোর সাথে আসলে তুলনা চলে না। তবে একটা ভালো কারিকুলাম একজন আইন শিক্ষার্থীকে সমৃদ্ধ করবে সেটা বলাই বাহুল্য। আজ থেকে দুই দশকেরও বেশি সময় আগে যখন ন্যাশনাল ল স্কুল অব ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছি তখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাবাউট সিক্সটি ল’ কোর্সেস ছিল। পাঁচ বছরে এই ৬০টি ল’ কোর্সেস কমপ্লিট করতে হতো। তবে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালটির কোর্স সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে।

আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অপশনাল সাবজেক্ট বেশি। এটা নেবেন না ওটা নেবেন, এই কোর্স করবেন নাকি ওই কোর্স। কিন্তু ইন্ডিয়াতে সেট অব ল’ অর্থাৎ মেজর অ্যাক্টস, মাইনর অ্যাক্টস অ্যান্ড অ্যাদার অ্যাক্টস –এর ওপর ভিত্তি করে টোটাল কারিকুলাম সাজানো হয়। ইনিশিয়ালি সোশ্যাল স্টাডিজ কিছুদিন পড়তে হয়, এর সাথে সাথেই লিগ্যাল স্টাডিজে প্রবেশ করা হয়। অর্থাৎ সোসাইটি, ইকোনোমিকস, পলিটিক্যাল সাইন্স, অ্যানথ্রপলজি বোঝার সাথে সাথে মিশিয়ে মিশিয়ে ল’ টা পড়বেন।

বার কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া অ্যাক্ট এর আন্ডারে করা প্রতিষ্ঠান এটি। কারিকুলামও বার কাউন্সিলের সেট করা এমনকি কোন কোন শিক্ষক পড়াবেন সেটাও ঠিক করে দেওয়া হয় বার কাউন্সিল থেকেই। এমনভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস পরিচালনা হবে যেখানে একাডেমিশিয়ান, ল’ইয়ার অ্যান্ড জাজেজরা কম্বাইন্ড করে পড়াবেন। যার মাধ্যমে লিগ্যাল নলেজ বাড়বে। শিক্ষাজীবনের একটা উদাহরণ দিয়েই বলি, ইকোনোমিকস অ্যান্ড ল’ যখন পড়ছি তখন চারজন ইকোনোমিকসের টিচার, দুজন কোম্পানি বেঞ্চের জজ এবং দুজন কোম্পানি ল’ টিচার ক্লাসে আসলেন। কোম্পানি অ্যাক্টের প্রথম ৬-৭টা ধারা নিয়ে ডিসকাশন শুরু করেন। আর ক্লাসে আগে থেকেই এই বিষয়ে রিডিং ম্যাটেরিয়াল সরবরাহ করা হত। প্রতিটা ক্লাসের প্রত্যেক স্টুডেন্টের জন্য এটি দেওয়া হত। যেখানে বেসিক ডিসকাশন এন্ড কেইস ল’ গুলো উল্লেখ করে দিত। আমরা রিডিং ম্যাটেরিয়াল নিয়ে লাইব্রেরীতে যেতাম এবং এটার সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে পড়তাম। এরপর যখন উনারা ক্লাসে ডিসকাস শুরু করলেন সাথে সাথে আমরা (শিক্ষার্থীরা) ইন্টারফেয়ার করতাম। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করেই উনারা ভুল কথা বলতেন, তখন আমরা সেই ভুল ধরিয়ে দিতাম। এসময় উনারা পাল্টা আমাদের বলতেন, ‘ইউ আর ট্রায়িং টু ফাইন্ড মাই ফল্ট?’ এমন একটা পরিবেশ তৈরি করা হত যেখানে লিগ্যাল ডিসকাশন ইমপ্রুভ করে। যতভাল ডিসকাশন হবে ততভাল ব্রেইন্স অ্যান্ড আইডিয়াস অব ল’ কামস আউট।

ল’ইয়ার্স ক্লাব: আপনি প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রায়োগিক শিক্ষার কথা বলছেন। এই বিষয়টি আমাদের শিক্ষার্থীরাও অনুভব করেন। আমাদের পাঠ্যক্রমে প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রায়োগিক জ্ঞানের মধ্যবর্তী দূরত্ব নিরসনে বার কাউন্সিলের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিৎ?

