রাঙ্গুনিয়া উপজেলা সহকারী জজ আদালত ভবনটি পুরনো ও জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলছে বিচারিক কার্যক্রম। পাশাপাশি ভবনের কক্ষগুলো খুবই সংকীর্ণ হওয়ায় স্বাভাবিক বিচারিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ নিরসনে বিচারিক কার্যক্রমের এটি একটি প্রাচীন আদালত। রাঙ্গুনিয়ার পোমরা কাউখালি এলাকায় এ আদালত ভবনের অবস্থান। ১৯৮৫-৮৬ সালে উপজেলা কমপ্লেক্স চত্বরে নির্মিত উপজেলা আদালত ভবনে সহকারী জজ আদালত নামে এর কার্যক্রম স্থানান্তর করা হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা কমপ্লেক্সে প্রবেশ পথের পাশে এর অবস্থান। ভবনটি এতই জরাজীর্ণ যে বৃষ্টির সময় ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। দেয়ালগুলো নষ্টের পর্যায়ে। বিচারকের খাস কামরা এবং সেরেস্তাদারের কামরা খুবই ছোট।
আদালতে পরিকল্পিত রেকর্ডরুম নেই। প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের অভাবে নথিপত্র স্তূপাকারে সংরক্ষণ করতে হয়। মেঝে স্যাঁতসেঁতে থাকার কারণে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র সংরক্ষণ করতে অসুবিধা হয়। বিচারকের আবাসিক ব্যবস্থা নেই। নিরাপত্তাহীন অবস্থায় বাইরে ভাড়া বাসায় থাকতে হয়।
আদালতে বিচারপ্রার্থী মানুষজন, আদালতের কর্মচারী এবং আইনজীবীদের জন্য কোনো শৌচাগার নেই। এ অবস্থায় আদালতে এসে বিচারপ্রার্থীরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
বিচারপ্রার্থী শামসুল আলম কন্ট্রাক্টর বলেন, ‘বিচারিক কাজ পরিচালনায় আদালতের কর্মচারী এবং আইনজীবীদের প্রচ- ভিড়ের মাঝে ছোটাছুটি করতে হয়। বিচারপ্রার্থীদের বসার নির্দিষ্ট স্থান নেই। মামলায় হাজিরা দিতে আসা বিচারপ্রার্থী মানুষ ভেতরে-বাইরে, বারান্দায় যত্রতত্র দাঁড়িয়ে শুনানির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। বৃষ্টির সময় বাইরে ভিজতে হয়। এছাড়া ছোট পরিসরের আদালত ভবনসহ নানা সমস্যা এখানে।’
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউল গণি ওসমানী বলেন, ‘ভিন্ন প্রশাসনিক ব্যবস্থার কারণে সমস্যা এবং উন্নয়নের বিষয়ে উপজেলা পরিষদের ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই।’
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের সহকারী জজ কাউচার আলম রাঙ্গুনিয়া চৌকি আদালতের নতুন ভবন নির্মাণ এবং বিদ্যমান ভবন পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার করার জন্য ছক পূরণ করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা ইউনিটে পাঠানো হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজের কাছে আবেদন পাঠানো হয়। কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
আদালতের সেরেস্তাদার আবদুল ওয়াদুদ (সিএমও) আদালত ভবনের সমস্যার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘জরাজীর্ণ অবস্থায় ভবনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে ভবনের কিছু অংশ সংস্কারের জন্য টেন্ডার হলেও কাজও হচ্ছে না, ঠিকাদারের দেখাও মিলছে না।’
আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘বর্তমানে এ আদালতে আড়াই হাজারের বেশি মামলা বিচারাধীন আছে। প্রতিদিন শত শত বিচারপ্রার্থী মানুষের ভিড় হয়। সমস্যার কারণে মামলার বিচার কার্যক্রমও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। বর্তমানে একজন সহকারী জজ অতিরিক্ত মামলার বিচারিক কাজ সম্পন্ন করতে হিমশিম খাচ্ছেন।’