‘সহকারী জজ’ ও ‘সিনিয়র সহকারী জজ’ পদবির নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব বিচারকদের

বিচারকের সঙ্গে অসদাচরণ, সেই আইনজীবীদের সনদ বাতিলের দাবি

ঢাকার বিচারিক আদালতের এজলাসে বিচারককে উদ্দেশ্য করে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, কোর্টরুমের কজলিস্ট ছুঁড়ে ফেলা এবং বিচারকার্য বিঘ্নিত করার ঘটনায় ৫ আইনজীবীর আইনজীবী সনদ বাতিলসহ দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (BJSA)।

রোববার (১৮ মে) এক জরুরি প্রেস বিবৃতিতে এই দাবি জানায় সংগঠনটি। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে দেশের সব জেলা আদালতের বিচারকদের নিয়ে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন।

অভিযুক্ত আইনজীবীরা

ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাঁচ আইনজীবী হলেন—

  • জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ঢাকা বার ইউনিটের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম

  • কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল খালেক মিলন

  • ঢাকা বার ইউনিটের সদস্য অ্যাডভোকেট মো. জাবেদ

  • অ্যাডভোকেট এস. এম. ইলিয়াস হাওলাদার

  • অ্যাডভোকেট মো. জহিরুল

ঘটনাটি কী ঘটেছিল?

বিবৃতিতে জানানো হয়, গত ১৭ মে দুপুরে ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কেরাণীগঞ্জ মডেল থানার জিআর ১৫৬/২৫ মামলার জামিন শুনানির সময় বিচারক আইনানুগভাবে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করলে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বিচারকের প্রতি প্রকাশ্য অবমাননা, চিৎকার, অশ্রাব্য গালিগালাজ ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে লিপ্ত হন।

একপর্যায়ে আইনজীবী খোরশেদ আলম বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন, “ঘটনার তারিখ, সময়, স্থান সব এক—দুইটা মামলা হয় কীভাবে?” অ্যাডভোকেট আব্দুল খালেক মিলন বলেন, “শোনেন স্যার, বলতে তো খারাপ শোনায়, কিন্তু আমাদের কারণেই আপনি আজ এই চেয়ারে বসে আছেন।” অন্য একজন আইনজীবী মো. জাবেদ পুনরায় জামিন শুনানির তারিখ নির্ধারণের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন।

বিচারক তখন আইনানুগভাবে ‘স্পেশাল পুটআপ’ নিয়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিলে আইনজীবীরা আরও উত্তেজিত ও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। তারা বিচারককে উদ্দেশ্য করে রাজনৈতিক ও অশালীন মন্তব্য করেন, এমনকি তাকে “আওয়ামী লীগের দালাল”, “ফ্যাসিবাদের দোসর” বলেও গালিগালাজ করেন। কোর্টরুমে থাকা কজলিস্ট ছুঁড়ে ফেলেন এবং বিচারিক কার্যক্রম ব্যাহত করে দেন, ফলে বিচারক বাধ্য হয়ে এজলাস ত্যাগ করেন।

জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিক্রিয়া

বিবৃতিতে বলা হয়, “এই ঘটনায় শুধু একজন বিচারক নয়, দেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার ভিত্তি কেঁপে উঠেছে। এজলাসে বিচারকের প্রতি হুমকি, অপমান এবং বিচারকার্যে বলপ্রয়োগ সুস্পষ্ট ফৌজদারি অপরাধ—যা দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ধারা ২২৮ ও ৩৫৩ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য।”

এটি বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করার একটি সংগঠিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচেষ্টা বলেও উল্লেখ করে সংগঠনটি জানায়, “বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও শৃঙ্খলার ওপর সরাসরি আঘাত হানা হয়েছে। এটি রাষ্ট্রীয় কাঠামো দুর্বল করার ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়।”

দাবিসমূহ

১. অভিযুক্ত আইনজীবীদের আইনজীবী সনদ অবিলম্বে বাতিল করা
২. ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ
৩. ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দেশের সব আদালতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন

হুঁশিয়ারি

জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন তিন কর্মদিবসের মধ্যে বার কাউন্সিলসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। তা না হলে, দেশের সব আদালতের বিচারকদের নিয়ে সংগঠনটি কঠোর কর্মসূচি গ্রহণে বাধ্য হবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।