বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা : প্রাসঙ্গিকতা ও গুরুত্ব
নিশাত সুলতানা

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা : প্রাসঙ্গিকতা ও গুরুত্ব

নিশাত সুলতানা : বাংলাদেশ এক অভূতপূর্ব ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এই ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের জন্য সৌভাগ্যের বিষয় হল ছাত্রজনতার সমর্থনে বর্তমান মাননীয় প্রধান বিচারপতির মত একজন মেধাবী, জ্ঞানী, প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্বকে আমরা বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি হিসেবে পেয়েছি। সঙ্গত কারণে একটি স্বাধীন, শক্তিশালী বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষের মনে আশাবাদের সৃষ্টি হয়েছে।

একই সাথে ২০২৪ সালে জুলাইআগস্ট বিপ্লবের পর একটি ঐতিহাসিক নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটি গঠিত হয়েছে। উক্ত নির্বাচিত নির্বাহী কমিটি বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতির অগ্রাধিকার ভিত্তিক সংস্কার বিষয়সমূহ বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনে প্রতিবেদন আকারে দাখিল করেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বিচার বিভাগে যে মহাপ্রলয় ঘটেছে এবং বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে তা দ্রুত দূর করে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা এবং বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে একটি স্বাধীন, শক্তিশালী, আধুনিক, দক্ষ ও প্রগতিশীল বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যক।

বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ এ প্রদত্ত অভিভাষণে যে সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দৃষ্টিপাত করেছেন সে সকল বিষয় সমূহকে দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণের নিমিত্তে আমরা মাননীয় প্রধান বিচারপতির সহযোদ্ধা হিসেবে কাজ করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশনের নব নির্বাচিত নির্বাহী কমিটি এবং আমাদের সহযোগী জেলা আইনজীবী সমিতি, কক্সবাজার-এর যৌথ উদ্যোগে বুধবার (১৪ মে) ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা : প্রাসঙ্গিকতা ও গুরুত্ব’ শীর্ষক আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়।

আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনসহ অন্যান্য কমিশন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের অধ্যাপক জনাব আলী রিয়াজ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ছাড়া প্রকৃত গণতন্ত্র সম্ভব নয় মর্মে মন্তব্য করেন। প্রকৃতপক্ষে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা ছাড়া বিচার বিভাগে প্রকৃত স্বাধীনতা সম্ভব নয়। অন্তবর্তী সরকার কর্তৃক গৃহীত রাষ্ট্র সংস্কারকে স্থায়ী ও অর্থবহ করে তুলতে স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার অপরিহার্যতা উল্লেখ করে মাননীয় প্রধান বিচারপতি জনাব ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ মহোদয় সম্প্রতি এক বক্তব্য উল্লেখ করেছেন, “কোন সেক্টরেই সংস্কার কার্যক্রম স্থায়িত্ব পাবে না, যদি বিচার বিভাগের সংস্কার না ঘটে।” সত্যিকার অর্থে, বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণের স্বার্থে মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন একান্ত আবশ্যক। এজন্যই পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য। আজকে আমরা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার তাৎপর্য, বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার বর্তমান বাস্তবতা এবং এর বাস্তবায়নে করণীয় নিয়ে আলোচনা করব।

১) পৃথক সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা

মাননীয় প্রধান বিচারপতি এর অভিভাষণে উল্লেখিত সুপ্রীম কোর্ট পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার বিষয় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকল্পে সংস্কারের প্রথম ধাপ। পত্রপত্রিকার মাধ্যমে পৃথক সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিভিন্ন মহলের নেতিবাচক মনোভাব আমরা জানতে পেরেছি। বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণের স্বার্থে এবং বিরাজমান দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা বিলোপের স্বার্থে পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা আবশ্যক।

বর্তমানে বিদ্যমান ‘সচিবালয় নির্দেশমালা ২০১৪’ এর আদলে বিচার বিভাগের সাথে সঙ্গতি রেখে ‘সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় নির্দেশমালা ২০২৪’ প্রণয়ন করতে হবে। সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় নির্দেশমালায় (১) সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয়ের সংগঠন, কর্মবন্টন ও কর্মপরিকল্পনা, (২) অফিস পদ্ধতি, (৩) কার্য নিষ্পত্তি, (৪) সভা সমূহ, (৫) সাধারণ বিষয়াবলী (আইন, প্রবিধি, চুক্তি, দলিল ইত্যাদি প্রণয়ন, সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়ন, নিয়োগ বিধি তৈরী, শূণ্য পদের ছাড়পত্র প্রদান, উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন, পেশ ও অনুমোদন, বাজেট প্রণয়ন, ব্যয়, পরিদর্শন ইত্যাদি), (৬) নিরাপত্তা, (৭) নাগরিক সেবা ইত্যাদি অর্ন্তভূক্ত করতে হবে।

বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে দ্বৈত শাসন প্রথা (সুপ্রিম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয়) বিলুপ্ত করতে হবে। এজন্য ২০১৭ সালে প্রণীত শৃংখলা বিধিসহ বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস (শৃংখলা) বিধিমালা ২০০৭ সংশোধন করতে হবে। অধস্তন আদালতের বিচারকদের পদায়ন, বদলি, পদোন্নতি, ছুটি, শৃংখলা ইত্যাদির ক্ষেত্রে সরকারের সম্পৃক্ততা পুরোপুরি বিলোপ করতে হবে। অধঃস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি সুপ্রিম কোর্টের নিকট ন্যস্ত করতে হবে। সরকারের নির্বাহী বিভাগ তথা আইন মন্ত্রণালয়ের সাথে বিচার বিভাগের দাপ্তরিক কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বিলুপ্ত
করতে হবে। পরিবর্তন বা সংস্কার এমনভাবে করতে হবে যাতে বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ ও চাকুরী সংক্রান্ত বিষয়াদি আইন মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্তের জন্য পাঠানোর কোন ব্যবস্থা বিদ্যমান না থাকে।

বর্তমানে বিচারধীন ৪২ লক্ষ মামলার বিপরীতে মাত্র ২,০০০ (দুই হাজার) বিচারক কর্মরত রয়েছে। মামলার তুলনায় বিচারকের সংখ্যার অপ্রতুলতা মামলা জটের অন্যতম কারণ। কিন্তু, বিচার বিভাগ চাইলেই নতুন কোনো পদ সৃজন করতে পারে না। একই সাথে সহায়ক জনবল নিয়োগ করতে পারে না। আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন সলিসিটর উইং, আইন ও বিচার বিভাগ (বিচারকদের পদায়ন, বদলী, পদোন্নতি, বাজেট ব্যতীত) থাকবে এবং পৃথক সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয়ের জন্য নতুন সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি করে উক্ত কাঠামো অনুসারে নতুন জনবল নিয়োগ করতে হবে। অধস্তন আদালতের উপর সুপ্রীম কোর্টের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব সুচারুরূপে সম্পাদনের জন্য একচ্ছত্রভাবে প্রধান বিচারপতি কেন্দ্রিক প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

২) বিচার বিভাগীয় পৃথক বাজেট

বিচার বিভাগের সক্ষমতাকে পরিপূর্ণ ভাবে কার্যকর করতে হলে বাজেট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিচার বিভাগ বর্তমানে তার বাজেটের জন্য পুরোপুরি নির্বাহী বিভাগের উপরে নির্ভরশীল। নির্বাহী বিভাগ তাদের মর্জি মতো বিচার বিভাগকে বাজেট বরাদ্দ দিয়ে থাকে। বাজেট প্রাপ্তির বিষয়ে নির্বাহী বিভাগের ইচ্ছার বাইরে বিচার বিভাগ কিছুই করতে পারে না। বিচার বিভাগের বিদ্যমান সমস্যা, অসুবিধা, সংকট কিছুই নির্বাহী বিভাগ বুঝতে চায়না এবং তাদের প্রণীত বাজেটে বিচার বিভাগের বিভাগের বিদ্যমান সমস্যাগুলো আদৌ এ্যাড্রেস করা হয় না। বলা যায়, বেতন-ভাতা সংশ্লিষ্ট খাত বাদ দিলে আদালতের উন্নয়ন বা অবকাঠামোগত খাতে বাজেট প্রায় দেওয়া হয়না বললেই চলে। বিচার বিভাগের অর্থনৈতিক দুরবস্থা কত অপ্রতুল ও ভয়াবহ তা বিচার বিভাগের কয়েক বছরের বরাদ্দের পরিসংখ্যান দেখলেই পষ্ট বুঝা যায়।

বিচার বিভাগ ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে মোট বাজেটের ০.৪৬ শতাংশ, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ০.৩৯ শতাংশ এবং ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ০.৩২ শতাংশ বাজেট পেয়েছে। অর্থাৎ মোটা দাগে বিচার বিভাগ মোট বাজেটের ০.৩ থেকে ০.৪ শতাংশ বাজেট প্রাপ্ত হয়। বিচার বিভাগের তুলনায় রাষ্ট্রের অনেক ছোট ছোট সেক্টর বা অপেক্ষাকৃত অগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানও অনেক বেশি অর্থ বরাদ্দ পায়। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ২০১৯ সালের এক প্রতিবেদনে আইন ও বিচার বিভাগের চেয়ে মৎস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বাজেট প্রায় আড়াইগুণ বেশি বলে মন্তব্য করেছিল।

