চট্টগ্রামে ডিসি প্রত্যাহারের দাবীতে আইনজীবীদের অবস্থান কর্মসূচী

চট্টগ্রামে ডিসি প্রত্যাহারের দাবীতে আইনজীবীদের অবস্থান কর্মসূচী

ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার প্রয়াসে ক্ষমতার জোরে চট্টগ্রাম কোর্ট হিল এলাকার চলাচলের রাস্তা ও পার্কিং জায়গায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা সহ জেলা আইনজীবী সমিতি উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে বাঁধা প্রদানের অভিযোগ তুলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোঃ মমিনুর রহমানকে প্রত্যাহারের দাবীতে অবস্থান কর্মসূচী করেছে আইনজীবীরা।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে আজ সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯ টায় কোর্ট হিলের প্রবেশ মুখে আইনজীবী সমিতি সামনের চত্বরে এ অবস্থান কর্মসূচী ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমিতি সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মোহাম্মদ হাশেমের সভাপতিত্বে এরশাদুর রহমান রিটুর সঞ্চালনায় আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচী ও বিক্ষোভ সমাবেশ অংশ নেন সমিতির বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক এএইচ এম জিয়া উদ্দীনের স্বাগত বক্তব্যের সমিতির কর্মকান্ডে ডিসির অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধে অবস্থান কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি মো. শফিক উল্লাহ্‌, সমিতির সহসভাপতি মো. আজিজ উদ্দিন হায়দার, সমিতির সাবেক সভাপতি যথাক্রমে মো. ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল, সালেহ উদ্দিন হায়দার সিদ্দিকি, মো. মুজিবুল হক, রতন কুমার রায়, শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে মুজিবুর রহমান চৌধুরী, আখতার কবির চৌধুরী, মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, আইয়ুব খান, সিনিয়র আইনজীবী যথাক্রমে জহির উদ্দিন মাহমুদ, মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, রফিক আহম্মদ, তসলিম উদ্দিন, জহুরুল আলম, এস.এম. অহিদুল্লাহ, মঈনুল আলম চৌধুরী টিপু, মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, কাজী মো. হাছান।

কর্মসূচীতে নেতৃবৃন্দ বলেন, জেলা প্রশাসক চট্টগ্রামে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই জঘন্য মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনের মান, মর্যাদা, সম্মান ক্ষুন্ন করার অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। সমিতির নিজস্ব জায়গায় ভবন নির্মাণে বাধা প্রদান করেন এবং সমিতির পুরাতন পানির সংযোগ সংস্কার কালে জেলা প্রশাসক সম্পূর্ণ এখতিয়ার বহির্ভূত ভাবে কাজ বন্ধ করার জন্য লোকজন পাঠিয়ে বাধা প্রদান করেন এবং ওয়াসার চেয়ারম্যান ও এমডিকে ফোন করে পুরাতন পানির লাইনে কাজ না করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি সমিতির কোন বক্তব্য না শুনে, সমিতি জায়গার দলিলাদি ও ভবনের অনুমোদন পত্রসমূহ যাচাই বাছাই না করে মিথ্যা পরিদর্শনের নাটক সাজিয়ে মনগড়া একটি তদন্ত প্রতিবেদন হাসিল করার চেষ্টায় লিপ্ত আছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক। এডিএম কোর্টে আইনজীবী ছাড়া বিচারের নামে প্রহসন চলছে।

এসময় বক্তারা বলেন, এছাড়া বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রতিনিয়ত মিথ্যা তথ্য দিয়ে জনগণ ও প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করে আইনজীবীদের সাথে এক অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত রয়েছেন। পুরাতন আদালত ভবনের সম্মুখস্থ উন্মুক্ত চত্বরে ব্যারিকেড দিয়ে যান ও জন চলাচলের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করার জন্য মহামাণ্য হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও জেলা প্রশাসক আদালতের আদেশ অমান্য করে রোড কন ব্যবহার করে ব্যারিকড দিয়ে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন।

তারা আরও বলেন, মূলত জেলা প্রশাসক নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করতেই প্রকৃত সত্য তুলে না ধরে সরকারের বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ে স্ব-প্রণোদিত হয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে সমিতির জায়গা, স্থাপনা ইত্যাদি সংক্রান্তে উদ্দেশ্যপূর্ণ ভাবে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী পরিষদ সচিবালয়সহ সরকার ও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে সত্য গোপন করে গোপন প্রতিবেদনের মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছে। প্রশাসনের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থেকে এ ধরনের জঘণ্য কর্মকান্ড কোন ভাবেই কাম্য নয়।

এসময় নেতৃবৃন্দগণ অবিলম্বে ডিসির এসব অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধ করে ডিসিকে অন্যত্র বদলী করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান। অন্যথায় সমিতি কঠোর কর্মসূচী ঘোষণার মাধ্যমে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। জেলা প্রশাসককে চট্টগ্রাম থেকে প্রত্যাহার করা হলে জেলা প্রশাসনের সাথে আইনজীবীদের অতীতের মত সম্পর্ক পুন:স্থাপন সম্ভব হবে। নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর সাথে সদয় সাক্ষাতের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য ঘটনা তুলে ধরবেন।

অবস্থান কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন কার্যনির্বাহী পরিষদের অর্থ সম্পাদক এম. সালাহ্উদ্দিন মনসুর চৌধুরী (রিমু), পাঠাগার সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক লায়লা নুর, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক মো. মেজবাহ উদ্দিন (দোয়েল), নির্বাহী সদস্য যথাক্রমে এ.এন.এম. রোকনুজ্জামান (মুন্না), মো. খোরশেদ আলম, মো. মোস্তফা করিম, তৌহিদুল ইসলাম, মো. আবদুল্লাহ-আল-মামুন, বিলকিস আরা (মিতু), আইনুল কামাল, সেলিনা আক্তারসহ বিপুল সংখ্যক আইনজীবী।

এদিকে আইনজীবীদের অবস্থান কর্মসূচী ও বিক্ষোভ সমাবেশের কারণে এ সময় কোর্ট হিলে অবস্থিত আদালত ভবন, বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়, জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে আসা লোকজন বিপাকে পড়ে যায়। যানজটে আটকে পড়ে পুরো কোতোয়লী এলাকা, পরে চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনারের অনুরোধ অবস্থান কর্মসূচী স্থগিত করে আইনজীবী সমিতি।