সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, দেশের প্রতি ৯০ হাজার মানুষের জন্য মাত্র একজন বিচারক রয়েছেন। ফলে দেশের ১৮ কোটি মানুষের জন্য মাত্র দুই হাজার বিচারক দিয়ে দ্রুত সময়ে বিচার ও মামলার নিষ্পত্তি করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া উল্লেখ করার মতো রেফারেন্স বুকও নেই। ফলে মামলার গুরুত্ব বুঝে সিদ্ধান্ত দেয়াও কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে।
চাঁদপুরে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি ও প্রতিবন্ধকতা দূরণ শীর্ষক এক কর্মশালায় শুক্রবার (০৯ জুন) প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে এসব কথা বলেন আপিল বিভাগের এই বিচারপতি।
এমন পরিস্থিতিতে দেশের আইন প্রণেতা এবং সরকারের নীতিনির্ধারকদের বিভাগকে বিচার প্রার্থীদের বিদ্যমান সমস্যাগুলো দূর করার জন্য তাগিদ দেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
চাঁদপুর জেলা জজকোর্ট মিলনায়তনে দিনব্যাপী এই কর্মশালায় বিভিন্ন আদালতের বিচারক ও আইনজীবী নেতারা অংশ নেন। এতে সভাপতিত্ব করেন, চাঁদপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মহসিনুল হক।
বিচারকদের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, ‘আপনাদেরকে দেশের সংবিধান সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন ক্ষমতা দিয়েছে। আর কাউকেই সেই ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। বিচার প্রার্থীর ন্যায়বিচার সম্পাদনে আপনারা স্বাধীনভাবেই বিচার কাজ করবেন। কোনো মানুষের কথা শোনার দরকার নেই।’
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান আরও বলেন, ‘সরকার ব্যবস্থায় যারা থাকেন, তাদের মানুষের কথা চিন্তা করতে হবে, সেইভাবেই আইন সৃষ্টি করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বিচারকরা চাইলে আইডিয়া দিতে পারি, যদি আমাদের কাছে চাওয়া হয়।’
মাঠ পর্যায়ে বিচারকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘পোষ্ট মোর্টেম রিপোর্ট এবং পুলিশ তদন্ত রিপোর্ট যেন যথাযথ সময়ে আসে সেদিকে দৃষ্টি দেবেন। অনেক সময়ে এই রিপোর্ট ঠিক হয় না, বা ঠিক মতো আসে না। ডাক্তার কিংবা সাক্ষী তার সাক্ষ্য দিতে আসতে চায় না, সেক্ষেত্রে কঠোর হবেন। বিচারালয়ে প্রযুক্তিগত কাঠামো বাড়াতে হবে। বিচারকরা সর্বদা কর্মস্থলে থাকার চেষ্টা করবেন।’
তিনি আরো বলেন, বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ এবং পুলিশের (জজ, ডিসি, এসপি) সমন্বয় দরকার। এ তিনে মিলে সমন্বিত কর্মশালা দরকার। এতে করে সমন্বয় হয়। এর জন্য একটা ইনস্টিটিউট দরকার। আমি এটি প্রত্যাশা করি। এদেশের মানুষের কল্যাণের জন্য আমাদের সবাইকে কাজ করে যেতে হবে।
তিনি বলেন, বিচার ব্যবস্থায় যারা জড়িত তারা অনেকেই আইনের সঠিক সংজ্ঞা কিংবা ব্যাখ্যা বুঝেন না। কারণ, দেশের বিদ্যমান আইনে অনেক ফাঁক ফোকর রয়েছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এসব আইন যুগোপযোগী করতে হবে। না হয়, বিচার প্রার্থী মানুষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হবে।
তাই যারা দেশ শাসন ও আইনপ্রণয়ন করছেন। তারা বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এমনটা প্রত্যাশা করেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান আরও বলেন, দেশের প্রায় জেলার আদালত চত্বরে ন্যায়কুঞ্জ স্থাপন করা হয়েছে। এতে যে কেবল বিচার প্রার্থীরা অবস্থান করবেন। তা কিন্তু নয়, আসামিরাও অবস্থান করতে পারবেন। কারণ, কোনো ঘটনাচক্রে আজ হয়তো তিনি আসামি। তাও কিন্তু তার অধিকার রয়েছে।
এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজপা) পরিচালক নাফিসা বানু, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জান্নাতুল ফেরদাউস চৌধুরী, চাঁদপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোস্তফা কামাল। পুরো আয়োজনে সঞ্চালনায় ছিলেন, সিনিয়র সহকারী জজ (লিগ্যালএইড) সাকিব হোসেন এবং সহকারী জজ নুসরাত জাহান জিনিয়া।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, পিপি রনজিত রায় চৌধুরী, জিপি জহিরুল ইসলাম, আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রিপন প্রমুখ।