সাঈদ আহমেদ রাজা: সেই ১৯৯৯ সাল থেকে বাবার (সিনিয়র অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার) কারণে ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম স্যারের কারণে সবসময় বার কাউন্সিলের সাথে ইনভলব ছিলাম। বিভিন্ন সময়ে বার কাউন্সিলের একাধিক কমিটিতে কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করেছি।

বার কাউন্সিলের ভূমিকা অবশ্যই এমন হওয়া উচিৎ যে, ট্র্যাডিশনালি না থেকে যুগোপযোগী প্রতিনিধির মাধ্যমে বার কাউন্সিলের লিগ্যাল এডুকেশন কমিটি গঠন করা। আর বাধা থাকবেই, সেসব বাধা ডিঙিয়ে সামনে যেতে হবে। যে যত কথাই বলুক অ্যাজ এ ল’ইয়ার কোয়ালিটিটিভ ইমপ্রুভ না করা গেলে যতকিছুই করেন লাভ হবে না। আমাদের একটাই টার্গেট হওয়া উচিৎ সেটা হচ্ছে কোয়ালিটিটিভ ইমপ্রুভমেন্ট।

আজকে আমাদের কোর্টে স্ট্যান্ডার্ড অব আরগুমেন্টস কি দাঁড়াচ্ছে, হোয়াই দ্যা ফলিং স্ট্যান্ডার্ড অব দ্যা বেঞ্চ? ইটস বিকজ দ্যা স্ট্যান্ডার্ড অব দ্যা বার। অর্থাৎ বার ভালো ল’ইয়ার দিতে পারছে না, এজন্য বেঞ্চ সমৃদ্ধ হচ্ছে না। ফলে অপ্রয়োজনীয় ডিসকাশনে প্রয়োজনীয় সময় নষ্ট হচ্ছে, মানুষ বিচার পাচ্ছে না। বিউটি অব দ্যা জাস্টিস ডেলিভারি সিস্টেম ইজ অনলি গিভিং জাস্টিস। এর ভিন্ন কিছু নেই। একটা সুন্দর জুডিসিয়াল সিস্টেমের দিকে তাকালেই দেখা যায়, কত ভালো জাস্টিস দিতে সক্ষম তারা। আর এটাই জুডিসিয়াল সিস্টেমের একমাত্র বিউটি। এর জন্য প্রয়োজন রাইট ট্রেনিং অ্যান্ড রাইট ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে রাইটভাবে প্রেজেন্টেশন করা।

ভারতের ন্যাশনাল ল’ স্কুলের প্রতিটা শিক্ষার্থীকে দিনের অন্তত ১৮ ঘণ্টা ল’ লাইব্রেরীতে সময় দিতে হয়। আদারওয়াইজ ইটস ইমপসিবল টু সারভাইভ। এরচেয়ে কম সময় দিলে ফার্স্ট ট্রাইমেস্টারই ক্রস করা যাবে না, ডিগ্রি তো অনেক পরের ব্যাপার। কারণ এক্সাম হয় সব ওপেন বুক। এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা হলে বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট পরীক্ষা দেওয়ার আর দরকার পড়েনা।

ওপেন বুক পরীক্ষায় শিক্ষার্থী ক্যান রেফার অ্যানি বুকস ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড। বাট স্টিল ইট ইজ নট এ লিগ্যালি সাউন্ড অ্যানসার। লিগ্যালি রাইট অ্যানসার বলে কোন অ্যানসার নাই। তাহলে পৃথিবিতে কোন ল’ থাকবে না, কারণ ল’ চেঞ্জেস। সো ইটস বিউটি অন দ্যা পার্সন যে সেট করে প্রশ্নটা, ইটস ড্রিম অব অ্যা পার্সন যে এটাকে অ্যানসার করে।

দেশের আইন ব্যবস্থার অনেক অনেক ছোট ছোট সমস্যা দূর হচ্ছে। ল’ইয়ারদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করা ছাড়া আমি মনে করি বার কাউন্সিলের অন্য কোন চ্যালেঞ্জ নাই। একজন ল’ইয়ার তখনই সমৃদ্ধ হবে যখন কন্টিনিউয়াস লিগ্যাল ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। দেশের সব আদালতের আইনজীবীদের জন্য সারা বছর কন্টিনিউয়াসলি এই লিগ্যাল ট্রেনিংয়ের চালু থাকতে হবে।

প্রায়শই কমপ্লেইন করা হয় অ্যাবাউট দ্যা কোয়ালিটি অব বেঞ্চ, বাট দিস ইজ অ্যা কমপ্লিটলি রং আন্ডারস্ট্যান্ডিং। কারণ একটি মামলায় দুই পক্ষের আইনজীবী যদি খুব ভাল প্রস্তুত হয়ে আদালতে যান, জজ সাহেবের কাছে দুটো দিকই পরিষ্কার হয়ে যাবে অ্যান্ড হি উইল টেক অনলি ফিউ মিনিটস টু অ্যানসার। সো বেঞ্চের কোন দোষ নাই, বরং আইনজীবী হিসেবে আমরাই কোর্টকে কোয়ালিটি শো করতে পারছি না। যা দিচ্ছি তা কমপ্লিটলি ইরেলেভেন্ট অর সামটাইমস মিসলিডিং! এজন্য আমি মনে করি বার কাউন্সিলের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ট্রেনিং ফর দ্যা ল’ইয়ার্স।

ল’ইয়ার্স ক্লাব: অনেকেরই অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদগুলোর সাথে বার কাউন্সিলের সমন্বয়হীনতা আইন শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের অন্তরায়, এই অভিযোগটি আপনি কীভাবে দেখেন?

সাঈদ আহমেদ রাজা: বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এমন একটা গভর্নিং বডি যার কাজ শুধু আইনজীবীদের গভার্ন করা নয়; বরং একজন আইন শিক্ষার্থী কোন কারিকুলামে শিক্ষা গ্রহণ করবেন সেটা নির্ধারণ করাও বার কাউন্সিলের কাজ। একইসঙ্গে আইন কারা পড়াচ্ছেন, পড়ানোর পদ্ধতি তদারকি করাও বার কাউন্সিলের কাজের মধ্যে পড়ে।

আইনে এসব ক্ষমতা দেওয়া হলেও দুর্ভাগ্যবশত বার কাউন্সিল একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর আর বিষয়গুলো দেখভাল করতে সমর্থ হয়নি। ফলশ্রুতিতে ল’ টা যেভাবে ডেভেলপ করে একজন শিক্ষার্থী থেকে আইনজীবী হয়ে; ক্লাসরুম থেকে কোর্ট রুমে আসার কথা ছিল তা মাঝখানে ব্রেক হয়ে গেছে।

একটা বড় উদাহরণ হচ্ছে- ভারতে রাজীব গান্ধী মার্ডার কেসে আদালত প্রতিটা জিনিস অ্যাসেস করে অ্যাকিউসডকে কনভিকশন দিতে পেরেছে। কিন্তু এ দেশে এখনো সাগর-রুনি হত্যা মামলার চার্জশিটও দিতে পারিনি। এটা ইনভেস্টিগেশনের সমস্যা নয়, বরং এটা ল’ এবং লিগ্যাল ট্রেনিংয়ের সমস্যা বলেই আমি মনে করি।

রাজীব গান্ধী হত্যা মামলার ট্রায়ালের সময় ক্রিমিনোলজিস্ট চন্দ্র শেখর (তিনি আমার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ছিলেন) যখন চারিদিক থেকে ম্যাটেরিয়াল যোগাড় করছিলেন তখন একটা ডেনিম পান। যে জিন্সের কাপড়ে বোমগুলো বাধা ছিল তিনি সেই কাপড়টি তুলেন। এরপর তিনি খোঁজ শুরু করেন কারা কারা ইন্ডিয়াতে জিন্স তৈরি করেন। এরমধ্যে একটা জিন্সের কোম্পানি পাওয়া গেল হায়দ্রাবাদে। যেখানে গিয়ে জানতে পারেন এই টেক্সচারের একটি পার্টিকুলার গ্রুপ অব পিপল জিন্সের কাপড়টা কালেক্ট করে। এরপর ওই কোম্পানির ভাউচারের মাধ্যমে অ্যাকিউসডদের শনাক্ত করলেন। দ্যাট ওয়াজ অ্যা ক্লু-লেস একটা মার্ডার, বাট ইমিডিয়েটলি দে কুড ফাইন্ড ইট আউট। আর সেটা সম্ভব হয়েছে তাদের দেশের প্রচলিত আইনের ওপর চর্চা, ট্রেনিং এবং কারিকুলাম ডেভেলপ করা হয়েছে।

আর আমাদের দেশে পপুলার লিগ্যাল এডুকেশন মানেই তো কিছু ল’ কলেজ, আর কিছু সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া যাদের আর্থিক সামর্থ্য আছে তারা যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন, একটা ডিফারেন্ট স্টাডিজ অলটুগেদার। যে স্টাডিজের সাথে ইনফ্যাক্ট স্কিল ডেভেলপমেন্ট ছাড়া দেশের ল’ –এর সাথে কোনো রিলেভেন্সই নাই আন্ডার অ্যানি সার্কামস্টান্সেস। আবার দেশে যারা ল’ পড়ছেন এবং পড়াচ্ছেন দে নো নাথিং অ্যাবাউট বাংলাদেশের লিগ্যাল ডেভেলপমেন্ট।

এসবই আসলে আইন শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে অন্তরায় বলতে পারেন। আজকে ৫০ বছর পর আমরা এটা ফিল করছি। অথচ দেশ স্বাধীনের পর থেকে এসব নিয়ে কেউ ভাবেইনি। কেউ ফিল করেনি, আইন শিক্ষা ক্ষেত্রে আমাদের ভবিষ্যৎ কি হবে। দেখুন, ব্রিটিশরা ২০০ বছর আগে কন্ট্রাক্ট ল’ করে দিয়েছে, এখন পর্যন্ত একটা ওয়ার্ড কেউ চেঞ্জ করতে পারেনি। হোয়াট ইজ দ্যা পারপাস অব ল’ মেকার? যে ল’ মেকাররা ১০০ বছর দূরের ভবিষ্যৎও দেখবেন।

ল’ইয়ার্স ক্লাব: তাহলে কি আমাদের দেশে স্বতন্ত্র আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন?

সাঈদ আহমেদ রাজা: আইন শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে স্বতন্ত্র আইন বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্যই প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী এবং প্রধান বিচারপতিসহ অন্যান্য বিচারকগণ দেশে বর্তমানে যত লিগ্যাল অন্তরায়ের কথা বলছেন সেগুলোর মধ্যে ল্যাক অব ট্রেনিং অব অন আওয়ার ওন ল’। অর্থাৎ আমাদের আইনের ওপর আমাদের ট্রেনিংয়ের অভাব রয়েছে।

সংবিধানে সাম্যতার কথা বলি, কিন্তু এই সাম্যতা বলতে কি বুঝায় সেটা বলা হয়নি। সংবিধান প্রণেতারা পরিষ্কার করেননি- ইজ ইট ইক্যুয়াল অ্যান্ড ইক্যুয়ালস? অর ইট ইজ আনইক্যুয়াল অ্যান্ড আনইক্যুয়ালস? সংবিধানের অনেক কিছুর অ্যানালাইসিস নাই। এজন্য এসব বিষয়ে কোর্টে বিভিন্ন সময় জাজমেন্ট বের হচ্ছে।

যে বলবে ল’ ইজ অ্যা আর্টস, হি হ্যাজ নো নলেজ অন দ্যা ল’। ল’ ইজ অ্যাবসুলেটলি সাইন্স। একটা ছকে ফেলেই ফলাফল পাওয়া যায়। যেমন: হোয়াট ইজ মার্ডার? স্পষ্ট করেই লেখা আছে, এই তিনটা ক্যাটাগরি হলে দণ্ডবিধির ৩০০ ধারায় এটা মার্ডার। আর এই ২টা ক্যাটাগরি হলে দণ্ডবিধির ২৯৯ ধারা, কালপেবল হোমিসাইড, নট মার্ডার। ইটস অ্যাজ গুড অ্যাজ ম্যাথম্যাটিকস।

আর এটাই হচ্ছে সমস্যা। কারণ দেশে রিসার্চ নেই, আমাদের মতো করে পড়ানো হয় না, কোন রকম অ্যানালাইসিস নাই। এজন্য বিশাল একটা গ্যাপ হয়ে যাচ্ছে। বার কাউন্সিল এই ক্ষেত্রে কুড নট টেক অ্যানি স্টেপ ফর লাস্ট ফিফটি ইয়ার্স।

