ব্যারিস্টার আশরাফুল ইসলাম আশরাফ

রণদা প্রসাদ সাহা, বিদ্যানন্দ’র কিশোর কুমার ও দেশপ্রেম : বিক্ষিপ্ত ভাবনা

ব্যারিস্টার এম. আশরাফুল ইসলাম:

বিদ্যানন্দ ও এর প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার’কে নিয়ে ভাবতে গিয়ে মনে পড়লো বাংলাদেশের মহান দানবীর ‘রণদা প্রসাদ সাহা’-র নাম। যিনি তাঁর জীবদ্দশায় প্রতিষ্ঠা করে গেছেন মানিকগঞ্জের দেবেন্দ্র কলেজ, টাংগাইলের মির্জাপুরে কুমিদিনী হাসপাতাল, টাংগাইল শহরে কুমিদিনী কলেজ, টাংগাইলের মির্জাপুরে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় মেয়েদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভারতেশ্বরী হোমস।

তৎকালীন সময়ে যখন টিউবয়েল ছিল না, তখন বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে তিনি ‘ইঁদারা’ (গভীর পানির কুয়া) স্থাপন করেছিলেন। তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়া স্বত্বেও ১৯৪৭ এ ভারত-পাকিস্তান বিভক্তের পর এদেশ ছেড়ে যান নি শুধুমাএ মাতৃভূমিকে ভালবাসতেন বলে। তখন দেশে মোড়ে মোড়ে ডায়গনস্টিক সেন্টার বা প্রাইভেট ক্লিনিক ছিল না, ফলে সারা বাংলাদেশ থেকে ধনী-গরিব সর্বস্তরের, সর্ব ধর্মের মানুষ কুমুদিনী হাসপাতালে বিনা খরচায় চিকিৎসা সেবা নিতে আসতেন। সেই সেবা ধর্ম এখনও অব্যাহত আছে। এই মহান ব্যক্তির সকল ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ছিল নারায়ণগন্জে কিন্ত উনার প্রায় সব সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ছিল নিজ জন্মভূমি মির্জাপুরে আর ১৯৭১ সালে মির্জাপুরের ধর্মান্ধ রাজাকাররা এই দেবতুল্য ব্যক্তি ও তাঁর একমাত্র ছেলে রবি সাহা কে এই মে মাসের ৭ তারিখে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করেছে।

‘বিদ্যানন্দ’ ও ‘কিশোর কুমার’ দুটোই শ্রুতিমধুর, বাঙালি নাম। এই করোনার ক্রান্তিকালে সবাই যখন আয়, কর্মহীন হয়ে জীবন রর্ক্ষাথে ঘরে আবদ্ধ হয়ে আছে; যেখানে কতিপয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, আমলা রিলিফের চাল, তেল চুরির অভিযোগে গ্রেফতার হচ্ছে, সেই সময় বিদ্যানন্দ ধর্ম ভেদাভেদকে তুচ্ছ করে ক্ষুধার্ত, অভাবী মানুষের দ্বারে দ্বারে বিনা স্বার্থে খাদ্য সাহায্য পৌঁছে দিচ্ছে।

আপন উদ্যোগে মানবতার সেবায় ব্রতী হয়েছে। এর পিছনেই লুকিয়ে আছে বাংলাদেশ সৃষ্টির পিছনের সেই ভ্রাতৃত্বপূর্ণ, অসাম্প্রদায়িক আদর্শ। এমন দেশের জন্যই তো আমরা রক্ত দিয়েছিলাম যেখানে ধর্মের ভেদাভেদ টপকে এক জন আরেক জনের বিপদে বুক পেতে দিবে, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবে। দেশপ্রেমে সবাই হয়ে উঠবে এক জাতি, মানবতাকে মূল্য দিবে সবার উপরে।

১৯৭১ সালের এই মে মাসের ৭ তারিখে দানবীর আর.পি. সাহা ও তার একমাএ ছেলেকে রবি সাহাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করেছিল, ধর্মের নামে বাংলাদেশকে বাটোয়ারা করতে চাওয়া সেই ধর্মান্ধরাই। তারাই আজকে ‘বিদ্যানন্দ’ ও এর প্রতিষ্ঠাতা ‘কিশোর কুমার’কে ধর্মের দোহাই দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এই কাল-সাপ গুলোকে রুখতে হবে, বিষদাঁত ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিতে হবে।

যারা বাংলা, বাঙালি, বাংলাদেশের চেতনায় বিশ্বাসী তাদের কে স্কুলে পড়া ভাব-সম্প্রসারণের ছোট একটি লাইন মনে করিয়ে দিয়ে লেখা শেষ করছি, ‘স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন।’

লেখক- আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।