চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলার পলাতক আসামি সুকান্ত দত্তকে (৩০) গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) বান্দরবান সদর থানার নীলাচল যৌথ খামার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার সুকান্ত দত্ত চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার পূর্ব বারখাইন এলাকার বাসিন্দা এবং প্রদীপ দত্তের ছেলে।
চট্টগ্রাম র্যাবের সহকারী পরিচালক এ আর এম মোজাফফর হোসেন গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, গত ৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলায় চার্জশিটভুক্ত ১৮ জন পলাতক আসামিকে ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।
নির্দেশনায় বলা হয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হাজির না হলে তাদের অনুপস্থিতিতে বিচার কাজ পরিচালিত হবে। এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়।
আলিফ হত্যা মামলায় পলাতক ও আত্মগোপনে থাকা চার্জশিটভুক্ত ১৮ জন আসামি হলেন- শুভ কান্তি দাস (২৪), ওমকার দাস (২০), বিশাল (২০), লালা প্রকাশ লাল দাস (১৯), বিগলাল প্রকাশ বিকরাল দাস (২০), পরাশ (২২), গণেশ প্রকাশ শ্রী গণেজ (১৯), পপি প্রকাশ জয়দেব দাস (২০), দেব (২৫), জয় (৩০), লালা প্রকাশ লালা দাস মেথর (৪০), সুক দাস (৩৭), ভাজন প্রকাশ ভজন দাস (৩৭), আশিক (৩৪), শহিত (৩০), শিবা দাস (৩০), দ্বীপ দাস (২৯) ও সুকান্ত দত্ত (৩০)।
এর মধ্যে সুকান্ত দত্তকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
আরও পড়ুন : আলিফ হত্যা মামলা: দুই আসামির হুলিয়া–ক্রোকী পরোয়ানা পুনরায় জারির নির্দেশ
গত বছরের ২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় ইসকন থেকে বহিষ্কৃত এবং সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদন চট্টগ্রাম আদালত নামঞ্জুর করেন।
জামিন নামঞ্জুরের পর আদালত চত্বরে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারীরা বিক্ষোভ শুরু করেন।
এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা আদালত প্রাঙ্গণে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। আদালত এলাকায় তখন সাধারণ আইনজীবী, মুসল্লি ও বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষ আতঙ্কে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন।
বিক্ষোভকারীরা আদালত সড়কে রাখা একাধিক মোটরসাইকেল ও যানবাহন ভাঙচুর করে।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই কোতোয়ালি থানার রঙ্গম কনভেনশন হল সড়কে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে একা পেয়ে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারীরা তাকে সড়কে পিটিয়ে ও কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে সে বছরের ২৯ নভেম্বর কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
মামলায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ করা হয় এবং অজ্ঞাত আরও ১৫ থেকে ১৬ জনকে আসামি করা হয়।
পুলিশ মামলাটির তদন্ত শেষে মোট ৩৯ জনকে আসামি করে চলতি বছরের ১ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি অঞ্চল) মাহফুজুর রহমান চট্টগ্রাম আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
পরবর্তীতে গত ২৫ আগস্ট চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দীন অভিযোগপত্রের গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে শুনানি শেষে তা গ্রহণের আদেশ দেন।
আরও পড়ুন : অ্যাড. আলিফ হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের দাবি চট্টগ্রামের আইনজীবীদের
অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন চিন্ময় দাস, চন্দন দাস মেথর, রিপন দাস, রাজীব ভট্টাচার্য, শুভ কান্তি দাস, আমান দাস, বুঞ্জা, রনব, বিধান, বিকাশ, রমিত প্রকাশ দাস, রুমিত দাস, নয়ন দাস, ওমকার দাস, বিশাল, লালা দাস, সামীর, সোহেল দাস, শিব কুমার, বিগলাল, পরাশ, গণেশ, ওম দাস, পপি, অজয়, দেবী চরণ, দেব, জয়, লালা মেথর, দুর্লভ দাস, সুমিত দাস, সনু দাস, সকু দাস, ভাজন, আশিক, শাহিত, শিবা দাস, সুকান্ত দত্ত ও দ্বীপ দাস।
মামলার আসামিদের মধ্যে চন্দন দাস, রিপন দাস ও রাজীব ভট্টাচার্য আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
জবানবন্দিতে তারা উল্লেখ করেন, আইনজীবী আলিফের ঘাড়ে বঁটি দিয়ে দুটি কোপ দেন রিপন দাস এবং কিরিচ দিয়ে কোপ দেন চন্দন দাস।
পরে সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরিহিত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকা আইনজীবী আলিফকে লাঠি, বাটাম, ইট, কিরিচ ও বঁটি দিয়ে ১৫ থেকে ২০ জন মিলে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
আলিফ হত্যা মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী, চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী জানান, মামলার চার্জশিটভুক্ত মোট আসামি ৩৯ জন।
এর মধ্যে ২২ জন গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন এবং এখনো ১৭ জন আসামি পলাতক।
তিনি আরও জানান, পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন : চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির স্মারকলিপি : সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলার আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি
বিজ্ঞপ্তির নির্ধারিত সময় শেষে মামলাটি বিচারের জন্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে দায়রা জজ আদালতে প্রেরণ করা হবে। সেখানে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম শুরু হবে।
গত বছরের ৩১ অক্টোবর চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ আরও ১৮ জনের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা হয়।
ওই মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন ২৬ নভেম্বর তাকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করলে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এরপর চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে বহনকারী প্রিজন ভ্যানের সামনে ও পেছনে তার অনুসারীরা শুয়ে পড়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কারাগারে নিয়ে যায়।
ওই সময় আদালত প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকায় ব্যাপক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যার এক পর্যায়ে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহত হন।

