একুশে পদক ও প্রাপ্ত অর্থ নিজ প্রতিষ্ঠিত উত্তরবঙ্গ জাদুঘরে হস্তান্তর করলেন দেশবরেণ্য আইনজীবী এসএম আব্রাহাম লিংকন। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক অনাড়ম্বর আয়োজনের মাধ্যমে সোমবার (২৬ জুন) তিনি পদক ও চেকের মাধ্যমে অর্থ হস্তান্তর করেন।
সামাজসেবায় অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২২ সালে বাংলাদেশ সরকার অ্যাডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকনকে একুশে পদকে ভূষিত করে। কুড়িগ্রামের এই আইনজীবী ও সমাজকর্মী নিজ বাড়িতে মুক্তিযুদ্ধ ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস-ঐতিহ্যের সংগ্রহশালা হিসেবে ‘উত্তরবঙ্গ জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠা করে দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছেন। এ ছাড়াও বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে আলোচিত ফেলানী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিনি রাষ্ট্র কর্তৃক নিযুক্ত আইনি পরামর্শক ছিলেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফের সঞ্চালনায় পদক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন– পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন, লিংকনের সহধর্মিণী নাজমুন নাহার সুইটি, মুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশিদ লাল, সাবেক সিভিল সার্জন ডা. আমিনুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেত্রী মতি শিউলি, কুড়িগ্রাম বারের আইনজীবীসহ গণমাধ্যমকর্মীরা।
পদক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে আব্রাহাম লিংকন তার পাওয়া একুশে পদক (সাড়ে তিন ভরি সোনা) এবং প্রাপ্ত সরকারি অর্থের সঙ্গে ব্যক্তিগত আরও এক লাখ টাকা যোগ করে মোট পাঁচ লাখ টাকার চেক উত্তরবঙ্গ জাদুঘরের নামে হস্তান্তর করেন।
আব্রাহাম লিংকনের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মমিনুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘আগামী প্রজন্মের কাছে এই উদ্যোগ অনুকরণীয় এবং শিক্ষণীয় হয়ে থাকবে। একুশে পদকের মতো এমন গর্বের একটি সম্মাননা জাদুঘরে হস্তান্তরের এই ঘটনা অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো। উত্তরবঙ্গ জাদুঘরের সঙ্গে আব্রাহাম লিংকনের নামটিও যুগে যুগে বেঁচে থাকবে।’
পুলিশ সুপার বলেন, ‘আব্রাহাম লিংকনের কর্ম ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আলোকিত করবে। তার প্রতিষ্ঠিত উত্তরবঙ্গ জাদুঘরের দ্যুতি কুড়িগ্রামের গণ্ডি পেরিয়ে গোটা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়বে। জাদুঘরটি আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গৌরবের সঙ্গে আগামী প্রজন্মকে যুক্ত করবে।’
লিংকনের সহধর্মিণী নাজমুন নাহার সুইটি বলেন, ‘স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা যখন জাদুঘরটি দেখতে আসে তখন আমার ভেতরটা আনন্দে ভরে যায়। জাদুঘরে আর কোনও জিনিস রাখার জায়গা নেই। কিন্তু লিংকন কেমন করে যেন ঠিক গুছিয়ে জায়গা বের করে ফেলেন। যে ব্যক্তি কখনও নিজের পরিধেয় কাপড়টি গোছাতে জানেন না, তিনি জাদুঘরের জিনিসপত্র ঠিক গুছিয়ে রাখছেন। এটি আমাকে অভিভূত করে। জাদুঘরটি তার কাছে সন্তানের মতোই।’
আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘এই পদক প্রাপ্তির সময় আমি বলেছিলাম, আমি এই পদক ও প্রাপ্ত অর্থ উত্তরবঙ্গ জাদুঘরে দিয়ে দেবো। আজ আপনাদের সাক্ষী রেখে আমি তা করে গেলাম। এই উত্তরবঙ্গ জাদুঘর আমার আরেকটি সন্তান। শুধু আমার পদক নয়, আমার অর্জিত সম্পদের যে তারল্য মূল্য হবে তার অর্ধেক আমার নিজ সন্তান পাবে আর বাকি সমান অর্ধেক এই উত্তরবঙ্গ জাদুঘর পাবে। এটি আজ আমি আপনাদের বলে রাখলাম। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসেবে এই জাদুঘর যাতে প্রজন্মান্তরে টিকে থাকে সেজন্য আমার এই প্রয়াস।’
জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার উত্তরবঙ্গ জাদুঘরের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন।
প্রসঙ্গত, কুড়িগ্রাম শহরের উপকণ্ঠে নাজিরা ব্যাপারী পাড়ায় ২০১২ সালে লিংকন নিজ বসতবাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন উত্তরবঙ্গ জাদুঘর। পরে জাদুঘরের নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। লিংকনের বাড়ির পাশে তারই দেওয়া ২০ শতাংশ জমিতে নান্দনিক ভবন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। নির্মাণকাজ শেষ হলে জাদুঘরটি সেখানে স্থানান্তরিত হবে।