কয়েক বছর আগে প্রয়াত সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান এবং আইনজীবী শাহদীন মালিকের একাধিক লেখায় উঠে এসেছে আইন ও বিচার বিভাগের মোট বরাদ্দকৃত বাজেট সরকারি টেলিভিশন বিটিভি’র চেয়েও কম। বিচার বিভাগের সমুদয় বাজেট সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয়ের মাধ্যমে বরাদ্দ প্রদান করতে হবে। বিচার বিভাগের বাজেটের প্রাক্কলন বিচার বিভাগ নিজেই প্রস্তুত করবে এবং উক্ত প্রাক্কলন অনুসারে সরকার বিচার বিভাগের জন্য তহবিল বরাদ্দ দিবে।

ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলার রায়ের নির্দেশনা অনুসারে বিচার বিভাগের বার্ষিক বাজেট প্রণয়নের উপর নির্বাহী বিভাগের কোন রকম কর্তৃত্ব থাকতে পারবে না। বিচার বিভাগের বাজেট হবে আদালত ভিত্তিক। প্রতিটি আদালত ও ট্রাইব্যুনালের জন্য স্বতন্ত্র বাজেট প্রস্তুত করতঃ সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় কর্তৃক তার প্রাক্কলন চূড়ান্ত করতঃ অর্থ বিভাগের নিকট প্রেরণ করবে এবং অর্থ বিভাগ তদানুসারে তহবিল বরাদ্দ প্রদান করবে। বিচার বিভাগের সমুদয় কার্যক্রমকে একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামোতে এনে এটিকে দু’ভাগ করতে হবে। সাচিবিক, নীতি নির্ধারণী ও মৌলিক প্রকৃতির কাজ সমূহ সচিব, সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয়ের মাধ্যমে এবং অপরাপর কার্যক্রমসমূহ সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল এর মাধ্যমে করতে হবে।

বিচার বিভাগের সকল ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়নের জন্য একটি Strategic Plan তৈরি করা অত্যাবশ্যক। উক্ত Strategic Plan এ বিচার বিভাগের বিষয়ভিত্তিক স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনাসমূহ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা সমূহের কোনটি কি উপায়ে বা কি পদ্ধতিতে এবং কোন পরিকল্পনা কোন বিভাগ/দপ্তরের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়িত হবে তার ক্যাটাগরি ভিত্তিক কর্মকৌশল উল্লেখ থাকবে।

প্রস্তাবিত পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অনুবিভাগে এরূপ একটি অধিশাখা থাকবে যেটি স্বতন্ত্রভাবে বিচার বিভাগের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের ডিপিপি/ টিপিপি তৈরি করবে এবং এতদসংক্রান্ত বিষয়ে তারা পরিকল্পনা কমিশনের সাথে ঘনিষ্ট যোগাযোগ রক্ষা করবে। এ অধিশাখাটি শুধু দেশীয় প্রকল্প নয়, বিদেশী সহায়তাপুষ্ট বা দাতাগোষ্ঠির অর্থায়নে বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্প গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা বা দাতাগোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করবে।

বাংলাদেশের বিচার বিভাগের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ভারতীয় দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা যেতে পারে। সমগ্র ভারতে বিচার বিভাগের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য পৃথক একটি ফিন্যান্স কমিশন গঠিত হয়েছে। বেশ কয়েক বছর আগে ১৪ তম ফিন্যান্স কমিশন এ বিষয়ে কাজ করেছে। বর্তমানে ১৫ তম ফিন্যান্স কমিশনের কাজ চলছে। ১৪ তম ফিন্যান্স কমিশন বিচার বিভাগের স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী অবকাঠামো এবং অন্যান্য উন্নয়নে বিস্তারিত সুপারিশমালা (Proposal of Department of Justice to 14th Finance Commission) পেশ করেছে।

ঐ সুপারিশমালা অনুসারে সমগ্র ভারতে বিচার বিভাগের যাবতীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কমিশনের উক্ত সুপারিশমালা বাস্তবায়নে রাজ্য সরকারগুলো যাতে অব্যাহতভাবে বাজেট বরাদ্দ রাখে তার জন্য রাজ্য সরকারগুলোকেও নির্দেশনা দিয়েছে। ভারতের মত আমাদের পরিকল্পনা কমিশন বিচার বিভাগের যাবতীয় অবকাঠামো সমস্যার একটি ম্যাপিং করে প্রয়োজনীয় সুপারিশমালা পেশ করতে পারে। উক্ত সুপারিশ অনুসারে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার আলোকে অবকাঠামোগত সুবিধা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা যায়।

আমাদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা একটি মৌলিক স্তম্ভ, যা সুশাসন, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকাররের নিশ্চয়তার অন্যতম প্রধান বাহক। একটি কার্যকর ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ ছাড়া কোনো রাষ্ট্রে প্রকৃত ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ সহ বাংলাদেশের বিচার বিভাগের বড় বড় অর্জনসমূহ আমরা অন্তবর্তী সরকারের নিকট থেকে পেয়েছি। তাই আমরা আশাবাদী পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগের এখতিয়ার সম্পূর্ণ বিলুপ করে বিচার বিভাগে বিরাজমান দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার অবসান হবে।

লেখক : অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, কক্সবাজার এবং সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশন।