মামলা থাকলে কি সরকারি চাকরি হবে?
মো. কামাল হোসেন

প্রসঙ্গ: বিভাগীয় মামলা এবং এর ভিত্তি, শাস্তি ও আপিল

মোঃ কামাল হোসেন: রাষ্ট্রের একজন নাগরিক দেশের প্রচলিত আইনে কোন অপরাধ করলে আদালত মামলার মাধ্যমে যেমন তার শাস্তি নিশ্চিত করে তেমনি কোন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বা কর্মচারী কর্তৃক অফিসের নিয়মনীতির পরিপন্থী কাজ করলে তার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্ৰহণ করে থাকে যাকে আমরা সাধারণত বিভাগীয় মামলা বা ডিপার্টমেন্টাল প্রসেডিং বলে থাকি।

বিভাগীয় মামলা কি

কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী তার নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সময়ে সময়ে প্রণীত শৃংখলা ও আচরণ সম্পর্কিত বিধিবিধান পরিপন্থী কোন কাজ করলে তার বিরুদ্ধে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আনুষ্ঠানিক ভাবে গৃহীত পদক্ষেপ বা কার্যক্রমকেই বিভাগীয় মামলা বা ডিপার্টমেন্টাল প্রসেডিং বলে।

সহজ অর্থে কোন অফিসের কর্মকর্তা বা কর্মচারী কর্তৃক অফিস শৃংখলার পরিপন্থী কোন কাজ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্ৰহনের জন্য যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় তাই বিভাগীয় মামলা। প্রকৃতপক্ষে বিভাগীয় মামলা প্রচলিত আদালতে দায়েরকৃত বা চলমান কোন মামলা নয়।

বিভাগীয় মামলার ভিত্তি

সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ এর ৩১ ও ৪২ ধারা এবং সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিভাগীয় মামলা পরিচালনার ক্ষমতা প্রদান করেছে।

কোথায় বিভাগীয় মামলা দায়ের করতে হবে

কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী যেই অফিস/দপ্তর/প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিয়োগকৃত সাধারণত সেই কর্তৃপক্ষ বা অফিসেই তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়।

সাময়িক বরখাস্ত

সাময়িক বরখাস্ত অর্থ হচ্ছে কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে সাময়িক ভাবে তার দায়িত্ব পালন বা ক্ষমতা ও‌ কর্তৃত্ব প্রয়োগ হতে বিরত রাখা এবং কিছু সুবিধা হতে বঞ্চিত করা।

সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ এর ৩৯ ধারা এবং সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর ১২ বিধি মোতাবেক সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সাময়িক বরখাস্ত বাধ্যতামূলক নয় বরং কর্তৃপক্ষের ইচ্ছাধীন।

বিভাগীয় মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন

কোন বিভাগীয় মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ প্রদান করা হয় শোকজ নোটিশ প্রদানের মাধ্যমে। অর্থাৎ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে শোকজ নোটিশের মাধ্যমে তার জবাব প্রদানের সুযোগ প্রদান করা হয়।

বিভাগীয় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বা কমিটি

কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনবোধে তদন্ত কমিটি গঠন করে থাকেন। তদন্ত কমিটির সদস্য সংখ্যা সাধারণত বিজোড় সংখ্যার হয় এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির নিম্ন পদের কাউকে তদন্ত কমিটিতে রাখা হয়না।

বিভাগীয় মামলার রায় বা শাস্তি

অভিযুক্ত ব্যক্তি কর্তৃক আত্মপক্ষ সমর্থন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও অন্যান্য পারস্পরিক বিষয় বিবেচনা করে বিভাগীয় মামলার আদেশ নির্ধারিত হয়। তদন্তে যথেষ্ট স্বাক্ষ্য প্রমান না থাকলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অভিযোগ হতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।

অন্য দিকে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাধারণত দুই ধরনের শাস্তি প্রদান করা হয়। যথা; লঘুদন্ড। অপরাধের গুরুত্ব অনুসারে অনেক সময় লঘুদন্ড প্রদান করা হয়। লঘুদন্ডের প্রকারভেদ নিম্নরূপ-

১। তিরষ্কার
২। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বেতন বৃদ্ধি বা পদোন্নতি বন্ধ।
৩। প্রযোজ্য বিধি মোতাবেক আর্থিক ক্ষতিপূরণ আদায়।
৪। বেতন‌ গ্ৰেডের নিন্মতর ধাপে অবনমিতকরণ।

অপরাধের গুরুত্ব অনুসারে গুরুদণ্ডেও দণ্ডিত করা হয়। গুরুদন্ডের প্রকারভেদ নিম্নরূপ-

১। নিচের পদে বা নিন্মবেতন গ্ৰেডে অবনমিতকরণ।
২। বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান।
৩। চাকরি হতে অপসারণ।
৪। চাকরি হতে বরখাস্তকরণ।

অপসারণ ও বরখাস্তের মধ্যে পার্থক্য

কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে চাকরি হতে অপসারণ করলে তিনি পরবর্তীতে অন্য সরকারি চাকরিতে নিয়োগ লাভের সুযোগ পাবেন কিন্তু বরখাস্ত করা হলে তিনি পরবর্তীতে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ লাভের সুযোগ পাবেন না।

আদেশের বিরুদ্ধে রিভিউ বা আপিল

কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে বিভাগীয় মামলায় শাস্তি প্রদান করা হলে তিনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দন্ড প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের নিকট শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করার সুযোগ পাবেন।

লেখক: উপ-ব্যবস্থাপক (আইন), বিজিডিসিএল, কুমিল্লা। ই-মেইল: kamallawru@gmail.com