মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন দুই দিনের জন্য অর্ধদিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে। অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের সহায়ক কর্মচারীরা আগামী ২২ ও ২৩ জুন যথাক্রমে রোববার ও সোমবার ২দিন সারাদেশে অর্ধদিবস করে কর্মবিরতি পালন করবে।
শুক্রবার (১৬ মে) পুরান ঢাকার একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি মো. রেজোয়ান খন্দকার এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এসময় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মো. সালাউদ্দিনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিচার বিভাগের জন্য সুপ্রীম কোর্টের অধীন পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের সহায়ক কর্মচারীগণকে বিচার বিভাগের সহায়ক কর্মচারী হিসেবে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের আলোকে বেতন ভাতা প্রদান’সহ বিদ্যমান জুডিসিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের ১ম-৬ষ্ঠ গ্রেডের পরবর্তী ৭ম-১২তম গ্রেডভুক্ত করা এবং সকল ব্লকপদ বিলুপ্ত করে যুগোপযোগী পদ সৃজনপূর্বক যোগ্যতা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতির সুযোগ রেখে স্বতন্ত্র নিয়োগবিধি প্রণয়নের দাবী বাস্তবায়নে পর পর ২ দিন অর্ধদিবস কর্মবিরতির এ কর্মসূচী ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ তাঁদের ঘোষিত কর্মসূচী বাস্তবায়নে জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েসন, দেশের সকল আইনজীবী সমিতির সকল আইনজীবীবৃন্দ সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
দাবি ও পূর্ববর্তী কর্মসূচি
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রেজোয়ান খন্দকার বলেন, “ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ৫ মে সারাদেশের অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের সহায়ক কর্মচারীরা সকাল ৯টা ৩০ মিনিট থেকে ১১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেন। তবুও এখনো আমাদের দাবি পূরণে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।”
তিনি জানান, দাবি পূরণ না হওয়ায় আগামী ২২ ও ২৩ জুন সারাদেশের অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের সহায়ক কর্মচারীরা অর্ধদিবস (সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা) সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করবেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “এই কর্মসূচির পরও যদি দাবি বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।”
দীর্ঘদিনের বৈষম্যের অভিযোগ
সংগঠনের নেতারা অভিযোগ করেন, ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর বিচারকদের জন্য আলাদা পে-স্কেল এবং নিয়োগবিধি থাকলেও সহায়ক কর্মচারীদের সেই কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ফলে তারা এখনো জনপ্রশাসন কাঠামো অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন।
রেজোয়ান খন্দকার বলেন, “একই দপ্তরে কাজ করা সত্ত্বেও বিচারকদের বিচারিক ভাতা, চৌকি ভাতা, অবকাশকালীন দায়িত্ব ভাতা রয়েছে, অথচ সহায়ক কর্মচারীরা এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বিচার বিভাগের কর্মচারীরা এখনও প্রশাসনিক কাঠামোতে পড়ে রয়েছেন, যা অত্যন্ত বৈষম্যমূলক।”
তিনি আরও বলেন, “বিচারিক কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়েও আমাদের পেশাদার মর্যাদা, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশ এখনো অনিশ্চিত। এটি শুধুমাত্র অবিচার নয়, এটি বিচার বিভাগের সার্বিক কার্যকারিতার উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।”
পরবর্তী পদক্ষেপ
সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দাবি পূরণে দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হলে ভবিষ্যতে টানা কর্মবিরতি কিংবা পূর্ণদিবস কর্মবিরতিসহ আরও কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া হবে।