আনসার বিদ্রোহ: খালাসপ্রাপ্তদের চাকরিতে পুনর্বহাল নিয়ে রায় ২ আগস্ট
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত

দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিকে যে কোনো হাসপাতালে দ্রুত চিকিৎসা প্রদানে রুল

দেশের রাস্তাঘাটে ছিনতাই বা দুর্ঘটনায় আহত যে কোনো ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিতে সব হাসপাতাল ও ক্লিনিকের প্রতি নির্দেশনা জারি করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

সম্প্রতি রাজধানীতে পৃথক পৃথক ছিনতাইয়ের পরিপ্রেক্ষিতে দুই ব্যক্তির প্রাণহানির ঘটনায় জনস্বার্থে দায়ের করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আজ সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

একই সঙ্গে রুলে খুলনার ব্যবসায়ী মো. ইব্রাহিম ও গ্রিন লাইফ হাসপাতালের এক কর্মীর জীবন রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা কেন বে-আইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

এছাড়াও রুলে ভিকটিম মো. ইব্রাহিমের পরিবারকে সালাহউদ্দিন স্পেশালাইজড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা দেয়ার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য সচিব, পুলিশ প্রধান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের মহাপরিচালক, ডিএমপি কমিশনার, গেণ্ডারিয়া, যাত্রাবাড়ি, ধানমন্ডি এবং ওয়ারি থানার ওসি ও সালাহউদ্দিন স্পেশালাইজড হাসপাতালকে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদলতে আজ রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।

জানা গেছে, গত ২৬ জানুয়ারি ভোরে সায়েদাবাদ এলাকায় ছিনতাইকারীর ওপর ছুরিকাঘাতে আহত খুলনার ব্যবসায়ী মো. ইব্রাহিম নিজেই নিকটস্থ টিকাটুলির সালাহউদ্দিন হাসপাতালে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে অস্বীকার করে হাসপাতালটি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। পরে ঢাকা মেডিকেলে আসলেও চিকিৎসা পাওয়ার আগেই ইব্রাহিমের মৃত্যু হয়।

অপরদিকে রাজধানীর ধানমন্ডির ৭ নম্বর রোডে মিরপুর সড়কের ক্রসিং। লঞ্চে বরিশাল থেকে এসে ভোরে স্বামীর হাত ধরে রাস্তা পার হচ্ছিলেন গ্রীণ লাইফ হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা কর্মী হেলেনা বেগম। রাস্তার মাঝামাঝি অংশে আসতেই ছিনতাইকারীরা চলন্ত প্রাইভেটকার থেকে হেলেনা বেগমের ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে আচমকা হ্যাঁচকা টান দেয়।

ছিনতাইকারীর টানে হেলেনা বেগম ব্যাগসহ প্রাইভেট কারের সঙ্গে ঝুলে পড়েন। ওই অবস্থায় ছিনতাইকারীরা গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিলে হেলেনা বেগম গাড়ির নিচে পড়ে যান। তখন তার মাথার উপর দিয়েই গাড়ি চালিয়ে দেয় ছিনতাইকারীরা। সঙ্গে সঙ্গে তার মৃত্যু হয়।

এ দুটি ঘটনার প্রকাশিত খবর যুক্ত করে রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)’র পক্ষে আইনজীবী ছারওয়ার আহাদ চৌধুরী ও মাহবুবুল ইসলাম হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জনস্বার্থে রিট আবেদন করেন। পরে আদালত ছিনতাইয়ের এ দুই ঘটনায় রুল জারি করেন।

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বেঁচে থাকার অধিকার হল মানুষের মৌলিক অধিকার। সুতরাং দুর্ঘটনায় বা ছিনতাইয়ে কেউ আহত হয়ে নিকটস্থ হাসপাতালে গেলে সে হাসপাতাল সরকারি-বেসরকারি যাই হোক, সেবা দিতে বাধ্য।

কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় সড়কের দুর্ঘটনাস্থলের কাছের হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলো ওই সময় আহত বা রোগীদের চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। অথচ সরকার ওই সমস্ত ক্লিনিকগুলোকে লাইসেন্স দেওয়ার সময় এ ধরনের বৈষম্য অনুমোদন করেনি। এমনকি দ্রুত চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়। এ ধরণের ঘটনা বা পরিস্থিতি মানবাধিকারের লঙ্ঘন।’

সুপ্রিমকোর্ট প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম