ভারতে গরুকে জাতীয় পশু ঘোষণার জন্য কেন্দ্রীয় সরকাররে নির্দেশ দেওয়ার আবেদন খারিজ করে দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। সেই সাথে এই আবেদন প্রত্যাহার করে না হলে জরিমানা করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আদালত।
ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এস কে কউল এবং বিচারপতি অভয় এস ওকার বেঞ্চে সোমবার (১০ অক্টোবর) এই আবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এমন আর্জি জানানোয় শুনানিতে আবেদনকারী পক্ষকে ভর্ৎসনা করেছেন দেশটির শীর্ষ আদালত।
ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গরুকে জাতীয় পশু হিসাবে ঘোষণা করার জন্য কেন্দ্রকে নির্দেশ দেওয়ার আবেদন জানিয়ে ‘গোবংশ সেবা সদন’-সহ কয়েকটি সংগঠনের তরফে শীর্ষ আদালতে আবেদন জানানো হয়েছিল। পাশাপাশি, গোহত্যায় মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলেও আবেদনে জানানো হয়েছিল।
শুনানিতে আবেদনকারীর আইনজীবী বলেন, ‘গরুকে সুরক্ষা দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভারত সরকারের দিক থেকে। গোমূত্র ব্যবহার হয়, গোবর লাগে চাষের কাজে। গরুকে সংরক্ষণ করতে হবে।’
কিন্তু দুই বিচারপতির বেঞ্চ এ বিষয়ে কেন্দ্রের মত চেয়ে নোটিস পাঠানোর আবেদন খারিজ করে দেয়। সেই সঙ্গে আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবীকে ভর্ৎসনা করে আদালত বলে, ‘‘এটা কি আদালতের কাজ? আপনি কী ভাবে এমন আবেদন জানাতে পারেন? এতে কোন মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে?’’
একইসঙ্গে এমন আর্জির জন্য আবেদনকারী পক্ষের জরিমানা করা উচিত বলেও জানায় শীর্ষ আদালত। জানায়, আবেদন প্রত্যাহার করে না হলে জরিমানা করা হবে। আদালত বলেন, ‘আপনারা এমন আবেদন কেন করেন যেখানে আমরা জরিমানা ধার্য করতে বাধ্য হই? ’
এসময় আদালত জানিয়ে দেয় যে এটাই ভালো হবে যে যাতে আবেদনকারী নিজে মামলা তুলে নেন। শেষমেশ কোর্টের আবেদনকারীর আইনজীবীকে এই মামলা তুলে নিতে বলা হয়। আর তা তিনি তুলে নেন। কার্যত মামলাকে সরাসরি খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি আবেদনকারী আইনজীবী বলেন, ‘এটা সরকারই ঠিক করুক, আমরা কাউকে জোর করছি না।’
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে একটি মামলার শুনানিতে রাজস্থান হাইকোর্টের বিচারপতি মহেশচন্দ্র শর্মা একটি মামলার শুনানিতে গরুকে ‘মাতা’ বর্ণনা করে বলেছিলেন, ‘‘গোহত্যার চেয়ে বড় অপরাধ আর কিছুই হতে পারে না।’’ সংবিধানের ৪৮ ও ৫১এ(জি) ধারা অনুযায়ী গরুকে জাতীয় পশুর আইনি মর্যাদা দেওয়া যেতে পারে বলেও জানান তিনি।
এরপর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে গোহত্যা সংক্রান্ত একটি মামলার অভিযুক্তের জামিনের শুনানিতে ইলাহাবাদ হাই কোর্টের বিচারপতি শেখরকুমার যাদব বলেছিলেন, ‘‘গরু ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত। তাই গরুকেই দেশের জাতীয় পশু করা উচিত।’’
অভিযুক্তের জামিন খারিজ করে বিচারপতির মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘গরুর ভাল হলে তবেই দেশের ভাল হবে।’’ এমনকি, গরুর ‘মৌলিক অধিকার’ থাকা উচিত বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি।