বহুল আলোচিত সেনা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক লিয়াকতের ডেথ রেফারেন্স (মামলার যাবতীয় নথি) হাইকোর্টে এসে পৌঁছেছে।
আজ মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও হাইকোর্ট বিভাগের বিশেষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) মামলার ২৮৮ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। সেদিনই কক্সবাজার থেকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি (ডেথ রেফারেন্স) ও নথিপত্র হাইকোর্টে পাঠানো হয়।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
আদালতের নিয়ম অনুযায়ী মামলার রায় প্রকাশের এক সপ্তাহের মধ্যে সব নথি, কেস ডায়েরি, সাক্ষ্যপ্রমাণের কাগজপত্র লাল কাপড়ে মুড়িয়ে হাইকোর্টে পাঠাতে হয়। এক্ষেত্রেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিচারিক আদালতে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যা ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) মামলা হিসেবে পরিচিত। নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্স অনুমোদনের জন্য বিচারিক আদালতের রায় ও নথিপত্র হাইকোর্টে পাঠানো হয়। আর সাজার রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডিত ব্যক্তিরা কারাগারে থেকে জেল আপিল করতে পারেন। এ ছাড়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে নিয়মিত আপিল ও বিবিধ আবেদনও করতে পারেন। ডেথ রেফারেন্স শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) তৈরি করতে হয়। প্রক্রিয়া শেষে ডেথ রেফারেন্স, আসামিদের আপিল, জেল আপিল ও আবেদনের ওপর একসঙ্গে শুনানি হয়ে থাকে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে গুলিতে নৃশংসভাবে খুন হন মেধাবী সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীও। হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে নানা অপচেষ্টা চালানো হলেও তদন্তে বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের নাম ও তাদের নৃশংসতার কাহিনী।
এ মামলায় গত ৩১ জানুয়ারি রায় ঘোষণা করেন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল। রায়ে মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলায় দুইজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। অন্যদিকে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বেকসুর খালাস পেয়েছেন মামলার সাত আসামি।
এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- কক্সবাজারের টেকনাফ মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলী।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামি হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত (৩০), কনস্টেবল সাগর দেব, ওসি প্রদীপের দেহরক্ষী রুবেল শর্মা (৩০), স্থানীয় বাসিন্দা বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের মো. নুরুল আমিন (২২), মো. নিজাম উদ্দিন (৪৫) ও মোহাম্মদ আইয়াজ (৪৫)। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডদের বিচারক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ছয়মাসের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়।
খালাসপ্রাপ্ত সাত আসামিরা হলেন- সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. লিটন মিয়া (৩০), কনস্টেবল ছাফানুর করিম (২৫), মো. কামাল হোসাইন আজাদ (২৭), মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান আলী (৪৭), কনস্টেবল মো. রাজীব হোসেন (২৩) ও আবদুল্লাহ আল মাহমুদ (২০)।
মামলাটি তদন্ত করেছেন কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর দুই কর্মকর্তা সহকারি পুলিশ সুপার মো. জামিলুল হক ও সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম। তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এ মামলায় মোট ৮৩ জনকে সাক্ষী করা হয়। তাদের মধ্যে ৬৫ জন ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত আদালতে সাক্ষ্য দেন।