রিভিউ শুনানি ২৩ জানুয়ারি, জামায়াত নেতা আজহারের পক্ষে লড়বেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম

আজহারের ফাঁসির রায় ছিল বিচারের নামে অবিচার : আপিল বিভাগ

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করে তাকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ। রায়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আদালত বলেছেন, আজহারের ফাঁসির রায় ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে বিচারের নামে অবিচার।

আজ মঙ্গলবার (২৭ মে) সকাল ৯টা ৫২ মিনিটে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অন্য ছয়জন হলেন– বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি ইমদাদুল হক, বিচারপতি মো. আসাদুজ্জামান, বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।

এ রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি আপিল বিভাগের রায়ে খালাস পেলেন। আজহারুল ইসলামের মুক্তিতে আর কোনো আইনগত বাধা নেই বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা।

আদালতের গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ

আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, বাংলাদেশেসহ এই ভারতীয় উপমহাদেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা বদলে দেওয়া হয়েছিল, এটা ছিল সবচেয়ে বড় ভুল।

দ্বিতীয়ত, আদালতের সামনে উপস্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণ কোনো অ্যাসেসম্যান্ট ছাড়াই এটিএম আজহারুল ইসলামকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে এটি ছিল বিচারের নামে অবিচার।

আদালত বলেন, যে সমস্ত তথ্য-প্রমাণ আদালতের সামনে হাজির করা হয়েছিল, অতীতের আপিল বিভাগ এটা সঠিকভাবে বিবেচনা করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলশ্রুতিতে আজ এটিএম আজহারুল ইসলামকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।

আইনজীবীর প্রতিক্রিয়া

আজহারের পক্ষে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, “শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর ইতিহাসে এটি নজিরবিহীন ঘটনা হয়ে থাকবে। এর মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সত্য বিজয়ী হয়েছে, মিথ্যা পরাভূত হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর মানবতাবিরোধী অপরাধের অতীতের অনেক রায়ের বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। সরকারের উচিত একটি রিভিউ বোর্ড গঠন করে এসব রায় পুনর্বিবেচনা করা, যাতে যারা মৃত্যুর পরেও অবিচারের শিকার হয়েছেন, তাদের পরিবার ও জাতি ন্যায়বিচার পায়।”

রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন যারা

আজহারের পক্ষে আদালতে ছিলেন শিশির মনির, ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, ব্যারিস্টার ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিক ও ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক এবং প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন গাজী এম এইচ তামিম।

জামায়াতের পক্ষ থেকে আদালতে উপস্থিত ছিলেন দলের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানসহ আরও অনেকে।

পূর্ববর্তী প্রেক্ষাপট

২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দেন। অভিযোগ ছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন রংপুর অঞ্চলে ১২৫৬ জনকে গণহত্যা ও হত্যা, ১৭ জনকে অপহরণ, একজনকে ধর্ষণ, ১৩ জনকে নির্যাতনসহ ছয় ধরনের নয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিলেন তিনি।

২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি ১১৩টি যুক্তিতে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন আজহারের আইনজীবীরা। মূল আপিল ৯০ পৃষ্ঠার হলেও সংযুক্ত নথিপত্র মিলিয়ে ২৩৪০ পৃষ্ঠার আপিল দাখিল করা হয়।

২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর আপিল বিভাগ সেই মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলেও পরবর্তীতে আজহারের রিভিউ আবেদনের প্রেক্ষিতে আবার শুনানি হয়। চলতি বছরের ৮ মে শুনানি শেষ হলে ২৭ মে রায় ঘোষণার জন্য দিন নির্ধারণ করেন আদালত।