যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ফেডারেল মুসলিম নারী বিচারক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নুসরাত
নুসরাত জাহান চৌধুরী (ছবি- সংগৃহীত)

যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ফেডারেল মুসলিম নারী বিচারক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নুসরাত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ফেডারেল মুসলিম নারী বিচারক হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক নুসরাত জাহান চৌধুরী। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) মার্কিন সিনেটে ভোটাভুটিতে পূর্ব নিউইয়র্কের ডিস্ট্রিক্ট আদালতের বিচারক হিসেবে তাঁর নিয়োগ নিশ্চিত হয়।

সিনেটের উচ্চকক্ষে সামান্য ব্যবধানে জয়ী হন নুসরাত। তিনি ৫০ জন সিনেটরের সমর্থন পেয়েছেন; বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন ৪৯ জন।

নুসরাতের ডিস্ট্রিক্ট জজ হওয়ার খবরটি নিশ্চিত করে টুইট করেন নিউইয়র্কের ডেমোক্রেটিক সিনেটর চাক শুমার। তিনি বলেন, নুসরাতকে নিয়োগের সুপারিশ করতে পেরে আমি গর্বিত। নুসরাত প্রথম বাংলাদেশি মার্কিন নাগরিক ও প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে ফেডারেল বিচারক হয়ে ইতিহাস গড়েছেন।

গত বছরের জানুয়ারিতে জো বাইডেনের প্রশাসন আইনজীবী নুসরাতকে ফেডারেল বিচারকের পদে মনোনয়ন দেয়। নিউ জার্সিতে কর্মরত যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মুসলিম ডিস্ট্রিক্ট জজ জাহিদ কুরাইশি জানান, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অঙ্গীকার পূরণ করতে এবং মার্কিন বিচার বিভাগে বৈচিত্র্য আনার লক্ষ্যে নুসরাতসহ সাতজনকে ফেডারেল বিচারক পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল।

প্রেসিডেন্টের এ মনোনয়নে সমর্থন জানায় কয়েকটি সামাজিক ন্যায়বিচার, নাগরিক স্বাধীনতা এবং মুসলিম অধিকার সংস্থা। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম ফেডারেল বিচারক জাহিদ কুরাইশির নিয়োগও বাইডেন প্রশাসন দিয়েছিল। ২০২১ সালে তিনি নিয়োগ পান।

নুসরাত নিউইয়র্কের ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট আদালতের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যস্ততম আদালতগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ আদালতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে, বেশ কিছু বিচারাধীন রয়েছে। সম্প্রতি নিউইয়র্কের রিপাবলিকান নেতা জর্জ সেন্তোসের অর্থ আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের মামলাটিও এ আদালতে বিচারাধীন ছিল।

বর্তমানে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়নের (এসিএলইউ) ইলিনোয়েস চ্যাপ্টারের আইনি পরিচালকের দায়িত্বে আছেন নুসরাত। সেখানে তিনি বৈষম্যমূলক আচরণ ঠেকাতে পুলিশে সংস্কারের সুপারিশ করেন, যা কার্যকর হয়েছিল।

এসিএলইউর নির্বাহী পরিচালক অ্যান্থনি রোমিও বিবৃতিতে বলেন, নুসরাত একজন দারুণ বেসামরিক অধিকার আইনজীবী। আমাদের জাতির সবার জন্য সমান বিচার নিশ্চিত করতে তাঁর উল্লেখযোগ্য রেকর্ড আছে।

৪৭ বছর বয়সী নুসরাতের নিয়োগ যুক্তরাষ্ট্রের বিচারিক ব্যবস্থায় মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মুসলিম অ্যাডভোকেসি গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ওমর ফারাহ সিনেটের ভোটে তাঁর নিয়োগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ভোটে নুসরাত চৌধুরী ফেডারেল বেঞ্চে নিয়োগ পেলেন, যা ‘নানা কারণে ঐতিহাসিক’।

নুসরাত জাহান চৌধুরীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

৪০ বছর আগে আইনজীবী নুসরাতের বাবা বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। তাঁরা শিকাগোতে থাকতে শুরু করেন। বাবা পেশায় চিকিৎসক হলেও নুসরাত আইনকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। ২০১৬ সালে মিশেল আর্লি নামের মার্কিন নাগরিককে বিয়ে করেন নুসরাত।

নুসরাত জাহান চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ল স্কুল, প্রিন্সটন স্কুল অব পাবলিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স এবং কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করেন।

হোয়াইট হাউজের বিবৃতিতে নুসরাত জাহান চৌধুরীর একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নুসরাত জাহান ২০২০ সাল পর্যন্ত ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের লিগ্যাল ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়া তিনি ২০০৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত নিউইয়র্কে আমেরিকার সিভিল রাইটস ইউনিয়নে বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন।

তিনি ২০১৬ সাল ২০১৮ সাল পর্যন্ত রেসিয়াল জাস্টিস প্রোগ্রাম-এর সিনিয়র স্টাফ অ্যাটর্নি হিসেবও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ২০১৮ সাথে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি রেসিয়াল জাস্টিস প্রোগ্রাম-এর ডেপুটি ডিরেক্টর ছিলেন।

সূত্র : সিএনএন ও এনবিসি নিউজ।