ডিগ্রি পরীক্ষার জাল সনদের ওপর ভর করে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আদালতে আইন পেশা চালানোর অভিযোগ উঠেছে আব্দুর রহমান নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় অভিযুক্তকে জেলা আইনজীবী সমিতি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে এ অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন আব্দুর রহমান।
অভিযুক্ত আইনজীবী নাচোল পৌর এলাকার শ্রীরামপুর গ্রামের মৃত আব্দুল গফুর ডাক্তারের ছেলে। এ নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন নাচোল পৌর এলাকার বান্দ্রা গ্রামের মৃত আফসার আলীর ছেলে বাবুল আক্তার নামে এক ব্যক্তি।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, আব্দুর রহমান ১৯৯৮ সালে দাখিল পাসের পর নাচোল ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০০০ সালে এইচএসসি পাস করেন। ২০০৩ সালে নাচোল ডিগ্রি কলেজ বর্তমানে (নাচোল সরকারি ডিগ্রি) কলেজ থেকে স্নাতক/বি এ পরীক্ষায় (রোল নং ছিল ৭০৫৫২২) অকৃতকার্য হন। কিন্তু তিনি ওই বছরই রোল নং-১২৬২৯৩, রেজিস্ট্রেশন নং-৬৬৮৬৩৭ ও ০০২১০৩৪ নং সার্টিফিকেটে উত্তীর্ণ দেখিয়ে ২০০৭ সালে রাজশাহী আইন কলেজ থেকে এলএলবি পরীক্ষা দেন।
জাল সনদের মাধ্যমে তিনি এলএলবি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অধীনে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভূক্তির পরীক্ষা দেন। ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর তিনি আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের তালিকাভূক্ত হয়ে ২৫৯ নং লাইসেন্স পান। লাইসেন্স পেয়ে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ বার কাউন্সিলে ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি থেকে আইনজীবী হিসেবে আইন পেশা শুরু করেন। দীর্ঘ ১২ বছর এ পেশা চালিয়ে যাবার পর একই এলাকার বাবুল আক্তারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক তদন্তে তিনি জাল সনদের বিষয়টির প্রমাণ মেলে।
আব্দুর রহমানের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন রেকর্ড থেকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাদরুজ্জামান স্বাক্ষরিত ডাউনলোড কপিতে দেখা যায়, নাচোল কলেজ (কোর্ড নং-২৬০৪), রোল নং-৭০৫৫২২, রেজিস্ট্রেশন নং-০১৪৬২০৩, অনিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে ২০০৩ সালের ডিগ্রি পাস ও সার্টিফিকেট কোর্স’র সনদে ফেল (অকৃতকার্য) উল্লেখ রয়েছে।
ওই মার্কসসিটে ইংরেজি (আবশ্যিক) বিষয়ে ২২ নম্বর, ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞানের ১ম পত্রে ২৬, ২য় পত্রে ২৫ ও ৩য় পত্রে ৩২ নম্বর পেয়ে অকৃতকার্য হয়েছেন। আব্দুর রহমান ২০০৩ সালে অকৃতকার্য হয়ে ওই বছরই অন্য পরীক্ষার্থীর রোল নং-১২৬২৯৩, রেজিস্ট্রেশন নং-৬৬৮৬৩৭ ও ০০২১০৩৪ নং সার্টিফিকেট নিজের নামে জাল করে ২০০৭ সালে রাজশাহী আইন কলেজে এলএলবি পরীক্ষা দিয়েছেন।
এদিকে সম্প্রতি একই এলাকার জনৈক বাবুল আক্তার জেলা প্রশাসক ও আদালতসহ বিভিন্ন দপ্তরে আব্দুর রহমানের বিএ পাসের সনদটি জাল দাবি করে আবেদন করায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ আইনজীবী সমিতির প্রতিনিধি দল নাচোল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের কাছে আব্দুর রহমানের বিএ পাসের তথ্য চাইলে সেখানে কলেজ কর্তৃপক্ষ “২০০৩ সালে আব্দুর রহমান বিএ পরীক্ষার্থী ছিলেন, তবে উত্তীর্ণ হতে পারেননি” মর্মে প্রত্যয়ন পত্র দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার সকালে আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে আব্দুর রহমানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে সাতদিনের মধ্যে আইনজীবী সমিতির কাছে হাজির হয়ে সন্তোষজনক জবাব দিতে নোটিশ জারি করা হয়।
অভিযোগকারী বাবুল আক্তার জানান, আব্দুর রহমান অন্যের রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বরের মাধ্যমে অসাধু কর্মকর্তাদের হাত করে স্নাতক পাসের জাল সনদ ব্যবহার করে আসছেন। তাছাড়া জেলার আইনজীবী সমিতির আইনজীবী আব্দুর রহমান একজন ভুয়া আইনজীবী ও জালিয়াত।
তিনি আরও বলেন, আব্দুর রহমান দেশের আইন, আদালত ও জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন। আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে আমি জেলা দায়রা জজ বরাবর অভিযোগ দিয়েছি, আদালত আমার জবানবন্দিও নিয়েছেন।
শিগগিরই জাল সনদের বিষয়টি পর্যালোচনা ও যাচাই করে জাল সনদ ব্যবহার করার অপরাধে তার আইনজীবীর সনদ বাতিল করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আব্দুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে সার্টিফিকেট জালিয়াতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এক বিষয়ের জন্য আমি রেজাল্ট চ্যালেঞ্জ করলে ওই বছরই উত্তীর্ণ হই। কিন্তু সংশোধিত রেজাল্ট নাচোল সরকারি কলেজে পৌঁছায়নি।
এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. জোবদুল হক জানান, প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় আব্দুর রহমানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। তাকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে এর ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। তিনি সন্তোষজনক জবাব দিতে পারলে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্র : বাংলানিউজ