পেঁয়াজ

পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রোধে আইনি নোটিশ

বাংলাদেশ পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রোধ এবং উক্ত সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে লিগ্যাল (আইনি) নোটিশ পাঠানো হয়েছে। জনস্বার্থে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো: মাহমুদুল হাসান উক্ত আইনি নোটিশ প্রেরণ করেন।

আজ শনিবার (২ নভেম্বর) নোটিশ প্রেরণের বিষয়টি ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে নিশ্চিত করে অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হাসান জানান, সাতদিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে হাইকোর্টে রিট করা হবে।

আইনি নোটিশে বলা হয়, গত ৩০ অক্টোবর নোটিশ প্রেরণকারী (আইনজীবী মো: মাহমুদুল হাসান) বিজয় নগরে অবস্থিত একটি সুপার শপ থেকে ১৪৪ টাকা কেজি দরে ক্রয় রশিদসহ পেঁয়াজ কিনেন। পেঁয়াজের এই অস্বাভাবিক দামে তিনি সংক্ষুব্ধ হন এবং বাংলাদেশের জনগণের জন্য পেঁয়াজের এই অস্বাভাবিক দাম অত্যন্ত পীড়াদায়ক বলে মনে করেন। তাই তিনি ব্যক্তিগতভাবে সংক্ষুব্ধ হয়ে এবং পাশাপাশি জনস্বার্থের কথা চিন্তা করে আইনি নোটিশ প্রেরণ করেন।

নোটিশে আরও বলা হয়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার কর্তৃক আকস্মিকভাবে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার কারণে বাংলাদেশে পেঁয়াজের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। বাংলাদেশের পেঁয়াজ আমদানিকারক মূলত ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে থাকেন। ফলশ্রুতিতে ভারত সরকার কর্তৃক পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের দরুন বাংলাদেশে পেঁয়াজের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায় যা স্থানীয় জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। অর্থনীতির ভাষায়, বাজারে যদি চাহিদার তুলনায় পণ্য সরবরাহ কম থাকে তাহলে উক্ত পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষে দাম নিয়ন্ত্রণ রাখা কঠিন। ভারত সরকার কর্তৃক আকস্মিকভাবে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ হওয়ার দরুন বাংলাদেশে পিয়াজ সরবরাহের ঘাটতি দেখা দেয় যার ফলশ্রুতিতে একটি শুন্যতা সৃষ্টি হয়, যার দরুন একদিকে যেমন পেঁয়াজের মূল্য ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়, অন্যদিকে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে উক্ত সমস্যা আরো ব্যাপক আকার ধারণ করে। যাই হোক, পেঁয়াজ নিয়ে এই ধরনের খেলা প্রতি বছরই চলতে থাকে।

আইনি নোটিশে আইনজীবী মাহমুদুল হাসান উল্লেখ করেন, পেঁয়াজ নিয়ে এই সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান হওয়া দরকার। এক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রাজস্ব বোর্ড কে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশের আমদানিকারক সকল প্রকার আমদানির ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত আমদানি নীতি অনুসরণ করে থাকে। উক্ত পেঁয়াজ নিয়ে সকল প্রকার বৈদেশিক রাজনৈতিক খেলা বন্ধ করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে আমদানি নীতিতে বিশেষ শর্ত আরোপ করতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে তাদের আমদানি নীতিতে এই ধরনের শর্ত আরোপ করতে হবে, যেসকল আমদানিকারকগণ পেঁয়াজ আমদানি করবেন তারা প্রতিবছর যে পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করবেন অথবা যে পরিমাণ আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তারা তাদের আমদানিকৃত পেঁয়াজ অর্ধেকের বেশি অংশ কোন একক দেশ থেকে আনতে পারবেন না। উদাহরণস্বরূপ কোন আমদানিকারক যদি প্রতি বছর ৫০০০ টন পেঁয়াজ আমদানি করেন অথবা আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, সেক্ষেত্রে তিনি কোন একক দেশ থেকে অর্ধেকের বেশি অর্থাৎ ২৫০০ টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানি করতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে অন্য এক বা একাধিক দেশ থেকে তাকে বাকি অর্ধেক পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে।

তবে উক্ত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমদানিকারক পরিবহন খরচ সংক্রান্ত সমস্যার সম্মুখীন হবেন। উদাহরণস্বরূপ- নিকটবর্তী দেশ যেমন ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে পরিবহন খরচ কম পড়বে এবং দূরবর্তী দেশ যেমন মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে পরিবহন খরচ বেশি পড়বে। উক্ত সমস্যা সমাধানের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে বিশেষ শুল্ক নীতি প্রণয়ন করতে হবে যেমন দূরবর্তী দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে কম শুল্ক আরোপ করতে হবে এবং নিকটবর্তী দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে অধিক পরিমাণে শুল্ক আরোপ করতে হবে যাতে করে ব্যবসায়ীরা নিকটবর্তী বা দূরবর্তী যেকোন দেশ থেকেই পেঁয়াজ আমদানি করুক না কেন সব মিলিয়ে তাদের আমদানি খরচ একই হয়। পাশাপাশি বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ সব সময় বিদ্যমান থাকবে এবং কোন দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশ পিয়াজের মূল্য বৃদ্ধি পাবে না এবং পেঁয়াজ নিয়ে প্রতিবছর এই খেলা বন্ধ হবে।

পরিশেষে বাংলাদেশে পিয়াজের এই অস্বাভাবিক মূল্য রোধ ও এ ব্যাপারে স্থায়ী সমাধানের জন্য সাতদিনের মধ্যে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে অন্যথায় উচ্চ আদালতে রিট আবেদন দায়ের করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।