সকালে আবেদন করে বিকেলেই মিলছে জমির খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি

ময়মনসিংহে আবেদনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মিলছে আরএস খতিয়ান ও মৌজা ম্যাপের সার্টিফাইড কপি। এ নিয়ে খুশি জমির মালিক ও ভুক্তভোগীরা। জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের জেলা ই-সেবা কেন্দ্রের ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারে পাওয়া যায় আরএস খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি।

ভালুকা উপজেলার ধলিয়া গ্রামের সিদ্দিক আলীর (৬০) বড় মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে। কিন্তু বিয়ের খরচ জোগানোর ব্যবস্থা নেই। মেয়ের বিয়ের খরচ জোগাতে পাঁচ শতক জমি বিক্রির উদ্যোগ নেন। কিন্তু জন্ম তারিখ হালনাগাদ ও খাজনা পরিশোধ না থাকায় জমি সাফ-কবলা রেজিস্ট্রি করে দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। ভূমি অফিসে খাজনা দিতে গেলে ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা বিআরএস খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি জমা দিতে বলেন।

পরদিন ডিজিটাল সেন্টারে গিয়ে খতিয়ানের সার্টিফাইড কপির জন্য ৫০ টাকা ফি দিয়ে আবেদন করেন তিনি। ওই দিন দুপুর ১২টার দিকে জেলা প্রশাসন অফিস থেকে কর্মচারী ফোন দিয়ে তাকে জানালেন বিআরএস খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি প্রস্তুত হয়েছে। বিকাল ৪টার মধ্যে এসে নিয়ে যেতে বলেন। খবর পেয়ে ভালুকা থেকে এসে মাত্র ছয় ঘণ্টার মধ্যেই ই-সেবা কেন্দ্র থেকে খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি পেয়ে গেলেন।

এতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে সিদ্দিক আলী বলেন, ‘এত সহজে খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি পাবো, ভাবতেও পারিনি। এর আগে সিএস খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি তোলার জন্য চার থেকে পাঁচ মাস ঘুরতে হয়েছে। পরে দালালের মাধ্যমে অনেক টাকা খরচ করে সেই কপি হাতে পেয়েছিলাম। এখন দিনে দিনে জমির খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি পাওয়ায় ভোগান্তি কমেছে আমাদের।’

জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের জেলা ই-সেবা কেন্দ্রের ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারে পাওয়া যায় আরএস খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি
শুধু সিদ্দিক আলী নন, জমির খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি পাওয়ার ক্ষেত্রে সময় এবং ভোগান্তি কমে যাওয়ায় খুশি ভুক্তভোগী জমির মালিকরা।

পারিবারিক জমির বিরোধ নিয়ে প্রতিবেশী ওমর আলীর সঙ্গে মামলা চলছে গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর গ্রামের আবুল কালামের। মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে জমির সিএস ও এসএ খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি উঠানো জরুরি হয়েছিল। ছয় মাস আগে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে এসে খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি তোলার জন্য দালালদের দ্বারস্থ হয়ে বেশ কিছু টাকা-পয়সা খরচ করার পরও কপি হাতে পাননি।

এরপর গত ৩ এপ্রিল সকালে খতিয়ানের সার্টিফাইড কপির জন্য আবেদন করে ওই দিন বিকাল ৪টার আগেই সার্টিফাইড কপি হাতে পেয়ে আবুল কালাম বলেন, ‘এত সহজে জমির খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি হাতে পাবো এটা চিন্তা করতে পারিনি। এখন খুব সহজেই মামলার কাজে সার্টিফাইড কপি ব্যবহার করতে পারবো।’

নান্দাইল উপজেলার সিরাজুল আলম বলেন, ‘বর্তমান জেলা প্রশাসক খুব সুন্দর একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। দিনে দিনে জমির খতিয়ানসহ বিভিন্ন সেবা দিচ্ছেন। দ্রুত সময়ে খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি হাতে পেয়ে জমির মালিকরা মামলা, জমি বিক্রিসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে পারছেন।’

জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের রেকর্ড রুমের ডেপুটি কালেক্টর ইসমাত জাহান ইতু বলেন, ‘জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সেটেলমেন্ট রেকর্ড রুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা। এখানে ১৩টি উপজেলার ২২০১টি মৌজার সিএস, এসএ ও বিআরএস জরিপের ৯৭১৯টি রেকর্ড বই রয়েছে। এসব বইয়ে ২১ লাখ ১১ হাজার ৭৯৯টি খতিয়ান এবং দুই লাখ ৫৭ হাজার ৫৫৬টি মৌজা ম্যাপ সংরক্ষিত আছে।’

তিনি বলেন, ‘রেকর্ড রুমে ডিআরআর প্রকল্পের অধীনে আট লাখ ১৯ হাজার ৭৯২টি খতিয়ানের আর্কাইভ করা হয়েছে। ভূমি সংক্রান্ত মামলা, জমি ক্রয়-বিক্রয়সহ বিভিন্ন কাজে সেবাগ্রহীতারা সেটেলমেন্ট রেকর্ড রুম থেকে খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি, মৌজা নকশা সংগ্রহ করে থাকে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় দুই শতাধিক ব্যক্তি এই সুবিধা নিয়ে থাকেন।’

রেকর্ড রুমের ডেপুটি কালেক্টর বলেন, ‘এই খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি পাওয়ার জন্য পূর্বে জমির মালিকদের ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হতো। বিভ্রান্তি দূর করতে বর্তমান জেলা প্রশাসক যোগদানের পর থেকেই নতুন উদ্যোগ নেন। এরই ধারাবাহিকতায় ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে যারা প্রতিদিন সকাল ১০টার মধ্যে অনলাইনে আবেদন করবেন তাদের বিকাল ৪টার মধ্যে খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি দেওয়া হয়।’

ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সেবা সহজকরণের লক্ষ্যে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে দিনে দিনে জমির খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ হয়েছে। সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তি দূর করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে সব ধরনের সেবা দিনে দিনে দেওয়ার এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।’

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন