বিরোধ নিষ্পত্তিতে আইন পেশাজীবীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে মধ্যস্থতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ

বিরোধ নিষ্পত্তির বিকল্প ও কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে মধ্যস্থতা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে আইন পেশাজীবীদের জন্য দুই দিনব্যাপী ‘অ্যাডভান্সড মিডিয়েশন ট্রেনিং’ আয়োজন করেছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ‘ডেভেলপমেন্ট অব মেডিয়েশন অ্যান্ড সিভিল লিটিগেশন প্র্যাকটিসেস ফর এনহ্যান্সমেন্ট অব অ্যাক্সেস টু জাস্টিস প্রোজেক্ট’-এর আওতায় এ প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়।

২১ ও ২২ ডিসেম্বর ঢাকার জুডিশিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (জেএটিআই) আয়োজিত এই প্রশিক্ষণের মূল লক্ষ্য ছিল মধ্যস্থতাকারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বাস্তব মামলায় মধ্যস্থতা দক্ষতার কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা। গত ১ ও ২ আগস্ট অনুষ্ঠিত প্রাথমিক প্রশিক্ষণের ধারাবাহিকতায় এই উন্নত প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যস্থতা সংক্রান্ত জ্ঞান ও প্রয়োগমূলক দক্ষতা আরও সমৃদ্ধ করা হয়।

প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হলো মধ্যস্থতা ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শক্তিশালী করা এবং দক্ষ মধ্যস্থতাকারী তৈরির মাধ্যমে সবার জন্য ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা। এই লক্ষ্য অর্জনের অংশ হিসেবে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে নরসিংদী ও কুমিল্লা এই দুইটি পাইলট জেলায় লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে মামলা-পূর্ব মধ্যস্থতা বা প্রি-কেস মেডিয়েশন ব্যবস্থা চালু করা হয়। এর ফলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিরোধ মামলা দায়েরের আগেই সফলভাবে নিষ্পত্তি হয়েছে।

এছাড়া সাম্প্রতিক আইনি সংশোধনের মাধ্যমে মামলা-পূর্ব মধ্যস্থতায় ‘বিশেষ মধ্যস্থতাকারী’ ভূমিকা যুক্ত করা হয়েছে। এর আওতায় প্রশিক্ষিত আইনজীবী, অভিজ্ঞ আইনজীবী এবং অবসরপ্রাপ্ত বিচারকরা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাচ্ছেন। এই প্রেক্ষাপটে জাইকা পরিচালিত মধ্যস্থতা প্রশিক্ষণ বাংলাদেশে মধ্যস্থতার মানোন্নয়ন এবং বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুনকে এই জুবায়ের রহমান চৌধুরী, যিনি হতে যাচ্ছেন দেশের প্রধান বিচারপতি

প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করেন বিশ্বখ্যাত জাপানি মধ্যস্থতা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মিয়াতাকে মাসাকো। এতে পাইলট জেলার লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা ও আইনজীবীসহ মোট ৪০ জন অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণে প্রথমে মধ্যস্থতার মৌলিক ধারণা পুনরালোচনা করা হয়। পরে লেকচার ও মক মিডিয়েশন অনুশীলনের মাধ্যমে উন্নত ও বাস্তবভিত্তিক দক্ষতা অর্জনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণের বিশেষ দিক ছিল এর ইন্টারেক্টিভ পদ্ধতি, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা বাংলাদেশে প্রচলিত মামলার প্রেক্ষাপটে সরাসরি অনুশীলনের সুযোগ পান।

প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী ৪০ জনই সফলভাবে কর্মসূচি সম্পন্ন করেন। এ উপলক্ষে আয়োজিত সনদ প্রদান অনুষ্ঠানে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব লিয়াকত আলী মোল্লা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে অধ্যাপক মিয়াতাকে মাসাকো প্রশিক্ষণার্থীদের হাতে সনদ তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্যে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব বলেন, “বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতা শুধু একটি আইনি পরিবর্তন নয়, এটি সবার জন্য সহজলভ্য ও কার্যকর বিচার নিশ্চিত করার একটি অঙ্গীকার।”

সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করেন, এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা তাদের পেশাগত জীবনে অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতা কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে পারবেন। এর ফলে দেশে মধ্যস্থতা চর্চা আরও শক্তিশালী হবে এবং বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া দ্রুত, সহজ ও জনগণবান্ধব হয়ে উঠবে।