তবে সব দোষ বার কাউন্সিলকে দিচ্ছি না। কেননা আমার বাবার কারণে বার কাউন্সিলকে খুব কাছ থেকে স্ট্রংভাবে দেখেছি। বার কাউন্সিলে বসার জায়গা ছিল না, ফাইল রাখার পর্যাপ্ত জায়গা ছিলনা। তবে ৪৫ বছর কষ্টের পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সদয় হয়ে নতুন একটা বিল্ডিং করে দিলেন।

চলতি বছরের মার্চের শেষদিকে যখন প্রধানমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টের নবনির্মিত ভবন ‘বিজয়-৭১’ উদ্বোধন করেন তখন তিনিও স্বতন্ত্র আইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন। আমারও মনে হয় এটাই রাইট টাইম স্বতন্ত্র আইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার। যে ইউনিভার্সিটি থেকে আইন বিশেষজ্ঞরাই শিক্ষার্থীদের পড়াবেন টু মেক দেম গুড ল’ইয়ার্স।

ল’ইয়ার্স ক্লাব: বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট পরীক্ষার দীর্ঘসূত্রিতার কারণ কি বলে মনে করেন, প্রতিবছর অন্তত একটি এনরোলমেন্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বাধা কোথায়?

সাঈদ আহাম্মেদ রাজা: কিছু অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ প্রবলেমের কারণে সেশনজট হয়ে গেছে। তবে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করলে এ জট থেকে মুক্তির সুযোগ আছে। পুরো পরীক্ষা ব্যবস্থা ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। ভিন্ন ভিন্ন এনরোলমেন্ট এক্সাম বন্ধ করে শুধু একটা পরীক্ষা নিলেই হয়। অনেকেই হয়তো বলতে পারেন এটা কীভাবে সম্ভব। তাদের উদ্দেশে বলবো, জিআরই, জিম্যাট, টোয়েফল, আইইএলটিএস, স্যাট ইত্যাদি পরীক্ষা বিশ্বব্যাপী অনলাইনে হচ্ছে না? তো আমাদের এনরোলমেন্ট এক্সামটাও তেমন স্ট্যান্ডার্ডে নিয়ে গেলেই হয়। এটার জন্য ইউ ডোন্ট নিড অ্যা রকেট সাইন্স। এক্ষেত্রে তেমন কিছুর প্রয়োজন নেই, কোন কমিটিও প্রয়োজন নেই। একজন পরীক্ষার্থী ব্যাংকে টাকা জমা দেবে, কম্পিউটার জেনারেটেড কোয়েশ্চেন, ইউ অ্যানসার। টেক দ্যা রেজাল্ট, গো হোম। পরদিন নিজের নাম, রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে সনদ প্রিন্ট করে স্টার্ট প্র্যাকটিস। শুধু একজন স্বউদ্যোগী মানুষ হলেই সম্ভব, যার মনে সত্যিকার অর্থেই দেশের বিচার ব্যবস্থা ও আইনজীবীদের ডেভেলপমেন্টের জন্য কাজ করার বাসনা রয়েছে।

এনরোলমেন্টের সবচেয়ে ভালো পজিটিভ বিষয় হচ্ছে, এখানে বার কাউন্সিল ডু নট পে, সনদপ্রার্থী নিজেই এই পরীক্ষার ব্যয় বহন করে। এক্ষেত্রে টাকা না হয় কিছু বেশি যাবে, কিন্তু এক এক্সামেই অধস্তন আদালত থেকে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত এনরোল হয়ে যাক। এতে করে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড সিস্টেমও রাখার প্রয়োজন পড়বে না।

হয়তো এখনই একদম সর্বোচ্চ স্ট্যান্ডার্ড সেট করা বা পাওয়া সম্ভব না, ধাপে ধাপে উন্নতি সাধিত হবে। আমি এর সাথে সম্পূর্ণ একমত, কিন্তু সেটার লক্ষ্যে কোথাও থেকে শুরু তো করতে হবে। আর এটাই একমাত্র উপায় যাতে করে চলমান সেশনজট চিরতরে দূর করা সম্ভব।

ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি ইউ নিড মোর ল’ইয়ার্স ইন দ্যা কান্ট্রি। কারণ দেশে ১৮ কোটি লোকের বিপরীতে আইনজীবী মাত্র ৫০ হাজার! এটা কোন সংখ্যাই না।

ল’ইয়ার্স ক্লাব: আপনি আসন্ন বার কাউন্সিল নির্বাচনে সাধারণ আসনে প্রার্থী হয়েছেন, নির্বাচিত হলে আইনজীবীদের পেশাগত দক্ষতা অর্জন ও আইন শিক্ষার মানোন্নয়নে আপনার বিশেষ কোন পরিকল্পনা আছে কিনা?

