রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এক ব্যবসায়ীর বাসায় রাতে অভিযানে যান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজন উপপরিদর্শকসহ (এসআই) কয়েকজন সদস্য। ওই বাসায় মাদক আছে দাবি করে তল্লাশি শুরু করেন তাঁরা। প্রায় দেড় ঘণ্টা তল্লাশি করে তাঁরা কিছু পাননি।
তবে বাসার একটি আলমারিতে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা দেখতে পান তাঁরা। তখন ওই ব্যবসায়ী ও তাঁর স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসতে চান। একপর্যায়ে তাঁরা ২০ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে আলমারিতে রাখা টাকাগুলো নিয়ে চলে আসেন। এরপরও মাদক মামলার হুমকি দিয়ে ওই ব্যবসায়ীরা কাছে তাঁরা টাকা দাবি করছিলেন।
এই অভিযোগ জানিয়ে সম্প্রতি ঢাকার ভাটারা থানায় একটি মামলা করেছেন ব্যবসায়ী ববি বিন ডিয়াজ। মামলায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এসআই শাহ আলম, কনস্টেবল বাবর ও ফয়জুল ইসলাম নামের একজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে।
আসামিদের মধ্যে ফয়জুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে ভাটারা থানা–পুলিশ। এক দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) রাজন কুমার সাহা বলেন, মিথ্যা মামলা দায়েরের হুমকি দিয়ে ব্যবসায়ীর বাসা থেকে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনাটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।
মামলার তথ্যমতে, বাসায় তল্লাশি চালিয়ে টাকা নেওয়ার ঘটনাটি গত ২৯ ডিসেম্বরের। ওই দিন রাত আটটার দিকে এসআই শাহ আলমসহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাতজন সদস্য তাঁর বাসায় যান বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ববি বিন ডিয়াজ।
তাঁর অভিযোগ, ওই দিন টাকা নিয়ে আসার পর ২ জানুয়ারি আবার তাঁর কাছে আরও ১৬ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন আসামিরা।
ববি বিন ডিয়াজ বলেন, তিনি ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। মাদক মামলায় তাঁকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে এসআই শাহ আলমসহ অন্যরা সেদিন তাঁর বাসা থেকে টাকা নিয়ে যান। পরে মুঠোফোনে তাঁরা আরও টাকা চাইছিলেন। সে কারণে বাধ্য হয়ে তিনি থানায় মামলা করেন।
ঘটনাটি নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরেও একটি লিখিত অভিযোগ দেন ওই ব্যবসায়ী। অভিযোগটি তদন্ত করছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (গোয়েন্দা) কাজী আল আমিন।
তিনি বলেন, গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আজিজুল ইসলাম জানিয়েছেন।
এসআই শাহ আলম বর্তমানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের খিলগাঁও অঞ্চলে কর্মরত আছেন। অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উপপরিচালক মো. মাসুদ হোসেন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসআই শাহ আলম স্বীকার করেছেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সেদিন তিনিসহ অধিদপ্তরের সাতজন সদস্য ব্যবসায়ী ববি ডিয়াজের বাসায় গিয়েছিলেন। বাসায় মাদক পাওয়া যায়নি। তবে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন তিনি।
এসআই শাহ আলম ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে ভাটারা থানায় করা মামলাটি তদন্ত করছেন ওই থানার এসআই শামীম হোসেন। তিনি জানান, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি ব্যবহার করে এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ফয়জুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ফয়জুল ইসলাম নিজেকে ব্যবসায়ী দাবি করলেও তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলার তথ্য পাওয়া গেছে বলে পুলিশের বাড্ডা জোনের এসি রাজন কুমার সাহা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, শাহ আলমসহ অপর আসামিদের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। ওই ব্যবসায়ীর বাসার আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। ঘটনায় জড়িত প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করা হবে।