কিছু পরিবর্তন এনে ‘আয়কর বিল ২০২৩’ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। বিলটি পাসের আগে বাছাই কমিটিতে বিলটি পর্যালোচনা ও সংশোধনী প্রস্তাব নিষ্পত্তি হয়। এসময় সরকারি দল ও বিরোধী দলের কয়েকজন সংসদ সদস্যের সংশোধনী প্রস্তাব গৃহীত হয়।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে রোববার (১৮ জুন) অনুষ্ঠিত সংসদ অধিবেশনে ‘আয়কর বিল ২০২৩’ বিল পাস হয়। জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বিলটি পাশের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বিলের বিরোধিতা করে জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মো. ফখরুল ইমাম, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, রওশন আরা মান্নান, ডা. রুস্তম আলী ফরাজী, কাজী ফিরোজ রশীদ এবং স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্য রেজাউল করিম বাবলু। তবে তাদের সেই প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে কণ্ঠভোটে বিলটি পাশ হয়।
পাস হওয়া বিলে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বিভিন্ন সুপারিশ আমলে নেয়া হয়েছে। সংসদীয় কমিটি তাদের প্রতিবেদনে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করে। এর পরিবর্তে কমিটি উল্লিখিত পরিমাণের মেয়াদি বা স্থায়ী আমানত থাকা ব্যাংক আমানতকারীদের জন্য রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করে।
প্রস্তাবিত আয়কর বিলে মোট আয়ের দুই-তৃতীয়াংশ বা ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা, যেটি কম হোক না কেন বেতনভোগী ব্যক্তিদের করযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। আর সংসদীয় কমিটি বেতনভোগী ব্যক্তির আয়ের এক-তৃতীয়াংশ বা ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা, যেটি কম হোক, করযোগ্য আয় হিসেবে বিবেচনার প্রস্তাব করেছে। সংসদ এসব প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।
বিলে কোম্পানি, ফার্ম, ব্যক্তি সমিতি এবং ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত টার্নওভারের তহবিলগুলোকে নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী জমা দিতে হবে, যা প্রস্তাবিত বিলে ২ কোটি টাকা ছিল। সেভিংস সার্টিফিকেট এবং ডিবেঞ্চারের জন্য ট্যাক্স রেয়াত বিষয়ে পাস হওয়া আইনে তথ্য স্পষ্ট করা হয়েছে।
বিলে বিদেশ ভ্রমণের সময় সম্পদ বিবরণী বাধ্যতামূলক জমা দেয়ার বিষয়ে প্রস্তাবিত ধারা বাতিল করা হয়েছে। অ্যাপার্টমেন্টে অপ্রকাশিত আয় দেখানোর জন্য বিশেষ করের পরিমাণ বাড়ানোরও প্রস্তাব করেছে।
পাস হওয়া বিলে গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল ও দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকার সঙ্গে আরো নতুন এলাকার নাম যোগ করা হয়েছে। এসব এলাকায় ফ্ল্যাট বা ভবনে বিনিয়োগের ওপর বিশেষ করের হার কিছু ক্ষেত্রে বাড়ানো হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বাংলায় সহজবোধ্য করে আইনটি করা হচ্ছে। রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। কিন্তু কারো ওপর জোর করে চাপিয়ে দিয়ে সেটা করা যাবে না। ২০০৯ সালে রাজস্ব আদায় ছিল ৫৯ হাজার কোটি টাকা। এখন সেটা ছয় গুণ বেড়েছে। এখানে সরকার খুব খারাপ করেছে তা নয়। আবার খুব ভালো করেছে সেটা না।’
বিলের আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, ‘যাদের ১০১টি গাড়ি আছে তাদের বিপুল পরিমাণে কর দিতে হবে। আইনে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ স্থায়ী করা হচ্ছে। এতে কালো টাকা আয় করতে মানুষ উৎসাহী হবে।’
জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, ‘বিদেশী যারা ডোনেশন দেন, তারা সেখানে আয়কর দিয়ে চ্যারিটির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন। সেখানে করারোপ করা হলে এনজিওগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশ্য কর আদায় বাড়ানো। করের জাল ফেললে অনেক মাছ ধরা পড়বে। কিন্তু অনেক উপকারী মাছও মারা যাবে। এ আইনের মাধ্যমে এনবিআরকে স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে।’
বিলের উপর আনীত বিরোধী দলের সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আয়কর ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে এ বিলটি আনা হয়েছে। বিলটি নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। সংসদীয় কমিটিতেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। এ বিল পাস হলে সংশ্লিষ্ট সবাই উপকৃত হবে। রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বাড়বে। তাই বিলটি পাস হওয়া দরকার।
নিয়ম অনুযায়ী, বিলটি এখন যাবে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে। রাষ্ট্রপ্রধান এতে সই করলে এটি পরিণত হবে আইনে।