সাঈদ আহমেদ রাজা: অবশ্যই, আমার পরিকল্পনা আছে। সুপ্রিম কোর্টের ‘বিজয়-৭১’ ভবন উদ্বোধনকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বতন্ত্র আইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। আমি সব সময় এটা বিশ্বাস করি, হঠাৎ করেই একটা জিনিসকে গ্যাস বেলুনের মতো বড় করা যায়না। সোসাইটিও বুঝতে হবে এটা আমাদের জন্য প্রয়োজন। এই ল’ ইউনিভার্সিটি যে প্রয়োজন সেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও বুঝতে পেরেছেন। বিশেষত, আইন ও জাজমেন্ট বিচার বিশ্লেষণে ইন্ডিপেনডেন্ট ডিসকাশন্স অ্যান্ড ফর ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্র্যাকটিস স্বতন্ত্র আইন বিশ্ববিদ্যালয় ভীষণ প্রয়োজন। যেন এটি ইউনিভার্সিটি নয়, ল্যাবরেটরির মতো হয়।

আমি যখন শিক্ষার্থী ছিলাম, তখন ভারতের কোর্টের দেওয়া মাইলফলক জাজমেন্টগুলো ক্লাসে সরবরাহ করা হত। ওই বড় বড় জাজমেন্ট যদি ৭০০ পৃষ্ঠার হয়, সেটার ক্রিটিক আমরা লিখতাম ২৭০০ পৃষ্ঠা। হাউ ইউ হ্যাভ গন রং। ওইরকম একটা প্রতিষ্ঠান করা আমার একমাত্র উদ্দেশ্য। আমার বাবা (সিনিয়র অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার) জীবিত থাকাকালীন সময়ে লাস্ট দুই টার্ম ইলেকশন করেছিলেন। হাইয়েস্ট ভোট পেয়ে জয়লাভও করেছিলেন। উনার খুব ইচ্ছা ছিল এমন একটা প্রতিষ্ঠান হওয়া। সকলেই জানেন বার কাউন্সিলের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য আমার হাতে লেখানো চিঠি নিয়ে একাই রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অনুমোদন করিয়েছেন। সংশ্লিষ্টদের সামনে তাঁর লিজেন্ডারি হিউমারাস বক্তব্যের মাধ্যমে একনেকের সভায় বার কাউন্সিল ভবনের প্রস্তাব পাস করিয়ে নেন। পরবর্তী কমিটি এসে এই নবর্নিমিত সুরম্য ভবনের কাজ শেষ করেন।

ঠিক একইভাবে বাবার ইচ্ছা ছিল যদি উনার হেলথ পারমিট করত অবশ্যই এই রকম একটা স্বতন্ত্র ফান্ড এনে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল অর্ডিন্যান্সের আন্ডারে (সংশোধন করে) একটা বিশেষায়িত আইন বিশ্ববিদ্যালয় করতেন। যে ল’ ইউনিভার্সিটিতে বাংলাদেশে বেস্ট অব দ্যা বেস্ট প্রোডাক্ট বের হত।

ল’ইয়ার্স ক্লাব: সম্প্রতি আপনি সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন, যদি ভুল না করে থাকি তবে আপনিই দেশের সর্ব কনিষ্ঠ জ্যেষ্ঠ অ্যাডভোকেট! দেশে তরুণ আইনজীবীর সংখ্যা প্রচুর, তাদের উদ্দেশে আপনার পরামর্শ কি?

