২০০৯ সালের পিলখানা বিদ্রোহ সংক্রান্ত বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলায় কারাগারে আটক ৪০ বিডিআর জওয়ানকে জামিন দিয়েছেন আদালত।
ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক ইব্রাহিম মিয়া গত ৮ মে এ আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী শাহাদাৎ হোসেন।
রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর মো. বোরহান উদ্দিন জানান, জামিন পাওয়া আসামিদের অনেকেই সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন— এমনকি কারও কারও বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায়ও ছিল। তবে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র ও তথ্য যাচাই করে আদালত ৪০ জনকে জামিন দেন। বাকি আসামিদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে।
জামিন পাওয়া জওয়ানদের মধ্যে রয়েছেন
রেজাউল করিম, শাজাহান, রফিকুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, মো. শামীম, ওয়ালি উল্লাহ, হাবিবুর রহমান, তারিকুল ইসলাম, বনি আমিন চৌধুরী, মো. এ বারিক, ইমতিয়াজ আহমেদ নবীন, মোয়াজ্জেম হোসেন, মিজানুর রহমান, সিদ্দিকুর জামান জোয়ার্দার ওরফে লিটন, মো. এ মোনাফ, আকিদুল ইসলাম, খলিলুর রহমান, কৌতুক কুমার সরকার, মো. সালাউদ্দিন, সোহরাব হোসেন, কামাল হোসেন, মো. ইশহাক, দারুল ইসলাম, শ্রী সুমন চক্রবর্তী, আবু সাঈদ, সেজান মাহমুদ, মো. সেলিম, বিধান কুমার সাহা, মাসুম হাসান, ফিরোজ মিয়া, শ্রী তাপস কুমার বিশ্বাস, কামাল মিয়া, নূর-এ-আলম মিয়া, এনামুল হক, শফিকুল ইসলাম, রবিউল আলম ও আল আমিন।
এর আগে, গত ১৯ জানুয়ারি একই আদালত ১৭৮ জন বিডিআর সদস্যকে জামিন দেন। তারা ২৩ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জ ও কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান।
পিলখানা হত্যাকাণ্ড ও মামলা পটভূমি
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তরে সংঘটিত বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন প্রাণ হারান। বিদ্রোহের ঘটনায় দুটি মামলা হয়— হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে।
হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন আদালত। তাতে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।
হাইকোর্ট ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের রায় ঘোষণা করেন। তাতে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে, ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন এবং ২২৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। ২৮৩ জন খালাস পান। বিচার চলাকালে ৫৪ জন আসামি মারা যান।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষ ৮৩ জনের খালাস ও সাজা হ্রাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে। সবগুলো আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
পুনঃতদন্তের দাবি ও কমিশন গঠন
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা পুনঃতদন্তের দাবি উঠেছে। শহীদ পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে গত ১৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ জানানো হয়।
পরবর্তীতে, গত ২৪ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমানকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে সরকার। কমিশনকে ৯০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।