খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার আবেদনে আইন মন্ত্রণালয়ের 'না'
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক

আগামী সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণের সুযোগ নেই : আইনমন্ত্রী

আগামী সংসদ নির্বাচনে আইন অনুসারে দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণের সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।

আজ সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সহকারী জজদের ৪৭তম বিশেষ বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আইন সচিব গোলাম সারওয়ার।

ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের অপব্যবহার কীভাবে বন্ধ করা যায় সে বিষয়ে কাজ চলছে। আগে অপব্যবহার হয়নি তা অস্বীকার করছি না।

মন্ত্রী বলেন, আপনারা অবশ্যই কিছু উন্নতি দেখেছেন। এখন ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা হলেই কিন্তু কাউকে অ্যারেস্ট করা হয়না। এছাড়া মামলা করলেই যে তা গ্রহণ করা হয় তাও কিন্তু নয়। আইনটি নিয়ে চলমান গবেষণা, আলাপ-আলোচনা ও মিসইউজের কথা ভেবেই গৃহীত পদক্ষেপের প্রতিফলন। সেকারণে আমি বলব, বিশেষ করে সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন নিয়ে ভীত হওয়ার কোন কারণ নাই।

‘বিএনপির মহাসচিব বিভিন্ন সময়ে বলছেন খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাবে না এবং তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে কোনো ছাড় দেবে না বিএনপি’ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে দুর্নীতির মামলায় দুই বছর বা তার অধিক সাজা হয় তাহলে এমপি নির্বাচন করতে পারবেন না। তিনি (খালেদা জিয়া) আদালতের মাধ্যমে দণ্ডপ্রাপ্ত।

মন্ত্রী বলেন, আমার মনে হয়, বিএনপির সেক্রেটারি জেনারেল অনেক দেশীয় আইন মানেন না। তাদের পক্ষে এ রকম কথা বলাটা যে খুব একটা সারপ্রাইজিং তা না। আমার কথা হচ্ছে, দেশে যে আইন আছে সে আইনে যদি তিনি যোগ্য হন তাহলে নির্বাচন করবেন। আর তিনি যদি অযোগ্য হন তাহলে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না।

‘খালেদা জিয়ার আপিল বিচারাধীন আছে কিন্তু তারা শুনানির উদ্যোগ নিচ্ছেন না’ এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, তারা কী করবেন না করবেন আমি কী সেজন্য তাদের উপদেশ (অ্যাডভাইস) দেব? তারা আপিল শুনানির উদ্যোগ নিচ্ছেন না, তার কৈফিয়ত আমাকে দিতে হয় এটা তো যৌক্তিক না।

খালেদা জিয়া আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা এমন আরেক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, আইনে যা বলে তাই হবে। আমার কথার সারমর্ম হচ্ছে এই, আইনে যদি বলে তিনি করতে পারবেন তাহলে তিনি করতে পারবেন। কিন্তু আইনে যদি বলে তিনি করতে পারবেন না তাহলে তিনি করতে পারবেন না। আপাতত যে আইন আছে তাতে মনে হয় না যে তিনি করতে পারবেন।

উল্লেখ্য, দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের দণ্ডিত সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি ছিলেন। এরমধ্যে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন।

পরে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে পরিবারের সদস্যদের আবেদনে সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে সাময়িক সময়ের জন্য মুক্তি দেয় সরকার। এরপর খালেদা জিয়া রাজধানীর গুলশান অ্যাভিনিউয়ের নিজের বাসভবন ফিরোজায় যান। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ফের মেয়াদ আরও বাড়ানো হয়েছে।

সবশেষে গত ১৯ সেপ্টেম্বর মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় মাসের জন্য মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। প্রতিবার একই শর্তে তাকে কারাগারের বাইরে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। শর্ত অনুযায়ী, মুক্ত থাকার সময়ে খালেদা জিয়া বিদেশে যেতে পারবেন না।