চলমান ক্রিকেট বিশ্বকাপে খেলার সময় কনডমের ‘অপ্রীতিকর’ বিজ্ঞাপন প্রচার না করতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টি-স্পোর্টস ও গাজী টিভিকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির ১০ জন সদস্যের পক্ষে আজ বুধবার (১৮ অক্টোবর) অ্যাডভোকেট আল মামুন রাসেল এই লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করেন।
টি-স্পোর্টসের সিইও ইশতিয়াক সাদিক এবং জিটিভির ম্যানেজিং ডিরেক্টর আমান আশরাফ ফায়েজ বরাবর এ নোটিশ পাঠানো হয়।
নোটিশে বলা হয়, বাংলাদেশে ক্রিকেট একটি খেলা না, তার থেকেও অনেক বেশি কিছু। বর্তমানে ক্রিকেট খেলা বাংলাদেশে ১৬ কোটি মানুষের রক্তে মিশে যাওয়া একটি নেশা। তাইতো প্রেস কনফারেন্সে সাকিব আল হাসান একদিন বলেছিলেন পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের থেকেও আমাদের দেশে ক্রিকেট বেশি জনপ্রিয়।
বাংলাদেশ ক্রিকেট খেললে মাঠে খেলে ১১ জন, কিন্তু তাদের পেছনে তাদের সাহস দেওয়ার জন্য ১৭ কোটি মানুষ থাকে। সবার চাওয়া একটাই, জিতবে আমাদের বাংলাদেশ। এই দেশে এই ক্রিকেট খেলাটা যখন এতই জনপ্রিয়, তখন এই খেলার ইতিহাস না জানলে তো হবে না।
বর্তমানে সে ক্রিকেটের বিশ্বসেরা আসর বিশ্বকাপ চলছে। মাঠে ১১ জন খেললেও ১৭ কোটি মানুষ বিভিন্ন ভাবে এ খেলা দেখে থাকে, যার প্রধান মাধ্যম হলো আপনারা নোটিশ গ্রহীতাদের প্রচারিত টিভি চ্যানেল, যেখানে বাংলাদেশের দুই তৃতীয়াংশ তরুণ-তরুণী ঘরে/বাহিরে বন্ধুরা অথবা পরিবারের সদস্যরা মিলে খেলা উপভোগ করে।
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, খেলার সময় প্রচারিত কিছু অপ্রীতিকর বিজ্ঞাপন আমাদের পরিবারসহ খেলা দেখায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবারসহ অথবা অফিস কর্মী বা ছোট-বড় সকল বয়সের খেলাপ্রেমীরা মিলে খেলা দেখছি অথবা বিশেষ করে বাংলাদেশের খেলা বা বিশ্বকাপ খেলা দেখার জন্য খেলাপ্রেমীরা স্কুল মাঠে বা যেকোন খোলা ময়দানে বড় প্রজেক্টরে খেলা উপভোগ করি।
কিন্তু হঠাৎ কনডমের বিজ্ঞাপন, যেখানে দেশি-বিদেশি অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অশালীন শরীর সমাচার। যা আমাদের চরম ভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়, যা খুবই দুঃখজনক ও আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য হুমকি স্বরূপ।
এতে আরও বলা হয়, আপনাদের ‘জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ২০১৪’ নামের একটি নীতিমালা অনুযায়ী সকল প্রকার টেলিভিশন সম্প্রচার পরিচালনা করতে হয়। যার চতুর্থ অধ্যায়ে বিজ্ঞাপন সম্প্রচার বিষয়ে বলা আছে। এখানে বলা হয়েছে—
- ৪.২.৮ বিজ্ঞাপনে পরিবেশবান্ধব নয় এমন দৃশ্য প্রচার পরিহার করতে হবে
- ৪.৩.৩ কিশোর বা যুব সমাজ অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয় হয় এবং শ্রমের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনো ধারণাকে গ্রহণ করা যাবে না
- ৪.৩.৫ অংশগ্রহণকারী মডেলদের পোশাক-পরিচ্ছদ শালীনতাপূর্ণ হতে হবে
- ৪.৪.৫ বিজ্ঞাপনে ধর্ষণ, ব্যভিচার, অশ্লীল ছবি বা চলচ্চিত্র, নির্যাতন, স্নায়ুর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে এরূপ দৃশ্য, যেমন: ফাঁসি, শ্বাসরোধ, আত্মহত্যা, অঙ্গবিচ্ছেদ ইত্যাদি, নারী, শিশু-কিশোর, বৃদ্ধ বা অসুস্থ ব্যক্তির প্রতি সহিংসতা বা তাদের প্রতি শারীরিক, মানসিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করে এ ধরনের দৃশ্য বিজ্ঞাপনে প্রদর্শন পরিহার করতে হবে;
- ৪.৪.৬ প্রয়োজনানুগ সংশ্লিষ্টতা ব্যতীত বিজ্ঞাপনে নারীর অহেতুক ও দৃষ্টিকটু উপস্থাপন পরিহার করতে হবে।
উক্ত বিজ্ঞাপনগুলো বাতিলের মাধ্যমে ক্রীড়াপ্রেমিদের ইচ্ছাপূরণে আপনাকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা যাচ্ছে। অন্যথায় উপরোল্লিখিত আইন ভঙ্গ ও সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে আপনি এবং আপনার প্রতিষ্ঠানকে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা গেল। অন্যথায় আমরা আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হব।