হোসাইন মুহাম্মদ ফরাজী : আইন পেশার সৌন্দর্য হলো এখানে সত্য, ন্যায় ও যুক্তির কাছে সবাই সমান। একজন আইনজীবীর মৌলিক দায়িত্ব হলো আদালতে due process, fair trial, এবং defense rights এর নিরবচ্ছিন্ন সুরক্ষা নিশ্চিত করা। ক্লায়েন্ট দোষী না নির্দোষ—এই প্রশ্নের ঊর্ধ্বে দাঁড়িয়ে তিনি রাষ্ট্র, আদালত ও সমাজের কাছে ন্যায়বিচারের এক অনিবার্য সহযাত্রী।
কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু বাস্তবতায় আমরা এমন এক চরিত্রকে দেখছি, যিনি কাগজে defense counsel, অথচ আচরণে একজন moral spectator, মামলার নৈতিকতা রক্ষায় যেন স্বঘোষিত পর্যবেক্ষক। মনে হয় তিনি প্রতিরক্ষার দায়িত্বে নয়, বরং কোনো এক নৈতিক সহযোগিতার আসনে বসে আছেন।
আদালত যখন প্রমাণের ভিত্তিতে দোষ সাব্যস্ত করে রায় ঘোষণা করেন, তখন এই আইনজীবী এক প্রকার স্বস্তির হাসি নিয়ে বলেন, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এমনভাবে বলেন, যেন তিনি নিজের ক্লায়েন্টের exoneration নয়, বরং conviction-এ কোনো অদ্ভুত আত্মতৃপ্তি খুঁজে পেয়েছেন। আর পরক্ষণেই গভীর গলায় ঘোষণা করেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে কষ্ট পেয়েছি।
আরও পড়ুন : গণতন্ত্রের কথা বলা লোকেরাই এখন স্যাটায়ার, মিম ও কার্টুনের বিরুদ্ধে মামলা করছেন: সারা হোসেন
এই দ্বৈত অভিব্যক্তি— একদিকে ন্যায়বিচারের অভিনন্দন, অন্যদিকে ব্যক্তিগত বেদনার নাটকীয় প্রকাশ, বিচারব্যবস্থার নৈতিক মঞ্চে এক প্রকার duality of performance সৃষ্টি করে।
কিন্তু আইন জানে, আদালত জানে, রাষ্ট্র জানে Defense counsel কোনোভাবেই prosecution-এর ছদ্ম-ভূমিকা পালনকারী নন। তিনি adversarial system-এর অপরিহার্য অঙ্গ, যেখানে রাষ্ট্রের সম্মান যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনি অভিযুক্তের constitutional rights— representation, legal assistance, and fair advocacy এই তিন ভিত্তিস্তম্ভের ওপরই ন্যায়বিচারের স্থাপত্য দাঁড়িয়ে আছে।
অতএব, যখন কোনো আইনজীবী নিজের পেশাগত দায়িত্বকে mere formality-তে পরিণত করেন বা এমন ভাষা ও ভঙ্গিতে কথা বলেন যা ক্লায়েন্টের মৌলিক অধিকারকে দুর্বল করে, তখন তিনি শুধু নিজের পেশাগত অবস্থানই নয়, Rule of Law-এর নৈতিক কাঠামোকেও ক্ষতবিক্ষত করেন।
একজন আইনজীবীর পেশাগত সততা হলো, তিনি রায়ের ফলাফলকে সম্মান জানাবেন, কিন্তু সেই রায়ের প্রক্রিয়া, প্রতিটি ধাপ, প্রতিটি যুক্তিকে বিশ্লেষণ, প্রশ্ন ও পরীক্ষা বা চ্যালেঞ্জ করা —এটাই তার অধিকার এবং কর্তব্য।
তিনি যখন আদালতের সামনে দাঁড়িয়ে victim-like posture ধারণ করেন, তখন তা কেবল পেশাগত সীমালঙ্ঘনই নয় বরং আইন পেশার মর্যাদা, স্বাধীনতা ও ন্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধাকেও বিপন্ন করে।
ন্যায়বিচার তখনই পরিপূর্ণ হয় যখন প্রতিরক্ষা সত্যিকারের প্রতিরক্ষা হয়, যখন একজন আইনজীবী তাঁর শপথ, নৈতিকতা ও পেশাগত দায়িত্বের প্রতি অটল থাকেন। বিচার হয় আদালতের চার দেয়ালের ভেতর; কিন্তু পেশার ভাবমর্যাদা রক্ষার বিচার তা হয় প্রতিটি আইনজীবীর অন্তরের আদালতে।
লেখক : আইনজীবী।

