ভাষার মাসের প্রথম দিনে ১৪৯ রায় ও আদেশ বাংলায়, সুপ্রিম কোর্টকে সাধুবাদ
সুপ্রিম কোর্ট, শহীদ মিনার

ভাষার মাসের প্রথম দিনে ১৪৯ রায় ও আদেশ বাংলায়, সুপ্রিম কোর্টকে সাধুবাদ

ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির প্রথমদিনে (১ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের আপিল এবং হাইকোর্ট বিভাগ ১৪৯টি রায় ও আদেশ বাংলায় ঘোষণা করেছেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট অঙ্গনসহ বিচারপ্রার্থী সাধারণ জনগণ।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ও হাইকোর্ট বিভাগের তিনটি দ্বৈত বেঞ্চের বাংলায় দেওয়া ১৪৯টি রায় ও আদেশের মধ্যে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ১৪৫টি আদেশ বাংলায় দিয়েছেন। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির বাংলায় আদেশ প্রদান দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে প্রথম।

আর হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি নাইমা হায়দার, বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল একটি করে রায় এবং বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ একটি আদেশ বাংলায় দিয়েছেন।

বাংলায় রায় দেওয়া বিচারকদের বক্তব্য

আদালতে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, ভাষা শহীদদের সম্মানে আজ সব আদেশ বাংলায় দিচ্ছি। পাশপাশি তিনি বলেছেন, এখন থেকে চেম্বার আদালতে বাংলায় আদেশ দিয়ে যাবেন।

বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ ‘মো. আক্কাস আলী বনাম বাংলাদেশ’ মামলার রায়টি বাংলায় ঘোষণা করেন। অর্পিত সম্পতি সংক্রান্ত এ রিট মামলাটির রায় ঘোষণার আগে বিচারপতি নাইমা হায়দার বলেন, আজ ১ ফেব্রুয়ারি। ভাষার মাস আজ থেকে শুরু। ভাষা শহীদের আত্মার প্রতি সম্মান জানিয়ে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতি সম্মান জানিয়ে আজকের প্রথম রায়টি বাংলায় ঘোষণা করছি। বিশ্বের সমস্ত বাংলা ভাষাভাষীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে এ রায় ঘোষণা করছি।

বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ ফৌজদারি রিভিশন মামলায় রুল চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে বাংলায় রায় ও আদেশ দেন। বাংলায় রায় ঘোষণার সময় বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ১৩ বছরের বিচারিক জীবনে প্রথম বাংলায় রায় দিলাম এবং বাংলায় এই রায় দিতে পেরে গর্ববোধ করছি। তিনি আরও বলেন, ভাষার মাসে আরও বাংলায় রায় দেওয়ার প্রত্যাশা রাখছি।

এছাড়া সব সময়ই বাংলা ভাষায় রায় ও আদেশ দিয়ে থাকেন বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল। ভাষার মাসের প্রথম দিনও একটি রায় বাংলায় ঘোষণা করেছেন তিনি।

আর বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ একটি আদেশ দেন। বাংলায় দেওয়া আদেশে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় সরকারি সড়কের পাশে লাগানো অর্ধশত তালগাছ মারতে অভিনব কায়দায় কীটনাশক প্রয়োগকারী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শাহরিয়ার আলমকে তলব করেছেন হাইকোর্ট।

সর্বোচ্চ আদালতের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ

ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে ভাষার মাসের প্রথম দিনে বাংলায় দেওয়া প্রায় দেড়শ রায় ও আদেশের বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী ও সাধারণ জনগণ এমন উদ্যোগকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন। তবে শুধু ভাষার মাসেই নয়, তাদের দাবি এ ধারা অব্যাহত থাকুক সব সময়।

জানতে চাইলে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ ইতিপূর্বে বাংলা ভাষায় রায় ও আদেশ দিয়েছেন। তবে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির বাংলায় আদেশ প্রদান দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে প্রথম।

বিষয়টি প্রশংসনীয় উদ্যোগ মন্তব্য করে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ইংরেজি রায় বিচারপ্রার্থী অনেকেই বুঝতে পারেন না। ফলে বাংলায় দেওয়া এসব রায় ও আদেশ বিচারপ্রার্থীদের কাজে লাগবে।

উচ্চ আদালতে বাংলা রায়ের প্রচলন

নব্বইয়ের দশক উচ্চ আদালতে থেকে বাংলায় রায় ও আদেশ দেওয়া শুরু হয়। প্রয়াত বিচারপতি এ আর এম আমীরুল ইসলাম চৌধুরী বাংলায় আদেশ দেওয়া শুরু করেন।

এরপর সাবেক বিচারপতিদের মধ্যে কাজী বিচারপতি এবাদুল হক, বিচারপতি হামিদুল হক, বিচারপতি আবদুল কুদ্দুছ, সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক, আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী বাংলায় বেশ কয়েকটি রায় দেন।

বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, এম ইনায়েতুর রহিম, আবু জাফর সিদ্দিকী, জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম হাইকোর্টে থাকাকালীন বেশ কয়েকটি মামলার রায় বাংলায় দিয়েছেন।

তবে নিয়োগ পাওয়ার পর ২০১০ সালের এপ্রিল থেকে বাংলায় রায় দিয়ে যাচ্ছেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন। আর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে মামলায় ২০১৬ সালের ৫ মে হাইকোর্টের তিন বিচারপতি রায় দেন। তিন বিচারপতির মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল বাংলায় রায় লেখেন। এরপর থেকে তিনি নিয়মিত বাংলায় রায় ও আদেশ দিচ্ছেন।