পিবিআই প্রধানের বিরুদ্ধে বাবুল আক্তারের মামলার আবেদন খারিজ
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. জেবুননেছা বেগম

পিবিআই প্রধানের বিরুদ্ধে বাবুল আক্তারের মামলার আবেদন খারিজ

‘স্বীকারোক্তি আদায়ে’ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ এবং কারাগারে ‘জীবনের নিরাপত্তা’ চেয়ে সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের করা দুই আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।

আজ রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. জেবুননেছা বেগমের আদালত এ আদেশ দেন। স্ত্রী মিতু হত্যার ঘটনায় বাদী থেকে আসামি হওয়া সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সংশ্লিষ্ট আদালতের পিপি আইনজীবী মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী। অন্যদিকে স্ত্রী মিতু হত্যার ঘটনায় বাদী থেকে আসামি হওয়া সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ।

শুনানিকালে আদালতে উপস্থিত ছিলেন আ্যডভোকেট মোঃ রায়হানুল ওয়াজেদ। তিনি ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম-কে এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, এসপি বাবলু আক্তারের পক্ষে যে আবেদনটি করা হয়েছে সেটা যথাযথ আইনে কভারেজ হচ্ছে না বিধায় এবং মামলার চার্জশিট চলে আসার পর নিজে ডিফেন্স নেওয়ার জন্য দরখাস্ত করেছেন বাবুল আক্তার। আদালত এই পর্যবেক্ষণে বাবুল আক্তারের করা আবেদন দুটি খারিজের আদেশ দিয়েছেন।

এদিকে বাবুল আক্তারের আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ জানিয়েছেন, এই আদেশের বিরুদ্ধে শিগগিরই উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে।

এর আগে ‘স্বীকারোক্তি আদায়ে’ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে গত ৮ সেপ্টেম্বর পিবিআই প্রধানসহ ছয় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করেন পুলিশের সাবেক এই কর্মকর্তা। সেদিন বলা হয়েছিল ওই অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হবে কি না, সে বিষয়ে সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সিদ্ধান্ত দেবে আদালত।

সে অনুযায়ী গত সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. জেবুননেছা বেগমের আদালতে আবেদন দুটির ওপর শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিচারক ছুটিতে থাকায় তা আর হয়নি।

বাবুল আক্তারের ওই মামলায় বিবাদী করা হয়েছে, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) বর্তমান প্রধান বনজ কুমার মজুমদার, পিবিআইর চট্টগ্রাম জেলার এসপি নাজমুল হাসান, চট্টগ্রাম মহানগরের এসপি নাঈমা সুলতানা, পিবিআইর তৎকালীন পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা, পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার সাবেক পরিদর্শক এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম ও পিবিআই পরিদর্শক কাজী এনায়েত কবিরকে।

অভিযোগে বলা হয়, মিতু হত্যার ঘটনায় গত বছরের ১২ মে বাবুল আক্তারের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পিবিআই। একই দিনে আরেকটি হত্যা মামলা করেন তার শ্বশুর। সে মামলায় বাবুলকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।

২০২১ সালের ১০ থেকে ১৭ মে পর্যন্ত তাকে ‘আটকে রেখে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য হ্যান্ডকাফ পরিয়ে, ঘুমাতে না দিয়ে, গোসল করতে না দিয়ে অজু করার পানি না দিয়ে ‘নির্যাতন’ করার অভিযোগ আনা হয়েছে আর্জিতে।

আবেদনে বলা হয়, এক নম্বর আসামির (বনজ কুমার) ‘নির্দেশে’ বাবুলকে ‘অন্যায়ভাবে আটকে রেখে ভয়ভীতি দেখিয়ে লাঞ্ছনাকর আচরণ ও নির্যাতন’ করা হয়েছে।

আইনজীবী কফিল জানান, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ এর ১৫(১) ও ৫ (২) ধারায় এ অভিযোগ করা হয়েছে।

বাবুলের মামলার আবেদনের পর ‘মামলার আসামিদের নির্দেশে ও প্ররোচনায়’ গত ১০ সেপ্টেম্বর দুপুরে ফেনী মডেল থানার ওসি নিজাম উদ্দিন ফেনী কারাগারে প্রবেশ করে বাবুল আক্তারের কক্ষে দীর্ঘ সময় ধরে তল্লাশি চালায় অভিযোগ আনেন বাবুল। এবং গত ১২ সেপ্টেম্বর বাবুল আক্তার ‘জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে’ আদালতের কাছে আরেকটি আবেদন করেন।

ওই আবেদনে অভিযোগ করা হয়, “জেল কোড অনুসরণ না করেই, বন্দির কক্ষ তল্লাশীর নামে জীবনের ক্ষতি সাধনের চেষ্টায় এ যাত্রায় সফল না হলেও আসামিরা যে কোনো সময় বাদি ও তার পরিবারের জীবননাশসহ যে কোনো ধরণের ক্ষতি করতে পারে।”

এছাড়া নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন ২০১৩ এর ১১ ধারায় বাবুল আক্তারের জীবনের ক্ষতি করা ও ভীত করার অভিযোগও আনা হয় এতে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় মিতুকে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছিলেন সে সময় পুলিশ সুপার পদে থাকা বাবুল আক্তার।

সেই মামলায় তাকেই প্রধান আসামি করে গত ১৩ সেপ্টেম্বর আাদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পিবিআই। এ বিষয়ে ১০ আক্টোবর শুনানির দিন নির্ধারিত আছে। অভিযোগপত্রে তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই বলেছে, ‘পরকীয়ার ঘটনা জেনে যাওয়ায়’ সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার তার `সোর্সদের দিয়ে’ স্ত্রী মিতুকে ‘খুন করান’ বলে উঠে এসেছে তাদের অনুসন্ধানে।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, এহতেশামুল হক ভোলা, শাহজাহান মিয়া, কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা ও খায়রুল ইসলাম ওরফে কালু। এদের মধ্যে মুছা ও কালু পলাতক।