সাতমসজিদ সড়কে গাছ কাটা বন্ধের দাবিতে গান, নাটক, স্লোগানে ভিন্নধর্মী প্রতিবাদ
সাতমসজিদ সড়কে গাছ কাটা বন্ধের দাবিতে গান, নাটক, স্লোগানে ভিন্নধর্মী প্রতিবাদ

সাতমসজিদ সড়কে গাছ কাটা বন্ধের দাবিতে গান, নাটক, স্লোগানে ভিন্নধর্মী প্রতিবাদ

গান, পথনাটক, স্লোগান ও বক্তৃতায় রাজধানীর ধানমন্ডির সাতমসজিদ সড়কের বিভাজকের গাছ কাটার প্রতিবাদ জানালেন মানবাধিকারকর্মী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মী, ছাত্রসংগঠনের প্রতিনিধি, স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীরা।

সাতমসজিদ সড়কের পাশে আবাহনী মাঠের উল্টো দিকের ফুটপাতে অবস্থান নিয়ে শুক্রবার (১২ মে) বিকেলে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

এদিন বিকেল সাড়ে পাঁচটায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু হয়। সাতমসজিদ সড়কের গাছ রক্ষা আন্দোলনকারীরা গাছ কাটার প্রতিবাদে টানা ১২ দিন নানা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে আসছেন। শুক্রবারের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল।

কর্মসূচিতে সুলতানা কামাল বলেন, ‘আমরা বিরাট সংকটে আছি। জলাশয়, গাছ ও পাহাড়, পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংসের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন সংকট চলছে। মানুষ রোগাক্রান্ত হচ্ছে, আয়ুষ্কাল কমে যাচ্ছে। এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্যই এই আন্দোলন।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সমালোচনা করে সুলতানা কামাল বলেন, ‘গাছ কেটে নগরীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে হয়—এ ধরনের কথা আগে কখনো শুনিনি। মানুষে মানুষে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি বলেই আজ আমরা সংকটে ভুগছি। এখন প্রকৃতির সঙ্গেও আমাদের বিচ্ছিন্ন করার প্রক্রিয়া চলছে। একটা কথাই বলব, গাছ কাটা মানেই মানুষ হত্যা। তাই গাছ কাটা চলবে না।’

কর্মসূচিতে আন্দোলনকারী ও সংহতি জানাতে উপস্থিত হওয়া বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্যের পাশাপাশি প্রতিবাদী গান পরিবেশন ও পথনাটক প্রদর্শন করা হয়।

গাছ কাটার প্রতিবাদে ‘এভাবেই একদিন পৃথিবীর ফুলেরা হারিয়ে যাবে, পাখিরাও জাদুঘর চিনে যাবে’ গান পরিবেশন করেন সংগীতশিল্পী মুইজ মাহফুজ। উন্নয়ন টেলিভিশন পথনাটক প্রদর্শন করেন তীরন্দাজ নাট্যদলের সদস্যরা। কর্মসূচিতে সংহতি জানাতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিল্পীরাও নিজেদের ভাষায় গান পরিবেশন করেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘গাছ কেটে যে উন্নয়ন হচ্ছে, এটা হচ্ছে যুক্তিবিহীন আবেগী উন্নয়ন। শুধু শুধু টাকা ফেলা হচ্ছে। এলাকার কোনো মানুষই তো এটা চায় না। যে উন্নয়নের বিরুদ্ধে মানুষ প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করে, এটা কোন যুক্তিতে উন্নয়ন?’

ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়রের উদ্দেশে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমাদের কথা শুনুন, আমাদের যুক্তি উপলব্ধির চেষ্টা করুন। আমাদের কথা শুনবার সাহস ঢাকা দক্ষিণ সিটি কেন দেখাতে পারছে না? আমরা আশা করি, তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। আর একটি গাছও কাটা হবে না।’

লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থের সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সাতমসজিদ সড়কের গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়কারী আমিরুল রাজীব। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই সিটি করপোরেশন গাছ কাটা বন্ধ করুক। সড়ক বিভাজকে বাকি যেসব গাছ আছে, সেগুলোর একটিও যেন কাটা না হয়।’

কর্মসূচি থেকে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটিকে সাত দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। এ সময় বলা হয়, মেয়র বরাবর দেওয়া চিঠির দাবিগুলো বাস্তবায়নের ঘোষণা না দিলে ২১ মে পরিবেশ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ছাত্র-যুব সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে নগরভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হবে।

কর্মসূচি থেকে আরও কিছু দাবি জানানো হয়। সড়ক বিভাজকের মাটি সরানোয় যে গাছগুলো ঝুঁকিতে পড়েছে, সেগুলো গোড়ায় মাটি দিয়ে রক্ষা করতে হবে। এ ছাড়া সড়ক বিভাজকের কংক্রিট ও বালু সরিয়ে মাটি ফেলতে হবে।

এ বিষয়ে গত বুধবার ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, উন্নয়নকাজে অনেক সময় গাছ কেটে ফেলতে হয়। যখন নিতান্তই উপায় থাকে না, তখন এমনটা করা হয়। তাই উন্নয়নকাজের প্রয়োজনে গাছ কাটতে হলে সেখানে নতুন করে তিন গুণ গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সড়ক বিভাজকটিতে আরও অনেক বেশি গাছ লাগানো হবে।