ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকার মামলা
আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকার মামলা

গাজায় ‘গণহত্যা’ চালানোর অভিযোগে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) মামলা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তিন মাস ধরে ইসরায়েলের চালানো বোমা হামলায় সাড়ে ২১ হাজার মানুষ নিহত ও বিপুল ক্ষয়ক্ষতির পর এমন অভিযোগ করল দেশটি। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে দ্রুত শুনানির অনুরোধ জানানো হয়েছে। খবর আল জাজিরা।

আদালতের কাছে আবেদনে দক্ষিণ আফ্রিকা দাবি করে, ইসরায়েলের কার্যক্রম গণহত্যামূলক। কারণ তাদের ধ্বংসযজ্ঞ ফিলিস্তিনি নাগরিকদের জাতিগত ও নৃতাত্ত্বিক ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে গাজায় ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা, তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা এবং সামগ্রিকভাবে জীবনকে বিপর্যস্ত করা। তবে জাতিসংঘের আদালতে মামলাটি প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) জাতিসংঘের দেওয়ানি আদালত, যা দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যমান বিরোধের বিচার করে। এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) থেকে আলাদা। আইসিসি মূলত যুদ্ধাপরাধের জন্য ব্যক্তিদের বিচার করে। জাতিসংঘের সদস্য হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইসরায়েল উভয় দেশ এ আদালতের আওতাধীন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা গাজা ও পশ্চিম তীরে চালানো ইসরায়েলের কার্যক্রমকে তার দেশে ১৯৯৪ সালে অবসান হওয়া বর্ণবাদী শাসন ও জাতিগত বিভাজনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। বেশকিছু মানবাধিকার সংস্থাও ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের নীতিকে বর্ণবাদের শামিল বলে আখ্যা দিয়েছেন।

অভিযোগনামায় দক্ষিণ আফ্রিকার ভাষ্য, গত ৭ অক্টোবরের পর ইসরায়েলের কার্যক্রম জাতিসংঘের গণহত্যা কনভেনশনের পরিপন্থী। এ অভিযোগের জন্য দ্রুত শুনানির আহ্বান জানায় দেশটি। এছাড়া ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার নিশ্চিত করা ও অপূরণীয় ক্ষতি থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আদালতের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা বিভাগ (ডিআইআরসিও) থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, গাজায় বেসামরিক মানুষের ওপর চালানো নির্যাতন নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা উদ্বিগ্ন। দক্ষিণ আফ্রিকা সার্বক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিরতি ও আলোচনার তাগিদ দিয়ে আসছে। জোর দিয়ে আসছে সহিংসতা বন্ধের জন্য।

ইসরায়েল দফায় দফায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে আসছে। তাদের দাবি, হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার আগে তারা যুদ্ধবিরতি টানবে না। গত ৭ অক্টোবর হামাস আক্রমণ করে ইসরায়েলে। এতে সেখানকার ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয়। এদিকে হামাসের দাবি, তাদের আক্রমণ ছিল ১৬ বছর ধরে চলমান গাজা অবরোধ ও দখলদারত্ব সম্প্রসারণের জবাব। ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ প্রকল্প ফিলিস্তিন রাষ্ট্র বাস্তবায়নের জন্য বড় ধরনের হুমকি।

আল জাজিরায় প্রকাশিত যুদ্ধের সর্বশেষ ফলাফল অনুসারে, লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি গৃহহীন হয়েছে। বাধ্য হয়েছে আরো দক্ষিণে সরে যেতে। অন্যদিকে ইসরায়েল তাদের স্থল ও আকাশপথে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

গত তিন মাসে ইসরায়েলের কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী নিন্দা কুড়িয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার পদক্ষেপ তার সর্বশেষ বহিঃপ্রকাশ। প্রথম থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকা ইসরায়েলের সমালোচক। গত মাসে দেশটি ইসরায়েলের দূতাবাস বন্ধ করে দেয়া ও সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক বন্ধ করে দেয়ার পক্ষে ভোট দেয়।