ধর্মীয় বিষয়ে স্পর্শকাতর মন্তব্য: শেরপুরের জেলা জজকে প্রত্যাহার
বিচারক (প্রতীকী ছবি)

প্রতি বছর ৫০০ বিচারক নিয়োগের সুপারিশ

সরকারের নানা পদক্ষেপের পরও কাঙ্ক্ষিত হারে মামলাজট কমছে না। এজন্য বিচারক স্বল্পতাকে প্রধানত দায়ী করা হয়েছে আইন কমিশনের প্রতিবেদনে। ওই প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ৩ হাজার ১৮৬ জনের বিপরীতে যেখানে একজন বিচারক, সেখানে বাংলাদেশে ৯৪ হাজার ৪৪৪ জনের বিপরীতে একজন বিচারক। বিচারক স্বল্পতা নিরসনে ৫ হাজার বিচারক নিয়োগ দেওয়া জরুরি। বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে প্রতি বছর অন্তত ৫০০ বিচারক নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

সম্প্রতি জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রতিবেদনটি নিয়ে আলোচনা শেষে সুপারিশ কার্যকর করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

সংসদীয় কমিটির সভাপতি মো. শহীদুজ্জামান সরকারের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে কমিটির সদস্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক, মোস্তাফিজুর রহমান, মো. আব্দুল মজিদ খান, গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, সেলিম আলতাফ জর্জ এবং খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন অংশগ্রহণ করেন।

আইন কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের উচ্চ আদালতসহ জেলা আদালতগুলোতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল ৪১ লাখ ৯৬ হাজার ৬০৩টি। এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ১৯ হাজার ১২৮টি, হাইকোর্টে ৫ লাখ ১৬ হাজার ৬৭৪টি এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতসহ অন্যান্য আদালতে ৩৬ লাখ ৬০ হাজার একটি।

এই সব মামলা বিচারের জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা ৮ জন (প্রধান বিচারপতি এবং অন্য এক বিচারপতি অবসরে যাওয়ায় বর্তমানে ৬ জন আছেন) ও হাইকোর্টে বিচারপতির সংখ্যা ৯০ জন। আপিল বিভাগে বিচারের জন্য বিচারকপ্রতি মামলা রয়েছে দুই হাজার ৪৯১টি ও হাইকোর্টে বিচারকপ্রতি মামলা রয়েছে ৫ হাজার ৭৪১টি।

জেলা ও দায়রা জজ আদালতসহ অন্যান্য আদালতে বর্তমানে বিচারকের সংখ্যা দুই হাজার জন। এর মধ্যে ডেপুটেশনে রয়েছেন আনুমানিক ২০০ জন বিচারক। সেই হিসেবে জেলা বিচার বিভাগে বিচারকপ্রতি মামলা আছে দুই হাজার ৩০টি। আর ১৭ কোটি মানুষের দেশে বিচারকের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে ৯৪ হাজার ৪৪৪ জনের বিপরীতে একজন বিচারক রয়েছেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে মামলাজটের একমাত্র কারণ না হলেও প্রধান কারণ বিচারকের সংখ্যার অপ্রতুলতা। তার সঙ্গে জেলা পর্যায়ে যোগ হয়েছে এজলাসের সংকট। কিছু কিছু নতুন আদালত ভবন নির্মাণ শুরু হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল।

ফলে এজলাস ও বিচারক সংকটের কারণে প্রায় ৪২ লাখ মামলার জট দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব নয়। এরপর মামলা নিষ্পত্তির হার ক্রমাগত বৃদ্ধির সঙ্গে প্রতিদিনই নতুন নতুন মামলা দায়ের হচ্ছে। যা জট বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই অস্বাভাবিক মামলাজট নিরসনে ত্বরিত পদক্ষেপ না নিলে বিচারব্যবস্থার ওপর সাধারণ মানুষ আস্থা হারাবে, এমনকি বিচারব্যবস্থা ভেঙে পড়বার উপক্রম হবে।

এ বিষয়ে সংসদীয় কমিটির সভাপতি মো. শহীদুজ্জামান সরকার জানান, বিচারক স্বল্পতাসহ নানা কারণে মামলার বিচারে স্বাভাবিকভাবেই দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হয়। যা ন্যায়বিচারকে ব্যাহত করছে। বিশেষ করে আইনের অপপ্রয়োগের মাধ্যমে অধিকাংশ আদালতে ভিত্তিহীন ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের ঘটনা বাড়ছে। যে কারণে অনেক নিরপরাধ ব্যক্তি বিনা কারণে কারাভোগসহ অহেতুক হয়রানি ও বহুমুখী ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।

আইন কমিশন এ সংক্রান্ত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছে এবং সমাধানে কিছু সুপারিশও করেছে। কমিটির পক্ষ থেকে ওই সুপারিশগুলো কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে বলেও জানান শহীদুজ্জামান সরকার।