চাঁদাবাজির অভিযোগে দায়ের করা এক মামলায় প্রকৃত আসামির বদলে কারাগারে যান আরেকজন। তবে শুরুতে শনাক্ত করা না গেলেও আসামির জামিনের পর কারামুক্তির সময় বিষয়টি ধরা পড়ে। এ ঘটনায় প্রকৃত আসামি ও প্রতারণা করায় বদলি কারাভোগকারী এবং আসামি পক্ষের আইনজীবীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছেন আদালত।
জানা গেছে, সম্প্রতি চাঁদাবাজির মামলায় প্রকৃত আসামি ইব্রাহীম খান ওরফে ভাগনে তুষারের পরিবর্তে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে আসেন সাইফ ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে ওই মামলায় আসামির জামিন হলে প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়ে।
মূলত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় পরিচয়পত্রে সংরক্ষিত আঙুলের ছাপের সঙ্গে আসামির আঙুলের ছাপ মেলাতে গিয়ে বুঝতে পারেন, এত দিন ধরে কারাগারে যিনি ছিলেন, তিনি ইব্রাহীম খান নন।
কারা সূত্র জানায়, চাঁদাবাজির একটি মামলার আসামি ইব্রাহীম খান ওরফে ভাগনে তুষার। এই মামলায় ১২ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি আদালতে ইব্রাহীম সেজে আত্মসমর্পণ করেন সাইফ। এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর তাঁর (ইব্রাহীম) জামিন হয়। যদিও কারাগারে ইব্রাহীমের পরিবর্তে বন্দী ছিলেন সাইফ।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ গনমাধ্যমকে বলেন, ‘জামিনের কাগজ পাওয়ার পর আমরা যখন বন্দীদের মুক্তি দিই, তখন বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে আঙুলের ছাপ নিই। কিন্তু এই বন্দীর (সাইফ) আঙুলের ছাপ না মেলায় আমরা খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি, তিনি প্রকৃত আসামি নন। টাকার বিনিময়ে তিনি কারাবাস করেছেন। পরে বিষয়টি আমরা আদালতকে জানাই।’
কারাগার ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, জালিয়াতির ঘটনাটি ১৯ সেপ্টেম্বর আদালতকে (বিশেষ জজ আদালত–৭) জানানো হলে আদালত ২০ সেপ্টেম্বর জামিন আদেশ বাতিল করেন।
এ–সংক্রান্ত আদেশে বলা হয়, ইব্রাহীম খানের পরিবর্তে সাইফ ইসলামকে দাঁড় করিয়ে আদালতের সঙ্গে প্রতারণা করে জামিন করানো হয়েছে। আসামি সাইফ প্রতারণা করায় তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে আদালতকে অবহিত করার জন্য কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন আদালত।
একই সঙ্গে আসামির পক্ষে জামিন আবেদন করা ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য মো. আবদুল বাসেতের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বলেছেন আদালত।
এ ছাড়া মূল আসামি ইব্রাহীম খানের জামিন বাতিল করে তাঁর বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
এ বিষয়ে আইনজীবী আবদুল বাসেতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি তো আসামি চিনি না, আমি আইডেন্টিফাই (শনাক্ত) করিনি, তারাই (আসামির স্বজনেরা) করেছে।’
এদিকে আসামি পাল্টে দেওয়া নিয়ে আদালতের আদেশ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা আদালতের আদেশটি পেয়েছি। আমরা তাঁকে নোটিশ করেছি, রোববার (আজ) শুনানির দিন নির্ধারণ করেছি।’
সাইফের বিরুদ্ধেও ঢাকার বিভিন্ন থানায় মাদক ও ডাকাতির মামলা রয়েছে। আদালতের আদেশের পর তাঁর বিরুদ্ধে নতুন করে প্রতারণার মামলা হয়েছে বলে জানান কোতোয়ালি থানার ওসি মিজানুর রহমান।
পুলিশ সূত্র জানায়, ইব্রাহীমের মামা তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ইয়াসিন খান ওরফে পলাশ। তিনি এখন একটি হত্যা মামলায় কারাগারে যাবজ্জীবন সাজা খাটছেন। ২০০২ সালের ২৯ মে রামপুরায় যুবদল নেতা মিজানকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় বিচারিক আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। পরে উচ্চ আদালত তাঁর সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি সন্তানেরও বাবা হয়েছেন। এ নিয়ে প্রথম আলোয় ২০১৬ সালের ২৯ জুন বন্দী সন্ত্রাসীর ‘মুক্ত’ জীবন শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
পুলিশ জানায়, ইয়াসিনের ভাগনে ইব্রাহীমের নামে চাঁদাবাজি, বিস্ফোরকসহ বিভিন্ন অভিযোগে পাঁচটি মামলা রয়েছে।
ইব্রাহীমের পরিবর্তে সাইফের কারাবাস নিয়ে সাইফের স্ত্রী মালা বেগম মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি জানি বিষয়টি। তুষার (ইব্রাহীম) ওর বন্ধু। তুষারের এক নানি আছে। সে–ই আমার স্বামীকে সব জায়গায় পাঠাত। ওই দিনও তুষারের নানি তুষার আর সাইফকে নিয়ে গেছে। এরপর তাকে আদালতে উঠাইছে। বন্ধুর জন্যই এটা করছে।’
সূত্র : প্রথম আলো