জসিম আলী চৌধুরী

ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট ও ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমান

জসিম আলী চৌধুরী: ১৯৮০-র দশকের শেষের দিকে এবং ১৯৯০ এর দশকের শুরুর দিকে সাম্প্রদায়িক বিজেপি-র উত্থানের সাথে সাথে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট যেভাবে ধর্ম নিরপেক্ষতার সাংবিধানিক নীতিকে পদদলিত করে উগ্র হিন্দুত্ববাদকে‍ আঁকড়ে ধরে সেটি ১৯৯৬ সালে বিজেপির উগ্রবাদ বিরোধী সাতটি মামলার রায়ে (হিন্দুত্ববাদ রায় নামে পরিচিত) প্রতিফলিত হয়। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টকে হিন্দুত্ববাদের বৈধতা দানকারী (ভেলিডেটর) এবং অনুসারী (ফলোয়ার) বলতে এখন আর ভারতীয় গবেষকদেরও খুব একটা অসুবিধা হয় না। এটা বলতে গেলে একাডেমিক ডিসকোর্সে এখন একটা জানা কথা।

গত বছর বাবরি মসজিদ মামলার রায় হওয়ার পর ১০৪৫ পৃষ্ঠার রায়টি আগাগোড়া পড়ে মূল্যায়ন করার চেষ্টা করেছি। পরে আমার ছাত্র জুবায়ের আহমেদ (Jubaer Ahmed Sakib)-কে আমার সাথে যোগ দেয়ার প্রস্তাব দিই। দুজন মিলে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের ১৯৯৬ এর হিন্দুত্ববাদী রায়, মুসলিমসহ অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের বেলায় কোর্টের “এসেনশিয়াল রিলিজিয়াস প্র্যাকটিস ডকট্রিনের” প্রয়োগ, সংখ্যালঘু মুসলমানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পারিবারিক আইন সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলার ভয়ঙ্করভাবে দ্বিমুখী (ডাবল ষ্ট্যাণ্ডার্ড) রায়গুলো পর্যালোচনা করে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে, ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মুসলিম বিদ্বেষী।

আমরা জানতাম একটি একাডেমিক জার্নালে এ ধরণের একটি দাবী করা আসলেই রেডিক্যাল এবং আমাদের প্রায় ৯ মাসের ‍শ্রমের ফসল ১৬০০০ শব্দের নিবন্ধটি প্রকাশনার মুখ না দেখার সম্ভাবনাও আছে। ভারতীয় স্কলাররা কেউ রিভিউয়ার হলে উনারা হয়তো বলবেন ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট মোদী সরকারের কুক্ষিগত হয়েছে। এর বাইরে আদালতকে একটি নির্দিষ্ট ধর্ম বিদ্বেষী বলতে হয়তো উনারা রাজী হবেন না। তারপরও আমি আর জুবায়ের লিখেছি। কারণ আমরা ১৯৮০-র দশক থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বিজেপি-কংগ্রেস নির্বিশেষে সব সরকারের আমলেই ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের রায় পড়েছি ও মূল্যায়ন করেছি। সুতরাং আমরা কী বলছি তা নিয়ে আমরা আত্নবিশ্বাসী।

লেখাটি মাত্র কাল রাতে একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে জমা দিয়েছি। সকালে ঘুম ভেঙ্গে দেখি জুবায়ের মেসেজ দিয়ে রেখেছে – বাবরি মসজিদ ভাঙ্গা নিয়ে ফৌজদারি মামলাটাতে দোষী কাউকে পাওয়া যায়নি! অথচ জমি কেড়ে নেয়ার রায়টাতে বলা হয়েছিলো মসজিদ ভাঙাটা সুস্পষ্ট ফৌজদারি অপরাধ, এর বিচার হওয়া উচিত! জমিটা যে কিভাবে কেড়ে নেয়া হয়েছে তার হাল হাকিকত আমাদের নিবন্ধের প্রায় ১০ পৃষ্ঠা জুড়ে আলোচনা করেছি।

অপরাজনীতি ও অবিচারের এই মেল বন্ধন কি পুরো ভারতবর্ষকে একটি ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক অস্থিরতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে? আল্লাহ্‌, ঈশ্বর, ভগবান আমাদের এই হটকারিতা থেকে রক্ষা করুন।

জসিম আলী চৌধুরী: সহকারী অধ্যাপক; আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।