ধর্ষণ মামলার বিচার কেবল দ্রুতই নয়, বিচারটা যাতে নিশ্চিত ও যথাযথ হয় সে লক্ষ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন কঠোর করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। ইতোমধ্যে ধর্ষণ মামলার তদন্ত ও বিচারের সময় কমিয়ে অর্ধেক করতে সংশোধিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে।
সচিবালয়ে ধর্ষণবিরোধী মঞ্চের নেত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের পর বুধবার (১২ মার্চ) সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান উপদেষ্টা।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনে সরকারের পদক্ষেপের বিষয়ে ধর্ষণবিরোধী মঞ্চের নেত্রীদের জানানো হয়েছে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা গত সোমবার এবং মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে পরামর্শ সভা করেছি। আমরা একটা খসড়া (সংশোধিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন) আইন করেছি, সেটি বুধবার আমরা সার্কুলেট করছি কিছু কিছু স্টেক হোল্ডারের কাছে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা আইনটি কঠোর করার চেষ্টা করবো। ধর্ষণের মামলার বিচার যাতে শুধু দ্রুত নয়, বিচারটা যাতে নিশ্চিত হয় এবং যথাযথ হয়-আমি এগুলো তাদের বলেছি।
খসড়া আইন অনুযায়ী, ধর্ষণের মামলা তদন্তের সময় ৩০ দিন থেকে কমিয়ে ১৫ দিন এবং মামলার বিচার কাজ শেষ হওয়ার সময় ১৮০ দিন থেকে কমিয়ে ৯০ দিন করা হচ্ছে।
বিচারক যদি মনে করেন তবে ডিএনএ রিপোর্ট ছাড়াই মেডিকেল সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে মামলার বিচারকাজ ও তদন্তকাজ চালাতে পারবেন- আইনে এমন বিধান রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা।
আসিফ নজরুল বলেন, বিজয় পরবর্তীসময়ে আমাদের দেশে মেয়েদের আক্রমণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন গোষ্ঠী থেকে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়েও তাদের ওপর আক্রমণ করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি।
আরও পড়ুন: মিথ্যা মামলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া ফৌজদারি অপরাধ, আছে শাস্তির বিধান
ধর্ষণবিরোধী মঞ্চের সঙ্গে বৈঠকের বিষয় তিনি বলেন, তারা আমাকে যেসব কথা বলেছেন, আসলে আমার নিজেরও মনের কথা। মনের খুব দুঃখ-কষ্ট, এছাড়া সরকারের কাছে যে প্রত্যাশা সেটাও তারা তুলে ধরেছেন। আমি মনে করি তাদের প্রতিটি দাবি যৌক্তিক।
তারা বলেছেন মাগুরায় শিশু ধর্ষণের ঘটনায় যাতে সর্বোচ্চ দ্রুততার সঙ্গে বিচার নিশ্চিত করা হয়। আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছি, মাগুরার ঘটনায় আসামি যারা আছে পুলিশ এরই মধ্যে তাদের ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহ করেছে। এর বিচারকার্য কোনো ধরনের কাল বিলম্ব না করে দ্রুত এবং ন্যায়বিচার যাতে করা হয়, সেজন্য আমাদের একটা নজরদারি থাকবে সেটা তাদের বলেছি।
আইন উপদেষ্টা বলেন, তারা বলেছেন ধর্ষণ সংক্রান্ত সব মামলার ক্ষেত্রে যাতে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আমরা বলেছি সাধ্যমতো চেষ্টা করব।
আসিফ নজরুল বলেন, তারা ধর্ষণের মামলার বিচার করার জন্য একটা স্পেশাল কোর্টের কথা বলেছেন। ধর্ষণের এখন বিচার হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে। তবে সেখানে ধর্ষণের মামলা ছাড়াও আরও অনেক অপরাধের বিচার হয়। তাই সেখানে ব্যাকলক হয়ে থাকে, মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে বিলম্ব হয়।
আমি তাদের কথা শুনেছি যৌক্তিকতা আছে এটা স্বীকার করেছি। আমার একার সিদ্ধান্তে তো হবে না। উপদেষ্টা পরিষদের আলোচনায় আমি বিষয়টি তুলবো, যথাসাধ্য চেষ্টা করবো ব্যাপারটি এক্সপ্লোর করে, করা যায় কি না। করা গেলে যত দ্রুত সম্ভব করা হবে।
মঞ্চের নেত্রীরা কর্মক্ষেত্র-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যৌন হয়রানি রোধে আলাদা সেল করার কথা বলেছেন জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে হাইকোর্টের একটি রায় রয়েছে। সেই রায়ের আলোকে শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর কাজের জায়গায় নয়, রাস্তাঘাটে যাতে আমাদের মেয়েরা উত্ত্যক্ত ও হয়রানির শিকার না হন- সেরকম একটি কম্প্রিহেনসিভ আইন করার কথা দিয়েছি, বলেছি সিরিয়াসলি চিন্তা করব। হাইকোর্টের রায়ের আলোকে সেই আইনটা একটু জোরালোভাবে করার চেষ্টা করব।