কঠোর সাজার ব্যবস্থা না থাকায় বাড়ছে পরকীয়া, ভাঙছে সংসার

সুপুষ্ট আইন না থাকায় বাড়ছে পরকীয়া, ভাঙছে সংসার

মো. অলিউর রহমান : ইদানিং পরকীয়া আমাদের সমাজে মহাব্যাধি আকারে ধারণ করেছে। সুপুষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট আইন না থাকায় চরম ভুক্তভোগী হচ্ছেন অনেকেই। যার সর্বশেষ ফলাফল হচ্ছে বিচ্ছেদ। আইনি পরামর্শ নিয়ে অনেকের সাথে কথা হয়। এদের বেশিরভাগেরই সমস্যা পরকীয়া জনিত।

সেদিন কথা হচ্ছিল এক ভদ্র মহিলার সাথে। ভদ্র মহিলার স্বামী উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তা। এই দম্পতির ১৩ বছরের সংসার। সেই সংসারে তিনি তিন সন্তানের জননী। ভদ্রমহিলা বলছিলেন, কিছুদিন আগে ওনি ওনার স্বামীর পরকীয়ার বিষয়টা আঁচ করতে পারেন। অনেক চেষ্টা করেও স্বামীকে ফেরাতে পারেননি। যার সর্বশেষ পরিণতি, এক তরফা ডিভোর্সের নোটিশ। ভদ্র মহিলা বলছিলেন, তিনি তাঁর স্বামীর বিচার চান।

তবে বাস্তবতা হচ্ছে আসলেই কি বাংলাদেশের আইনে পরকীয়ার সুনির্দিষ্ট বিচার আছে? সত্যি হলো, এ সংক্রান্ত আইন খুব বেশি নেই। তবে দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারায় বলা হয়েছে, যে কোন বিবাহিত ব্যক্তি যদি অন্য কোন বিবাহিত নারীর সাথে জেনেশুনে যৌন সম্পর্ক করে তাহলে তা ব্যভিচার বলে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে সেই পুরুষটির পাঁচ বছরের কারাদন্ড, অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডের বিধান আছে।

আর এই কর্মে সহায়তাকারিণী অন্য লোকের স্ত্রী হতে হবে। তবে আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে এই যে, ব্যভিচারের ক্ষেত্রে স্ত্রীলোকের কোনো শাস্তির বিধান আইনে নেই। ওই স্ত্রীলোকটি যে দুষ্কর্মের সহায়তাকারিণী বা ব্যভিচারের অপরাধে দোষী অথচ তিনি কোনো সাজা পাবে না।

১৮৬০ সালে ইংরেজ শাসনকালে তৈরি তথা প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারাটি বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ৩২ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এতে নারী ও পুরুষকে আলাদাভাবে বিবেচনা করা হয়েছে।

দিনকে দিন পরকীয়া একটি মারাত্মক ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। কঠোর এবং সুপুষ্ট আইন কানুন না থাকায় যার সর্বশেষ রূপ হচ্ছে বিচ্ছেদ। এর ফলে অনেকগুলো পরিবার ধ্বংস হচ্ছে। সময়ের সাথে আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি পরকীয়া নিয়ে কঠোর এবং সুপুষ্ট আইন মডিফাই করা উচিত।

লেখক : অ্যাডভোকেট।