পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার কলকাতার ঐতিহ্যবাহী আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগার আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে শতাব্দীপ্রাচীন কারাগারটি এখন শুধুই ইতিহাসের সাক্ষী। কেননা সেখানে থাকা বন্দীদের নেওয়া হয়েছে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বারইপুরে নবনির্মিত কেন্দ্রীয় কারাগারে।
আলিপুর কারাগারের ১১৮ বন্দীকে গত মঙ্গলবার বারইপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়। এদের মধ্যে ৭৪ জন সাজাপ্রাপ্ত। এ ছাড়া বাকি ৩৪ বন্দীকে স্থানান্তর করা হয় কলকাতার প্রেসিডেন্সি কারাগারে।
উল্লেখ্য, ১৮৬৪ সালে কলকাতায় প্রথম কারাগার নির্মিত হয়। যার নাম প্রেসিডেন্সি কারাগার। এরপর ১৯১০ সালে নির্মাণ করা হয় আলিপুর কারাগার। ভারতের স্বাধীনতাসংগ্রামীদের বন্দী রাখার জন্য মূলত ব্রিটিশরা এই কারাগার নির্মাণ করেন। ভারতের স্বাধীনতাসংগ্রামীদের অনেকেই আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ছিলেন।
আলিপুর কারাগারে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, চারু মজুমদার, চিত্তরঞ্জন দাস, অরবিন্দ ঘোষ, বারিন ঘোষ, শরৎচন্দ্র বসু, বিধানচন্দ্র রায়, কে কামরাজ, প্রফুল্ল সেন, জ্যোতি বসু ছাড়াও বহু স্বাধীনতাসংগ্রামী ও রাজনৈতিক নেতা বন্দী ছিলেন।
১৯৩৪ সালে বন্দী হয়ে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু কারাগারটির যে বাড়িতে বন্দী ছিলেন, সেই বাড়ি পরে ‘নেহরু ভবন’ নামকরণ করা হয়। আলিপুর কারাগারেই টানা ৯ মাস বন্দী ছিলেন নেতাজি সুভাস চন্দ্র বসু। তাঁর স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাতে এই কারাগারে ‘নেতাজি ভবন’ তৈরি করা হয়।
দক্ষিণ কলকাতায় ৪০ একর জমি নিয়ে আলিপুর কারাগার। সেখানে রয়েছে ২৫টি ওয়ার্ড, আধুনিক কারা হাসপাতাল, ফাঁসির মঞ্চ, আধুনিক প্রযুক্তির ছাপাখানা ও ১০টি আলাদা সেল। ফাঁসির আসামিদের এসব সেলে রাখা হতো।
২০০৪ সালের ১৪ আগস্ট আলিপুর কারাগারে সর্বশেষ কলকাতার এক খুন ও ধর্ষণের মামলায় ফাঁসির আদেশ পাওয়া আসামি ধনঞ্জয়ের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই কারাগারের স্মৃতিবাহী কিছু ভবন ও ফাঁসির মঞ্চকে সংরক্ষিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর বাকি জায়গায় গড়ে তুলবে গ্রিন সিটি আবাসন।