সাঈদ আহমেদ রাজা: তরুণ আইনজীবীদের জন্য আসলে এখনো বলার কিছু নাই। কারণ আমরা ওইভাবে এখনো অবকাঠামো তৈরি করতে পারিনি। সবাই উনাদের গতানুগতিক উপদেশ দিয়ে বলবেন পড়, বাট হোয়্যার টু স্টাডি? দুইটা মানসম্পন্ন লাইব্রেরী কি আছে? যেখানে পড়াশোনা করা যাবে। কিংবা খুব ভালো মানের কিছু সিনিয়র? যারা সযত্নে পথ দেখাবেন। আমি খুব সৌভাগ্যবান, আমার মত খুব কমই আছেন, যারা সিনিয়র বাসায় পেয়েছেন। শুধু পড়, পড় বললেই হবে? কি পড়বে, কোথায় পড়বে, সেগুলো কে বলবে, কে করবে?

এজন্য তরুণ আইনজীবীদের শুধু এটুকুই বলব, ম্যাথডিক্যাল হতে হবে। অনেকে বলবেন খুব পড়েন, খুব বিচক্ষণ হন, এই করেন, সেই করেন তা না। উচ্চ আদালতে প্র্যাকটিসের জন্য ভীষণ ম্যাথডিক্যাল হতে হবে। প্রতিটি সেন্টেন্সের বাউন্ডারি জানতে হবে, যে আমি ওতটুকুর বেশি বলতে পারবো না। আর সেই লিগ্যাল বান্ডারি আইনের মাধ্যমেই পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে সেলফ ট্রেইনের মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করতে হবে।

এখন বারের একটা বিষয় দেখলে খুবই খারাপ লাগে। বার কেমন যেন হয়ে গেছে, তরুণ আইনজীবীরা আজকে ফ্যামিলি ডে, কাল স্পোর্টস ডে, পরশু এটা, এরপর দিন সেটা! এসব থেকে সম্ভবত আরো মোর ইন্টেলেকচ্যুয়াল সাইডে ডেভেলপ করার বিষয়ে মনযোগী হওয়া প্রয়োজন। আবার ইন্টেলেকচ্যুয়াল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম বলতে অনেকেই বুঝেন দেশ-বিদেশের নামীদামী কেউকে এনে বা, দুএকজন জাজেজ এনে লেকচার সিরিজ করা! আমার কাছে এটা গঠনমূলক মনে হয়না, বরং ওয়েস্ট অব টাইম। যারা আসলেন তারা অনেক কথা বলেন, যা একদিক দিতে ঢুকল অন্য দিক দিয়ে বের হয়ে গেল! অথবা বক্তা নিজের অনেক এক্সপেরিয়েন্সের কথা বললেন, পাণ্ডিত্য দেখালেন। কিন্তু অ্যাজ অ্যা ল’ইয়ার এসব শুনে আমার কি লাভ হল? ড. কামাল হোসেন ইজ অ্যা গ্রেট ল’ইয়ার বাট এতে আমার আসলে কি উপকার? আমাকে তো এখনো ২০০টাকার অ্যান্টিসিপেটরি বেইল নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়।

এজন্য আমি বলব নিজের একটা ম্যাথড থাকা জরুরি। আর এই প্রফেশনটা হচ্ছে ফিয়ারলেস প্রফেশন। তরুণ আইনজীবীদের লিগ্যাল বাউন্ডারির মধ্যে থেকে কমপ্লিটলি ফিয়ারলেস হতে হবে। কারণ আমি যেখানে দাঁড়িয়ে কাজ করি, সিনিয়ার মোস্ট আইনজীবীও সেখানে দাঁড়িয়ে সেইম ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে শুরু করেন। অন্য আর কোন প্রফেশনে এই বিউটি খুঁজে পাওয়া যায়না। এটা এমন একটি প্রফেশন যেখানে নিজেকে নিজে যতই ভালো বলেন, নো ভ্যালু কিংবা ভালোটা নট ডিটারমাইন্ড বাই কোর্ট। একজন আইনজীবীর ভালোটা ডিটারমাইন্ড বাই আদার ল’ইয়ার্স। ইফ আই অ্যাম অ্যা গুড ল’ইয়ার, আদার ল’ইয়ার্স উইল টেল – এই আইনজীবীটা খুব ভালো। এছাড়া  জাজেজও যদি বলে ইউ আর অ্যা ভেরি গুড ল’ইয়ার, ডাজন্ট মেইক অ্যানি ডিফারেন্স।

ল’ ইয়ার্স ক্লাব: আমাদের পাঠকদের উদ্দেশ্যে আপনার মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।