ছোটখাটো বিরোধ নিজেদের মধ্যে আপোষ-মিমাংসা করা সহ পঞ্চগড় জেলার বিচারপ্রার্থীদের প্রতি ১১টি অনুরোধ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. মতিউর রহমান।
মামলা আপোষ-মিমাংসা হলে বাদী-বিবাদী ও আইনজীবীদের জন্য উপহারের ব্যবস্থা রেখে অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মতিউর রহমানের ওই ১১টি অনুরোধ টাঙানো হয়েছে আদালতের দরজায়।
বিচারকের ১১টি অনুরোধ নিম্নরূপ –
১. ছোটখাটো বিরোধগুলো নিজেদের মধ্যে আপোষ-মিমাংসা করুন। আপনার শিশু সন্তানের কথা বিবেচনা করে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক দ্বন্দ্বগুলো মীমাংসা করুন। সংসার, সমাজ ও পরিবারে শান্তি ফিরে আসবে। মামলা আপোষ হলে বিচারকের কাছ থেকে আপনি পাবেন দুইটি চকলেট। আর আপনার বিজ্ঞ আইনজীবীও পাবেন দুইটি চকলেট।
২. ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন প্রত্যেকটি মামলা শুনানির জন্য ডাক পড়বে।
৩. causelist.judiciary.org.bd এই লিংকে অত্র আদালতের প্রতিটি মামলার পরবর্তী তারিখ ও ফলাফল দেয়া আছে। প্রয়োজনে ইন্টারনেটের মাধ্যমে মোবাইলে এই লিংক থেকে আপনার মামলার প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারেন।
৪. অত্র আদালত হতে কোন সাক্ষীকে ফেরত দেয়া হয়না। সমন পেয়ে সাক্ষ্য দিতে আসলে আদালতের ভিতরে পেছনের বেঞ্চে বসে দয়া করে অপেক্ষা করুন। যথাসময়ে আপনার মামলার ডাক পড়বে। সাক্ষ্য প্রদানে আপনাকে সহযোগিতা করা হবে।
৫. আপনি পরীক্ষার্থী হলে বা সামনে আপনার পরীক্ষা থাকলে অযথা সময় নষ্ট না করে আদালতের বারান্দায় রক্ষিত বেঞ্চে বসে বই বা নোট পড়তে পারেন। এজন্য সঙ্গে বই আনুন।
৬. এই আদালতের বিচারকের কাছে শিশুদের জন্য চকলেট আছে। শিশু কান্নাকাটি করলে অস্থির হওয়ার কিছু নেই। দুগ্ধপোষ্য ষীষূ বা ছোট শিশু থাকলে তার মামলা আগে শুনানি করা হয়।
৭. নামাজের সময় দয়া করে অপেক্ষা করুন। নামাজের পর আপনার মামলার শুনানি হবে।
৮. পিছনের বেঞ্চ সম্মানিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অসুস্থ বৃদ্ধ মানুষের বসার ব্যবস্থা আছে। দয়া করে তাদের বসতে সহায়তা করুন।
৯. এই আদালতে দীর্ঘ সময় ধরে মামলার শুনানি হয়। আদালতের নীচ তলায় ক্যান্টিনে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। ক্ষুধা লাগলে নিজ টাকায় খেয়ে আসুন। টেনশন করবেন না, নিশ্চিত থাকুন – আপনার মামলার শুনানি হবে।
১০. আদালতে আসামির কাঠগড়ায় ও হাজতখানায় আসামিদের পড়ার জন্য দুইটি বুক সেলফ আছে যাক ‘আদালত পাঠাগার’ নামে পরিচিত। আপনি প্রয়োজনে সেখান থেকে বই নিয়ে পড়তে পারেন।
১১. মনে রাখবেন, ন্যায়বিচার পাওয়া আপনার অধিকার, কোন অনুকম্পা বা দয়া নয়।
আদালতের দরজায় টাঙানো বিচারকের এসব অনুরোধের ফলে আদালত সম্পর্কে মানুষের ভীতি দূর হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। একইসঙ্গে বিচারকের এমন অভিনব উদ্যোগের ফলে বিচার কাজে গতি বেড়েছে বলেও মত আদালত সংশ্লিষ্টদের।