এ আর রহমানের সুর এবং কারার ঐ লৌহকপাট বিতর্ক
অ্যাডভোকেট তানজিম আল ইসলাম

এ আর রহমানের সুর এবং কারার ঐ লৌহকপাট বিতর্ক

তানজিম আল ইসলাম: কপিরাইট আইন অনুযায়ী কাজী নজরুল ইসলামের যেকোন সৃষ্টিকর্ম যেমন গান কবিতা সুর এসবের মালিক এখন তাঁর সকল উত্তরাধিকারিরা। কারণ আইন অনুযায়ী প্রণেতা বা কপিরাইট মালিকের মৃত্যুর পর ৬০ বছর পর্যন্ত তার উত্তরাধিকারীরা এই সৃষ্টিকর্মের মালিকানা থাকবে। ৬০ বছর পার হলে সেগুলো পাবলিক ডোমেইন হবে।

বলে রাখা ভালো যে এই মেধাস্বত্ত কিন্ত সম্পত্তি অর্থাৎ যেকোন স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির মর্যাদা সম্পন্ন। ধরুন বাবা মারা গেলে তার রেখে যাওয়া ওয়ারিশরা যেভাবে সম্পত্তি ভোগ করে ঠিক সেইভাবে কপিরাইট আইন অনুযায়ী ৬০ বছর পর্যন্ত সম্পত্তির ভোগ দখলে থাকবে। তবে একটি পার্থক্য হচ্ছে জমিজমা যেমন ভাগ বাটোয়ারা হয় সৃষ্টিকর্ম তেমন ভাগ বাটোয়ারা হয়না, এখানে সম্মলিত ভোগ দখল থাকে তাও ৬০ বছর পর্যন্ত। ৬০ বছর পর সেগুলো জনসাধারন ইচ্ছেমাফিক ব্যবহার করতে পারে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এ আর রহমানের সুর করা গানটির জন্য কাজী পরিবারের যে ২ জন সদস্যের সাথে চুক্তির কথা শোনা যাচ্ছে তা যদি সত্য হয় তাহলে এই চুক্তি টিকবে কিনা? এখন দেখা যাক এই কথিত চুক্তির বৈধতা কি? যেহেতু আইন অনুযায়ী কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টিকর্মের মালিকানা তার বৈধ ওয়ারিশগন এবং তা সম্মিলিত ভাবে তাই কাজী নজরুলের যেকোন সৃষ্টিকর্ম কাউকে ব্যবহারের অনুমতির চুক্তি করলে তা হতে হবে সম্মিলিত অনুমতিতে।

এর মানে যেকোন একজনের বা ২ জনের অনুমতিতে হবেনা। যদি চুক্তি হয় তাহলে সকল ওয়ারিশদের সাথে করতে হবে। আর একজন করলেও তাদেরকে অন্যান্য ওয়ারিশরা পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে হবে। তাই আংশিক ওয়ারিশগণের চুক্তি ভয়েড অব এনিশিও বা গোড়া থেকে বাতিল বলেই গণ্য হবে। এখন আরেকটি প্রশ্ন থেকে যায় তা হল ওয়ারিশরা অন্যকে ব্যবহারের সম্মতি দিলেও সেখানে সৃষ্টিকর্মের কোন পরিবর্তন করতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে আলোচনা আরেকদিন।

লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট