কক্সবাজারের ডিসিকে হাইকোর্টে তলব
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: জয়দীপ্তা দেব চৌধুরী

যৌতুকের জন্য মৃত্যু ঘটানোর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কেন অসাংবিধানিক নয়, হাইকোর্টের রুল

যৌতুকের কারণে কারও মৃত্যু হলে একমাত্র শাস্তি ‘মৃত্যুদণ্ড’–সংক্রান্ত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা নিয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রোববার (২ এপ্রিল) বিচারপতি মাহমুদুল হক ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল দেন।

২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(ক) ধারার বৈধতা নিয়ে ইক্যুইটি রাইটস অ্যান্ড গভর্ন্যান্স ট্রাস্ট ওই রিট করে।

১১(ক) ধারা অনুসারে যৌতুকের জন্য কোনো মৃত্যু ঘটলে এর একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। যখন কোনো অপরাধের একটিমাত্র শাস্তি থাকে অর্থাৎ, একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, তখন এটি ন্যায়বিচারের পরিপন্থী বলে ধরে নেওয়া হয়। কেননা, বিচারক অপরাধী সাব্যস্ত করে কাউকে যাবজ্জীবন দিতে পারেন, আবার মৃত্যুদণ্ড দিতে পারেন। এই ক্ষমতা যদি কেড়ে নেওয়া হয় এবং দোষী হলে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে বলা হয়, এটি অসাংবিধানিক।

আইনের ১১(ক) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যৌতুকের কারণে মৃত্যু ঘটানোর জন্য মৃত্যুদণ্ডে বা মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টার জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং উভয় ক্ষেত্রে ওই দণ্ডের অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।

রুলে ১১(ক) ধারা কেন অবৈধ, সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, অসংগতিপূর্ণ ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থার পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে। আইনসচিব ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহদীন মালিক, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এম মনজুর আলম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রুমি।

পরে আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, ১১(ক) ধারা অনুসারে যৌতুকের জন্য কোনো মৃত্যু ঘটলে এর একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। যখন কোনো অপরাধের একটিমাত্র শাস্তি থাকে অর্থাৎ, একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, তখন এটি ন্যায়বিচারের পরিপন্থী বলে ধরে নেওয়া হয়। কেননা, বিচারক অপরাধী সাব্যস্ত করে কাউকে যাবজ্জীবন দিতে পারেন, আবার মৃত্যুদণ্ড দিতে পারেন। এই ক্ষমতা যদি কেড়ে নেওয়া হয় এবং দোষী হলে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে বলা হয়, এটি অসাংবিধানিক। যে কারণে রিটটি করা হলে আদালত ওই রুল দেন।

ইকুইটি রাইটস অ্যান্ড গভর্নেন্স ট্রাস্টের করা রিট আবেদনে বলা হয়, সংবিধানের ২৬, ২৭, ৩১, ৩২ ও ৩৫ অনুচ্ছেদের সঙ্গে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ১১(ক) অসঙ্গতিপূর্ণ। শুধু তাই না, এই ধারাটি আমাদের স্বাধীন বিচার বিভাগের মৌলিক কাঠামোর জন্যও ক্ষতিকর।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হলো সংবিধানের অন্যতম মৌলিক স্তম্ভ এবং কাঠামো। স্বাধীন বিচার বিভাগে শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে একজন বিচারকের বিচক্ষণতা হচ্ছে মৌলিক বৈশিষ্ট্য। আইনের এ ধারাটির মাধ্যমে বিচার বিভাগ ও বিচারকের স্বাধীনতা, বিচক্ষণতা ও নিরপেক্ষতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

তাছাড়া সংবিধানের ৯৪(৪) অনুচ্ছেদে বিচারকার্য পরিচালনায় বিচারককে স্বাধীন থাকার নিশ্চয়তা দেওয়া হলেও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(ক) ধারায় যৌতুকের কারণে মৃত্যুর জন্য মৃত্যুদণ্ড নির্ধারণ করে দেওয়ায় বিচারকের স্বাধীনতাকে খর্ব করা হয়েছে।