চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সারাদেশের অধস্তন আদালতসমূহে মামলা দায়েরের তুলনায় নিষ্পত্তি হয়েছে গড়ে প্রায় ৯২ শতাংশ। যা গত বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ছিল ৬০ শতাংশের কাছাকাছি। অর্থাৎ চলতি বছর এই সময়ের মধ্যে গত বছরের তুলনায় মামলা নিষ্পত্তির হার বেড়েছে ৩২ শতাংশেরও বেশি।
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, মনিটরিং কমিটি গঠনের পর কমিটির সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধায়ন, নিরবিচ্ছিন্ন মনিটরিং এবং গতিশীল নেতৃত্বে মামলা নিষ্পত্তির হার বেড়েছে।
অধস্তন আদালতের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত দেশের আট বিভাগে মামলা দায়ের হয়েছে ৭ লাখ ৪৭ হাজার ৪৭৬টি। এরমধ্যে ঢাকায় ২ লাখ ৬১ হাজার ৬২৬টি, খুলনায় ৮৪ হাজার ৭৫৯টি, চট্টগ্রামে ১ লাখ ৩২ হাজার ৫০৮টি, বরিশালে ৪৪ হাজার ৬৫৬টি, সিলেটে ৩৯ হাজার ১৯৭টি, রংপুরে ৫৩ হাজার ৬৭৩টি, ময়মনসিংহে ৪৭ হাজার ৯০৪টি এবং রাজশাহীতে ৮৩ হাজার১৫৩টি দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়েছে।
অপরদিকে এই সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৬ লাখ ৮৬ হাজার ৯৫২টি মামলা। এরমধ্যে ঢাকায় ২ লাখ ২৫ হাজার ৬০৮টি, খুলনায় ৭৪ হাজার ৬৯৪টি, চট্টগ্রামে ১ লাখ ২৯ হাজার ৯২৬টি, বরিশালে ৪০ হাজার, ৯১১টি, সিলেটে ৩৭ হাজার ৪৭৩টি, রংপুরে ৫২ হাজার ৮৪৬টি, ময়মনসিংহে ৫১ হাজার ৮১১টি এবং রাজশাহীতে ৭৩ হাজার ৬৮৩টি দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে।
পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নিষ্পত্তির শতকরা গড় হার সবচেয়ে বেশি ময়মনসিংহে (১০৮.১৬), দ্বিতীয় অবস্থানে আছে রংপুর (৯৮.৫০), তৃতীয় চট্টগ্রাম (৯৮.০৫)। এরপর যথাক্রমে সিলেট (৯৬.২৬), বরিশাল (৯১), রাজশাহী (৮৮.৬১), খুলনা (৮৮.১২)। আর মামলা দায়েরের তুলনায় নিষ্পত্তির শতকরা হারের গড় সবচেয়ে কম ঢাকায় (৮৬.২৩)।
অন্যদিকে গত বছর এই সময়ে দায়ের হওয়া ৬ লাখ ৫৫ হাজার ৯৮১টি মামলার বিপরীতে নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ৩ লাখ ৯০ হাজার ৩১১টি মামলা। নিষ্পত্তির শতকরা হার গড়ে ৫৯.৫০।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মনিটরিং কমিটি গঠনের ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছে। মনিটরিং কমিটি গঠনের আগে ২০২১ সালের প্রথম ৬ মাসে নিষ্পত্তির শতকরা গড় হার ছিল ৫৯.৫০, চলতি বছর মনিটরিং কমিটির নেতৃত্বে মামলা দায়েরের তুলনায় নিষ্পত্তির শতকরা গড় হার ৯১.৯০। ফলে গত বছরের তুলনায় নিষ্পত্তির শতকরা গড় হার বেড়েছে ৩২.৪০।
কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, মনিটরিং কমিটি গঠনের পর কমিটির সভাপতিগণ বিভিন্ন সময়ে দেশের আট বিভাগের অধস্তন আদালত সমূহ সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। এছাড়া মামলা জট নিরসনসহ আদালতের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধানকল্পে যুগোপযোগী ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্দেশ্যে মনিটরিং কমিটির সভাপতিগণ বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্ব স্ব অধস্তন আদালতসমূহের বিচারকদের সাথে জুম মিটিং এর মাধ্যমে মতবিনিময় সভা করেছেন।
পাশপাশি বিচারকাজের সুবিধার্থে দেশের সকল আদালতের বিচারকদের অনলাইন রেফারেন্স সংক্রান্ত ওয়েবসাইটের আক্সেসের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। পাশপাশি বর্তমান মনিটরিং কমিটি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পুরাতন মামলা নিষ্পত্তির করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকা মামলার বিচার দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করার উদ্যোগ নেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণের পরপরই দেশের সব আদালতে দীর্ঘ সময় ধরে অনিস্পন্ন থাকা মামলার বিচার শেষ করতে উদ্যোগ নেন তিনি।
এ লক্ষ্যে হাইকোর্ট বিভাগের আটজন বিচারপতিকে দেশের আটটি বিভাগে নিষ্পত্তি না হওয়া মামলা মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। কমিটির ঢাকা বিভাগের অধস্তন আদালতসমূহের দায়িত্ব পান বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম। খুলনা বিভাগের দায়িত্বে বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। বরিশাল বিভাগের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় বিচারপতির জাফর আহমেদকে। মনিটরিং কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্ব পান বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লা, সিলেট বিভাগের মনিটরিং কমিটির দায়িত্বে রয়েছেন বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, রংপুর বিভাগের দায়িত্বে আছেন বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিন, ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্ব পেয়েছেন বিচারপতি মো. জাকির হোসেন এবং রাজশাহী বিভাগের মনিটরিং কমিটির দায়িত্ব পালন করছেন বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামান।