শাহ্ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান

বাংলা একাডেমির আইনের বই : একটি সাধারণ মূল্যায়ন

শাহ্ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান: 

ভাষা আন্দোলনের অমর শহিদের চেতনার স্মারক বাংলা একাডেমি। বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতির গবেষণায় নিয়োজিত এক অনন্য জাতীয় প্রতিষ্ঠান এবং ‘বাঙালি জাতিসত্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের প্রতীক’। বাংলা একাডেমির জন্ম ও বিকাশ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত যা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ঘটেনি। ১৯৫৫ সালের ৩রা ডিসেম্বর বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৫ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি হীরকজয়ন্তী উদ্যাপন করেছে। বহুভাষাবিদ জ্ঞানতাপস মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন বাংলা একাডেমির স্বপ্নদ্রষ্টা।

১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলায় সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষ্যে হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে গঠিত হয় রাজনৈতিক মোর্চা যুক্তফ্রন্ট। এই যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা দাবি সম্বলিত নির্বাচনি ইশতেহারের ১৬ দফায় অঙ্গীকার করা হয় বর্ধমান হাউসে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণাগার করা হবে। এরই অনুবৃত্তিক্রমে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হলে যুক্তফ্রন্ট সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বর্ধমান হাউসে বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৫৫ সালের ২৬ নভেম্বর পূর্ববাংলা সরকার বাংলা একাডেমির আয়োজক সমিতি (প্রিপারেটরি কমিটি) গঠন করে আদেশ জারি করেন। মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ একাডেমির স্পেশাল অফিসার (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) নিযুক্ত হন। ১৯৫৬ সালে একাডেমির প্রথম পরিচালক হিসেবে ড. মুহম্মদ এনামুল হক দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৫৭ সালের ৩রা এপ্রিল পূর্বপাকিস্তান আইন পরিষদে ‘দি বেঙ্গলি একাডেমি অ্যাক্ট, ১৯৫৭ পাস করে এর আইনগত ভিত্তি দেয়া হয়। এই আইনে বাংলা একাডেমি কে একটি স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা প্রদান করা হয় এবং বাংলা একাডেমি কাউন্সিল গঠনের বিধান থাকায় একাডেমির আয়োজক সমিতি ‘কাউন্সিল’-এর নাম ও মর্যাদা লাভ করে। অতঃপর ১৯৬০ সালের ২৬শে জুলাই পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ‘দি বেঙ্গলি একাডেমি (এমেন্টমেন্ট) অর্ডিন্যান্স জারি করেন। এতে কাউন্সিল গঠনসহ একাডেমির কর্মকা- পরিচালনা বিষয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণ জোরদার করা হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২ সালের ১৭ই মে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ‘দি বাংলা একাডেমি অর্ডার, ১৯৭২’ জারি করেন। এই আদেশ দ্বারা কেন্দ্রীয় বাঙলা উন্নয়ন বোর্ড বাংলা একাডেমির সাথে সমন্বিত হয়, কাউন্সিলের নাম পরিবর্তন করে কার্যনির্বাহী পরিষদ’ করা হয় এবং মহাপরিচালকের পদ সৃষ্টি করা হয় বাংলা একাডেমির প্রধান নির্বাহী হিসেবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মযহারুল ইসলাম বাংলা একাডেমির প্রথম মহাপরিচালক নিযুক্ত হন।

১৯৭৫-এর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ১৯৭৮ সালে ৬ই জুন ‘দি বাংলা একাডেমি অডিন্যান্স, ১৯৭৮’ জারি করা হয় এবং ২২শে সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে উক্ত অডিন্যান্স রহিতপূর্বক সংশোধনসহ উহা পুনঃ প্রণয়ন ও সংহত করে ‘বাংলা একাডেমি আইন, ২০১৩’ জারি করা হয়। বর্তমানে এই আইন দ্বারা বাংলা একাডেমি পরিচালিত হচ্ছে।

বাংলা একাডেমির বই
বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও গবেষণা নিয়োজিত বাংলাদেশের জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলা একাডেমির জাতির প্রতি অঙ্গীকার রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই একাডেমি অব্যাহতভাবে ভাষা, সাহিত্য এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে গ্রন্থ প্রকাশ করে আসছে। বাংলা একাডেমির প্রথম প্রকাশনা ‘বাঙলা একাডেমি পত্রিকা’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৭ সালের জানুয়ারি মাসে। ১৯৫৭ সালের জুন মাসে আহমদ শরীফ-এর সম্পাদনায় দৌলত-উজির বাহরাম খাঁ রচিত কাব্য লাইলী-মজনু প্রকাশের মাধ্যমে বাংলা একাডেমি গ্রন্থ প্রকাশনা শুরু। লাইলী মজনু গ্রন্থটি তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান গভর্নমেন্ট প্রেস থেকে মুদ্রিত হয়। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত একাডেমির মোট প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩১৭।

