আদালতে পিপির উপর হামলা, দুই আইনজীবীকে শোকজ
রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত

সালিশে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, চেয়ারম্যানসহ ৩ জনের ১৪ বছর করে কারাদণ্ড

রংপুরের বদরগঞ্জে আলোচিত সালিশি বৈঠকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন মামলায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ তিনজনকে ১৪ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অপর একজনের তিন বছর, চারজনকে এক বছর করে কারাদণ্ড এবং ৪৫ জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ এর বিচারক রোকনুজ্জামান বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) এই রায় ঘোষণা করেন।

সংশ্লিষ্ট আদালতের পিপি জাহাঙ্গীর আলম তুহিন জানান, বলপূর্বক দুই বোনকে অপহরণ করে নির্যাতন করতে করতে সালিশি বৈঠকে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে। তাই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে উপজেলার মধুপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আয়নাল হোসেন, তার সহযোগী মহুবুল ইসলাম ও চিকনা এনামুলকে ১৪ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এছাড়াও সালিশি বৈঠকে মারধর ও শ্লীলতাহানির ঘটনা প্রমাণ হওয়ায় চিকনা এনামুল ও মোটা এনামুলকে তিন বছর করে এবং মারধর প্রমাণ হওয়ায় সাবেক ইউপি মেম্বার ইলিয়াস, সেকান্দার মণ্ডল, রউফ মণ্ডল মজম আলী ও বাবলুকে এক বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলার বাকি ৪৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় তাদের বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।

রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তুহিন বলেন, দীর্ঘ ১১ বছর পর হওয়া রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। অপরদিকে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন আসামি পক্ষের আইনজীবী আব্দুল হক প্রামাণিক।

আদালতের কাঠগড়া থেকে বেরিয়ে মামলার বাদী বলেন, রায়ে ৯ জনের কারাদণ্ড হলেও বাকিদের খালাস দেওয়া হয়েছে, তবুও আমি সন্তুষ্ট। তবে, নিজেদের অনিরাপদ মনে করছি। কারণ দণ্ডপ্রাপ্ত ও খালাস পাওয়া সবাই ক্ষমতাধর ব্যক্তি। আমি ঠিকভাবে বাড়ি যেতে পারব কিনা জানি না। আমাকে তারা মেরেও ফেলতে পারে। আমি সরকারের কাছে নিরাপত্তা দাবি করছি।

আরকে ভিকটিম বলেন, মামলার পর আদালতের আদেশ থাকলেও শুধু বাদীর বাড়িতে পুলিশ পাহারা দিয়েছে। আমি নিরাপত্তাহীন ছিলাম। রায়ের পর আমি আরও নিরাপত্তাহীন হলাম। আমি পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চাই। আমার জীবনের ঝুঁকি রয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ২৫ জুন বদরগঞ্জ উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের রাজারামপুর কাশিপুর লিচু বাগান এলাকায় তালাকপ্রাপ্তা দুই নারীর নামে চরিত্রহীনতার অভিযোগ আনেন স্থানীয়রা। পরে সালিশি বৈঠকে তাদের হাত-পা বেঁধে লাঠি দিয়ে মারধর করতে করতে বিবস্ত্র ও ভিডিও ধারণ করা হয়।

বিষয়টি ওই সময় গণমাধ্যমে এলে হাইকোর্ট স্ব-প্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। পরে ভুক্তভোগী এক নারী মামলা করলে ৫৪ আসামির বিরুদ্ধে দুই দফায় তদন্ত করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এরপর ১৫ জনের সাক্ষ্য শেষে দীর্ঘ সাড়ে ১১ বছর পর বুধবার আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করলেন আদালত।