মামলা তুলে নিতে প্রাণনাশের হুমকি-অপহরণ-বৈদ্যুতিক শক, ম্যাজিস্ট্রেটের সুমোটো নির্দেশে এফআইআর রুজুর আদেশ

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে একটি মামলার বাদীকে মামলা তুলে নিতে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া এবং এক ভ্যানচালককে অপহরণ করে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে নির্যাতনের অভিযোগে তোফাজ্জল হোসেন তোতাসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সুমোটো নির্দেশে নিয়মিত মামলা (এফআইআর) রুজুর আদেশ দেওয়া হয়েছে।

শাহজাদপুর চৌকি আমলী আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মোসলেম উদ্দীন ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ১৫৬(৩) ধারার ক্ষমতাবলে এ আদেশ প্রদান করেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে “জনপদ সংবাদ” নামের একটি অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, শাহজাদপুর উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়নের চর বেতকান্দি গ্রামের ভ্যানচালক মোঃ সোবাহানকে পূর্বে দায়ের করা একটি মামলার জের ধরে অপহরণ ও নির্যাতন করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত ১৯ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে যাত্রী বহনের সময় ঘোরশাল চারমাথা এলাকায় পৌঁছালে সোবাহানকে ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ঘোরশাল রায়বাড়ীর বাঁশঝাড়ে অবস্থিত একটি আস্তানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে মারধর করে তার কাছ থেকে নগদ টাকা ও একটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

আরও পড়ুনখালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সুপ্রিম কোর্টে সাধারণ ছুটি, প্রধান বিচারপতি ও জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের শোক

সংবাদে আরও বলা হয়, উক্ত ঘটনার প্রায় ২২ দিন পর পুনরায় ভ্যানচালক সোবাহানকে আটক করে একই আস্তানায় নিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে গুরুতর নির্যাতন করা হয়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যান।

এ ঘটনায় মামলার বাদী মোঃ সোলাইমান হোসেন মামলা তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে হত্যা করা হবে—এমন হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ঘোরশাল গ্রামের রাসেল (পিতা- ইয়ামিন)সহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জন সরাসরি এসব অপরাধে জড়িত এবং তোফাজ্জল হোসেন তোতার ইঙ্গিত ও প্রভাব খাটিয়ে এসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সংবাদ প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট উপস্থাপিত তথ্য পর্যালোচনা করে আদালত পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেন, উত্থাপিত অভিযোগসমূহ দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ১৪৩, ৩২৩, ৩২৬, ৩৬৫, ৫০৬(২) ও ৩৪ ধারার অধীনে শাস্তিযোগ্য আমলযোগ্য অপরাধের প্রাথমিক উপাদান বহন করে।

আদালত আরও মত দেন, অভিযোগ অনুযায়ী অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকলে তা জনমনে চরম নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না হলে সমাজের আইনশৃঙ্খলা ও শান্তি মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে।

তবে সংবাদ প্রতিবেদনে অভিযুক্ত সকল ব্যক্তির পূর্ণ পরিচয় এবং প্রত্যক্ষ সাক্ষীদের নাম-ঠিকানা সুস্পষ্ট না থাকায় প্রকৃত অপরাধীদের সনাক্তকরণ ও ঘটনার প্রকৃত সত্য উদঘাটনের জন্য প্রাথমিক তদন্ত অপরিহার্য বলে আদালত অভিমত প্রদান করেন।

এমতাবস্থায়, আদালত তোফাজ্জল হোসেন তোতা, রাসেল (পিতা- ইয়ামিন) ও অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে উপ-পরিদর্শক বা তদূর্ধ্ব পর্যায়ের একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে সংবাদদাতা হিসেবে নির্ধারণ করে উক্ত সংবাদকে প্রাথমিক তথ্য হিসেবে গণ্য করে নিয়মিত মামলা রুজু ও তদন্তের নির্দেশ দেন।

একই সঙ্গে আজ ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ বিকাল ৪টা ৩০ মিনিটের মধ্যে মামলার অগ্রগতি লিখিতভাবে আদালতকে অবহিত করার নির্দেশ প্রদান করা হয়।