১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমির সাথে ‘বাঙলা উন্নয়ন বোর্ড সমন্বিত হয়। একীভূত হওয়ার পূর্বে প্রতিষ্ঠান দুটির প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রিকার সংখ্যা (কোনো কোনো গ্রন্থের পুনর্মুদ্রণ ও সংস্করণসহ) ৪৬৬।

১৯৯১ সাল থেকে একাডেমি প্রকাশিত পুস্তকে ওঝইঘ নম্বর প্রদান করা হচ্ছে। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত ‘বাংলা একাডেমি প্রকাশনা’ পুস্তিকায় বলা হয়েছে, পূর্বে প্রকাশিত বইসহ বাংলা একাডেমি থেকে জানুয়ারি ২০১৯ সাল পর্যন্ত মোট ৫৩৬৬টি গ্রন্থ ও পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে। এ হিসেবের মধ্যে কোনো কোনো গ্রন্থের একাধিক মুদ্রণ ও সংস্করণ ধরা হয়েছে। একাডেমির এই বিপুল সংখ্যক গ্রন্থের মধ্যে ২৪ খানা অভিধান গ্রন্থই রয়েছে। যা সর্বমহলে সমাদৃত।

বাংলা একাডেমির আইনের বই
আইন মানুষের জীবন ও সংস্কৃতির অংশ। সমাজে আইন মানার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে আইনগ্রন্থ সহায়ক ভূমিকা রাখে। ব্রিটিশ আমল থেকে এদেশে আইনচর্চা ধারা ইংরেজি ভাষায় প্রবাহমান। বহুবছর ধরে বিভিন্ন আইন ইংরেজি ভাষায় প্রণীত হওয়ায় এ সংক্রান্ত বাংলা ভাষায় বইয়ের অভাব এখনও বিদ্যমান। বাংলা একাডেমি সাধারণ পাঠক ও শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে বেশ কিছু আইন বিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে শাহিদা বেগমের আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলা : প্রসাঙ্গিক দলিলপত্র (২০০০) এবং তপন পালিতের মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচার আন্দোলন (২০১৬) ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ মামলার বই রয়েছে।

১৯৭৬ সালে বাংলা একাডেমি সংকলিত ‘আইন পরিভাষা কোষ’ (দ্বিতীয় সংস্করণ) প্রকাশিত হয়। এ গ্রন্থটির প্রথম সংস্করণ ‘কেন্দ্রীয় বাঙলা উন্নয়ন বোর্ড’ কর্তৃক সংকলিত হয় জুন ১৯৭০ সালে। বাংলা একাডেমির প্রতিষ্ঠাকাল থেকে অন্যতম লক্ষ্য হলো বিদেশি ভাষার সাহিত্য বাংলায় অনুবাদ করা ও বিভিন্ন বিষয়ের ওপর পরিভাষা তৈরি করা। এরপর মে ১৯৭৬ সালে নূরুল মোমেনের (১৯০৬-১৯৮৯) ‘মুসলিম আইন’; জুন ১৯৭৭ সালে আবুল ফজল হক-এর ‘আন্তর্জাতিক আইনের মূল দলিল’ গ্রন্থ দুটি প্রকাশিত হয়।

আইনের সাধক গাজী শামছুর রহমান (১৯২১-১৯৯৮) বাংলা ভাষায় আইনচর্চার অন্যতম পথিকৃৎ। তিনি বাংলায় আইন বিষয়ক গ্রন্থ রচনায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তাঁর রচিত গ্রন্থসংখ্যা শতাধিক। তাঁর অধিকাংশ আইনের বই বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৯৭ সালে বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত শাহিদ খাতুন সংকলিত ও সম্পাদিত ‘বাংলা একাডেমি গ্রন্থপঞ্জি’ শীর্ষক গ্রন্থে ১৯৫৭-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত সকল বইয়ের তালিকা রয়েছে। এই গ্রন্থের প্রদত্ত তালিকা অনুযায়ী বাংলা একাডেমি ১৯৫৭ থেকে জুন ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত মোট ২৫৪০টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে আইন বিষয়ক বই মাত্র ৩৫টি। এই গ্রন্থগুলোর মধ্যে প্রায় ৭টি বইয়ের একাধিক মুদ্রণ বা সংস্করণসহ ধরা হয়েছে। একাধিক মুদ্রণ বা সংস্করণসহ ৩৫টি গ্রন্থের মধ্যে প্রায় ১৭টি বই গাজী শামছুর রহমান একাই লিখেছেন।

বাংলা একাডেমি প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য আইনের বইগুলো হলো :
গাজী শামছুর রহমান-এর সম্পাদনায় ‘আইন পরিভাষা’ (১৯৮৫), গ্রন্থটি শিক্ষক, ছাত্র, আইনজীবী এবং বিচারকবৃন্দের জন্য একটি মূল্যবান বই। এছাড়া তাঁর রচিত অন্যান্য গ্রন্থ- আইনবিদ্যা (১৯৯৩), ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ভাষ্য’ (১৯৭৭), ‘চুক্তি আইনের ভাষ্য’ (১৯৭৮), ‘টর্ট আইনের ভাষ্য’ (১৯৯৩), ‘দ-বিধির ভাষ্য’ (১৯৭৭), ‘পণ্য-বিক্রয় আইন ও অংশীদারী আইনের ভাষ্য’ (১৯৭৮), ‘বাংলাদেশের আইন ব্যবস্থা’ (১৯৭৭), ‘বাংলাদেশের কপিরাইট আইন’ (১৯৮৩)’, ‘বাংলাদেশের সংবিধান’ (১৯৮৫), ‘মানবাধিকার ভাষ্য’ (১৯৯৪), ‘বাংলাদেশের আইনের ইতিহাস’ (১৯৯৭), ‘রায় লেখার কৌশল’ (১৯৯৫), ‘সংবাদ বিষয়ক আইন’ (১৯৮৪), ‘সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ভাষ্য’ (১৯৭৭), ‘সাক্ষ্য আইনের ভাষ্য’ (১৯৭৭), ‘১৯৯৪ সালের কোম্পানী আইনের ভাষ্য’ (১৯৯৬), ‘প্রশাসনিক আইনের ভাষ্য’ (১৯৯৭), ‘কপিরাইট আইনের ভাষ্য’ (১৯৯৭), গাজী শামসুর রহমানের আইনের উল্লিখিত গ্রন্থগুলো মূল আইনের অনুবাদ ও প্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যা। তিনি সাবলীল ভাষায় গ্রন্থকে সরল ও সরস করেছেন।
এছাড়া ড. মিজানুর রহমানের ‘তুলনামূলক আইন’ (১৯৯০), মোঃ আব্দুল হামিদের ‘আইন কোষ’ (১৯৯১), ‘কমিশন রিসিভার ও অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আইন’ (১৯৯৪), নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিকার আইন’ (২০১০), মোঃ মাহবুব-উল-হক জোয়ার্দ্দারের ‘আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে মানবাধিকার’ (১৯৮৮), আবুল ফজল হকের ‘আন্তর্জাতিক আইনের মূল দলিল’ (১৯৯৬); শেখ মতলুব আহমদের ‘বাংলাদেশ চুক্তি আইন’ (১৯৯১) এবং তাঁর অনূদিত দুটি গ্রন্থ জে. আর ডি.-র ভারতীয় নিবন্ধন আইন (১৯৮৭) ও ডি. এফ. মোল্লা রচিত ‘মুসলিম আইনের মূলনীতি (১৯৭৭); মোহাম্মদ শামছুর রহমানের ব্যবহারশাস্ত্রের বিজ্ঞান’ (১৯৭৬), আবু সাঈদ চৌধুরীর ‘মানবাধিকার’ (১৯৮৫), গওছুল আলমের ‘মুসলিম আইন’ (১৯৭৭), সাহিদা বেগমের ‘মুসলিম আইন ও পারিবারিক আদালত’ (১৯৯৪), ‘পরিবেশ আইন ও পরিবেশ আদালত’ (২০০৯), শ্রী বীরেন্দ্রচন্দ্র পা-ের ‘হিন্দু আইন’ (১৯৮৪), সুধীর কুমার সাহার ‘মাদকদ্রব্য : সমাজ ও আইন’ (১৯৯১), কাজী এবাদুল হকের ‘ভূমি আইন ও ভূমি ব্যবস্থার ক্রমবিকাশ’ (২০০০), নজির আইন সংহিতা (১ম খ-, ২০১১, ২য় খ-, ২০১৩), বিচার ব্যবস্থার বিবর্তন (১৯৯৭), শহীদ আহমেদ চৌধুরীর ‘মুসলিম আইনের ইতিহাস’ (২০০৪), কাজী ফিরোজ আলমের ‘আয়কর বিধি (১৯৯০), মোঃ জেহাদ উদ্দিনের ‘বাংলাদেশের আয়কর আইন’ (২০১০) মোহাম্মদ মোবারক শাহ্ অনূদিত সালামত আলী খান-এর ‘ইসলামে ফৌজদারি আইন’ (১৯৯৮), মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের ‘বাংলাদেশ সংবিধানের শব্দ ও খ- বাক্য’ (১৯৯৭), হাসান চৌধুরী ও মোঃ এরশাদ হোসেনের ‘বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ন্যায়বিচার প্রাপ্তির সমস্যা’ (২০১০), মিয়া মুহম্মদ সেলিমের ‘বাংলাদেশের শিল্পসম্পর্ক : শ্রম আইন ও শ্রম কল্যাণ’ (২০১৭) এবং মোঃ সাইফুল ইসলামের ‘সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন’ (১৯৯৮) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। উল্লিখিত আইনগ্রন্থগুলো আমাদের বিচারব্যবস্থায় প্রতিদিন ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত আইনের বইগুলো আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখছে। একাডেমি থেকে প্রকাশিত আইনের বইগুলো আইনের গবেষক, শিক্ষার্থী ও আইনজীবী এবং বিচারকদের জন্য অমূল্য দলিল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

লেখক : গবেষক, বাংলা একাডেমি; ইমেইল: shah.monir@yahoo.com