আইনজীবী না পেয়ে আদালতে এআই-উকিল হাজির করল বাদী!

আইনজীবী না পেয়ে আদালতে এআই-উকিল হাজির করল বাদী!

আদালতে উপস্থিত হয়ে বিচারকরা এক ব্যক্তির আপিলের শুনানি শুরু করলেন। বাদী পক্ষের উকিল হাজির হলেন ভিডিওতে। কিন্তু মজার বিষয় হলো, এই উকিলের কোনো পেশাগত ডিগ্রি নেই। এর চেয়েও আশ্চর্যের বিষয় হলো বাস্তবেই তার কোনো অস্তিত্ব নেই, তিনি কোনো মানুষই নয়!

তিনি মূলত কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সহায়তায় তৈরি করা এক এভাটার (কোনো মানুষের প্রতিকৃতি)।

এমনই চমকপ্রদ একটি ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে। স্থানীয় সময় গেল ২৬ মার্চ জেরোমি ডিওয়াল্ড নামে এক ব্যক্তির চাকরি সংক্রান্ত একটি আপিল শুনানিকালে এ কাণ্ড ঘটিয়েছেন তিনি।

নিজের পক্ষে কোনো উকিল না থাকায় তিনি এআইয়ের সহায়তায় একটি এভাটার বানিয়ে তাকেই আদালতের সামনে উপস্থাপন করেছেন। তবে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তার চালাকি ধরে ফেলেন বিচারকরা।

আপিলের শুনানির সময় নিজের পক্ষে কথা বলার জন্য একটি ভিডিও উপস্থাপন করার অনুমতি চেয়েছিলেন ডিওয়াল্ড। শুনানির দিন বিচারক স্যালি মানজানেট ডানিয়েল বলেন, ‘আপিলকারী তার বক্তব্য উপস্থাপনের একটি ভিডিও দিয়েছেন, ভিডিও এখন চালু করা হবে।’

ভিডিওটি চালু হলে স্ক্রিনে (পর্দায়) বেশ গোছালো ও পরিপাটি পোশাক পরিহিত এক সুদর্শন যুবককে দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘আদালতের সদয় বিবেচনার জন্য জানাচ্ছি, আমি বিচারকদের সামনে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বাদীর পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরতে উপস্থিত হয়েছি।’

সঙ্গেই সঙ্গেই তাকে থামিয়ে দিয়ে বিচারক জানতে চান, ‘এই ব্যক্তি মামলার কোনো আইনজীবী কিনা?

বাদী ডিওয়াল্ড জানান, ‘ভিডিওর ব্যক্তি আসলে মানুষ নন, এআইয়ের সহায়তায় একে তিনি তৈরি করেছেন আাদলতে তার পক্ষে কথা বলার জন্য।’

এ কথা শুনে রেগে আগুন হয়ে বিচারক বললেন, ‘আমি প্রতারিত হতে পছন্দ করি না।’

ডিওয়াল্ডকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনি যখন আবেদন করেছেন, এই বিষয়ে তখনই আদালতকে অবগত করা প্রয়োজন ছিল।’

আরও পড়ুনভূমি সেবায় ভোগান্তি কমাতে ‘ল্যান্ড সার্ভিস গেইটওয়ে’ চালুর উদ্যোগ

এরপরে বিচারকদের কাছে ক্ষমা চান মামলার বাদী ডিওয়াল্ড। তিনি জানান, ‘কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে তিনি এই কাজ করেননি। তার আইনি বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য কোনো আইনজীবী পাননি। এ কারণে তার আইনি বক্তব্য তুলে ধরতে এই এভাটার বানিয়েছেন তিনি।’

ডিওয়াল্ড সাধারণত কথা বলার সময় তোতলান, তার উচ্চারণে অস্পষ্টতা রয়েছে। তিনি আশা করেছিলেন এ ধরনের কোনো সীমাবদ্ধতা ছাড়াই আদালতে কথা বলতে পারবে ওই এভাটার। তবে তার আশার গুড়ে বালি পড়তে লেগেছে মাত্র কয়েক সেকেন্ড। বিচারক ধরে ফেলেন ভিডিওর ব্যক্তি আসল নন।

বার্তা সংস্থা এসোসিয়েট প্রেসের (এপি) এক খবরে বলা হয়েছে, সান ফ্রান্সিসকোর এক টেক কোম্পানি থেকে একটি এআই টুল কিনে ওই এভাটার তৈরি করেছিলেন ডিওয়াল্ড। তিনি তার চেহারার অনুরূপ করেই ওই এভাটার বানাতে চেয়েছিলেন। তবে শুনানির আগে তা সম্ভব হয়নি।

যেহেতু তিনি কোনো উকিল পাননি, তাই তার নিজেকেই এই বক্তব্য উপস্থাপন করতে হত। এ কারণেই ঠিকঠাকভাবে কথা বলার জন্য তিনি এআইয়ের দিয়ে ওই ভিডিও তৈরি করে আদালতে পাঠান। তবে যে উদ্দেশ্যে তিনি এই কাজ করেছিলেন সেক্ষেত্রে সফল তো হননি, বরং আদালতে রীতিমতো বিচারকের ঝাড়ি খেয়েছেন ওই ব্যক্তি।

তবে বিচারিক কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে কিন্তু প্রথম নয়, খোদ আইনজীবীরাই এর ব্যবহার করে সমস্যায় পড়েছেন।

এর আগে ২০২৩ সালের জুনে একটি মামলায় এআইয়ের ব্যবহার করে ৫ হাজার ডলার জরিমানা গুনতে হয়েছিল নিউ ইয়র্কের দুই আইনজীবীকে। তারা এআইয়েরর সহায়তা নিয়ে কয়েকটি মামলার উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছিলেন, তবে বাস্তবে ওই ধরনের কোনো মামলার অস্তিত্বই ছিল না।

জরিমানা দেওয়া ওই দুই আইনজীবী জানান, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা যে কৃত্তিম মামলার বিবরণ তৈরি করবে এটি তারা বুঝতেই পারেননি। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেনও একই ধরনের সমস্যায় পড়েছিলেন। ভুল মামলার তথ্য দিয়েছিল এআই।

তবে ডিওয়াল্ড ভুলে এই এভাটার ব্যবহার করলেও অ্যারিজনার সুপ্রিম কোর্ট কিন্তু বিভিন্ন আদালতের বিধিনিষেধগুলো সাধারণ জনগণকে জানানোর জন্য অনেকটা একই রকম এভাটার ব্যবহার করে থাকে। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা যে কতদ্রুত এগিয়ে চলছে তারই জ্বলন্ত প্রমাণ এসব ঘটনা।

ডিওয়াল্ডের মামলাটি এখনও চলমান রয়েছে।

সূত্র : ইউএনবি